২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নির্বাচন ও বিরোধীদের হাল-হকিকত

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, রবিবার
  • / 30

স্বাতী চতুর্বেদীঃ উপ-রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপির নির্বাচন জগদীপ ধনকরকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘কৃষক পুত্র’ বলে প্রশংসা করেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধনকরের আরও অনেক ‘গুণ’ রয়েছে। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতিটি পদক্ষেপ ও কাজের লাগাতার সমালোচনা করে গিয়েছেন, যাকে বলে পিছনে আঠার মতো লেগে ছিলেন। হাত ধুয়ে পড়েছিলেন তিনি।

 

আরও পড়ুন: ‘ভ্রষ্টাচারীদের বৈঠক চলছে’ নয়া দিল্লি থেকে বিরোধীদের তোপ মোদির  

২০১৯ সালে রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েছিলেন ধনকর এবং তারপর থেকে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন মমতা ব্যানার্জির প্রধান বিরোধী। রাজ্যসভা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন উপ-রাষ্ট্রপতি এবং সেখানে বিরোধীদের উপর নজর রাখেন ও চাপ সৃষ্টি করেন। ধনকর যদি নির্বাচিত হন, তাহলে সংসদের দুই প্রিসাইডিং আধিকারিকই রাজস্থানের হবেন। কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে ভোট পরের বছরই। ধনকর উচ্চ বর্ণের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তাঁর উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন গোটা উত্তর ভারতের উচ্চ বর্ণকে এক বার্তা দেবে।

আরও পড়ুন: ‘বাংলায় ৬৪ হাজার বুথে তো আর তৃণমূল সন্ত্রাস করে জেতেনি’, বিরোধীদের নিশানা সায়নীর

 

আরও পড়ুন: Breaking: বিজেপিকে হারানোর অঙ্গীকার নিয়ে ফের বৈঠকে বসছে বিরোধীদলগুলি, দিনক্ষণ জানালেন শরদ পাওয়ার

এই উচ্চ বর্ণই মোদি-নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে জোরালো ভাবে ভোট দিয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এখন ধারালো, কূট ও সংখ্যাগুরুবাদী রাজনীতির অভিজ্ঞান হয়ে উঠেছে। এই খেলায় প্রতিপন্ন হয়ে যাচ্ছে যে, বিরোধী দল ক্লান্ত, হতশ্বাস ও মোদি সরকার নিয়ে তাদের আর কোনও কৌশল-ভাবনা নেই। ঝাড়খণ্ডের সাবেক রাজ্যপাল দ্রৌপদী মূর্মু সম্ভাব্য সকল প্রকার রাজনৈতিক চাহিদা পূরণ করে বসে আছেন। মুর্মু যদি রাষ্ট্রপতি হন, তাহলে তিনিই হবেন প্রথম আদিবাসী মহিলা যিনি এই পদ অলংকৃত করবেন।

 

এনডিএ ঠিক জায়গায় ঘা দিয়েছে তাঁকে বেছে নিয়ে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের উপর জোর খাটিয়ে সমর্থন আদায় করে নিয়েছে তারা। বিজু জনতা দলও তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। এর কারণ মুর্মু ওড়িশার মানুষ। আহত ও পরাস্ত শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেও তাঁর দলের সাংসদদের মতামত উপেক্ষা করতে পারেননি, তিনি বেকায়দায় পড়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত মুর্মুকে সমর্থন জানিয়েছেন।

 

শিবসেনার সাংসদরা একনাথ শিন্ডের দলে ভেড়ার ভয় দেখিয়েছে। শিন্ডে ও বিজেপির জোট এখন মহারাষ্ট্রের ক্ষমতায়। ঠাকরে জোর দিয়ে বলতে চেয়েছেন যে, তাঁর সাংসদরা তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছেন না। তিনি স্বেচ্ছায় মুর্মুকে সমর্থন করছেন কারণ, তিনি মুর্মুর কাজে অভিভূত, মুগ্ধ।

 

বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি মুখ যশবন্ত সিনহাকে ইতিমধ্যেই পরাজিত মনে হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় নামার আগে তিনি ছিলেন মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসে। যদিও তাঁর দল তাঁকে নিয়ে প্রচারের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। বিরোধীরা যাতে যৌথ ভাবে প্রার্থী দেয়, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল তৃণমূল, কিন্তু আদিবাসী মহিলা মুর্মুকে নেমে বিজেপি মাঠে নেমে পড়ায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

 

কংগ্রেস দলও বিরোধী প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে কোনও উদ্যোগ দেখায়নি। রাহুল গান্ধি তাঁর পঞ্চম বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত, ফিরবেন ভোটের দিনই। কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সনিয়া গান্ধি এদিক-ওদিক ফোন করছেন এবং প্রার্থী সিনহার জন্য এখানে-ওখানে হাজিরা দিচ্ছেন। বিজেপির স্পষ্ট রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে আর সেটি হল, অকালি দলের মতো মিত্রশক্তিদের মন জয় করা। অকালি দল মুর্মু ও ধনকরকে সমর্থন করেছে।

 

গায়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বিজেডিকে নিজের দিকে টেনে আনতেও তৎপর বিজেপি। এমনকি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী যিনি সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে প্রায় কোনও বিষয়েই একমত হতে পারেন না, তিনিও পথে এসেছেন এবং বিজেপির তৈরি করা নকশা মেনে আচরণ করে যাচ্ছেন। লোকসভা নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি। তাই দুটি সর্বোচ্চ অফিসে নিজেদের অনুগত সৈনিককে বসাতে বিজেপি বদ্ধপরিকর। আরও কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেছিলেন রাষ্টপ্রতি পদে আসীন হওয়ার। কিন্তু শেষ অবধি তা হয়ে ওঠেনি।

 

বিজেপির মুখতার আব্বাস নকভি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক ত্যাগ করেছেন। রাজ্যসভায় চতুর্থ বারের মতো তাঁকে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপটেন অমরিন্দর সিং গত বছর কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনিও আশাবাদী ছিলেন।

 

প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিরোধীরা আরও দুরদর্শীতা পরিচয় দিতে পারত, এটা জেনেও যে, হারই ভবিতব্য। কিন্তু তাদের চিত্রনাট্যে বিস্তর ফাঁক। মহাত্মা গান্ধির পৌত্র গোপাল গান্ধি যখন রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন, তখনই বিরোধীদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল।

 

কিন্তু তারা তাদের চেনা ছকে এগিয়েছে। এই ছকে কোনও রাজনৈতিক স্মার্টনেস নেই। বামনেতা সীতারাম ইয়েচুরি প্রতিযোগিতায় নামাতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশিকে। গোপাল গান্ধির মতো তিনিও বিনম্র ভাবে সেই প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। এই হল আমাদের বিরোধীদের অবস্থা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী নির্বাচন ও বিরোধীদের হাল-হকিকত

আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২২, রবিবার

স্বাতী চতুর্বেদীঃ উপ-রাষ্ট্রপতি পদে বিজেপির নির্বাচন জগদীপ ধনকরকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘কৃষক পুত্র’ বলে প্রশংসা করেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ধনকরের আরও অনেক ‘গুণ’ রয়েছে। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতিটি পদক্ষেপ ও কাজের লাগাতার সমালোচনা করে গিয়েছেন, যাকে বলে পিছনে আঠার মতো লেগে ছিলেন। হাত ধুয়ে পড়েছিলেন তিনি।

 

আরও পড়ুন: ‘ভ্রষ্টাচারীদের বৈঠক চলছে’ নয়া দিল্লি থেকে বিরোধীদের তোপ মোদির  

২০১৯ সালে রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েছিলেন ধনকর এবং তারপর থেকে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন মমতা ব্যানার্জির প্রধান বিরোধী। রাজ্যসভা পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন উপ-রাষ্ট্রপতি এবং সেখানে বিরোধীদের উপর নজর রাখেন ও চাপ সৃষ্টি করেন। ধনকর যদি নির্বাচিত হন, তাহলে সংসদের দুই প্রিসাইডিং আধিকারিকই রাজস্থানের হবেন। কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে ভোট পরের বছরই। ধনকর উচ্চ বর্ণের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং তাঁর উপ-রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন গোটা উত্তর ভারতের উচ্চ বর্ণকে এক বার্তা দেবে।

আরও পড়ুন: ‘বাংলায় ৬৪ হাজার বুথে তো আর তৃণমূল সন্ত্রাস করে জেতেনি’, বিরোধীদের নিশানা সায়নীর

 

আরও পড়ুন: Breaking: বিজেপিকে হারানোর অঙ্গীকার নিয়ে ফের বৈঠকে বসছে বিরোধীদলগুলি, দিনক্ষণ জানালেন শরদ পাওয়ার

এই উচ্চ বর্ণই মোদি-নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে জোরালো ভাবে ভোট দিয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এখন ধারালো, কূট ও সংখ্যাগুরুবাদী রাজনীতির অভিজ্ঞান হয়ে উঠেছে। এই খেলায় প্রতিপন্ন হয়ে যাচ্ছে যে, বিরোধী দল ক্লান্ত, হতশ্বাস ও মোদি সরকার নিয়ে তাদের আর কোনও কৌশল-ভাবনা নেই। ঝাড়খণ্ডের সাবেক রাজ্যপাল দ্রৌপদী মূর্মু সম্ভাব্য সকল প্রকার রাজনৈতিক চাহিদা পূরণ করে বসে আছেন। মুর্মু যদি রাষ্ট্রপতি হন, তাহলে তিনিই হবেন প্রথম আদিবাসী মহিলা যিনি এই পদ অলংকৃত করবেন।

 

এনডিএ ঠিক জায়গায় ঘা দিয়েছে তাঁকে বেছে নিয়ে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের উপর জোর খাটিয়ে সমর্থন আদায় করে নিয়েছে তারা। বিজু জনতা দলও তাদের পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে। এর কারণ মুর্মু ওড়িশার মানুষ। আহত ও পরাস্ত শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরেও তাঁর দলের সাংসদদের মতামত উপেক্ষা করতে পারেননি, তিনি বেকায়দায় পড়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত মুর্মুকে সমর্থন জানিয়েছেন।

 

শিবসেনার সাংসদরা একনাথ শিন্ডের দলে ভেড়ার ভয় দেখিয়েছে। শিন্ডে ও বিজেপির জোট এখন মহারাষ্ট্রের ক্ষমতায়। ঠাকরে জোর দিয়ে বলতে চেয়েছেন যে, তাঁর সাংসদরা তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছেন না। তিনি স্বেচ্ছায় মুর্মুকে সমর্থন করছেন কারণ, তিনি মুর্মুর কাজে অভিভূত, মুগ্ধ।

 

বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি মুখ যশবন্ত সিনহাকে ইতিমধ্যেই পরাজিত মনে হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় নামার আগে তিনি ছিলেন মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসে। যদিও তাঁর দল তাঁকে নিয়ে প্রচারের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। বিরোধীরা যাতে যৌথ ভাবে প্রার্থী দেয়, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল তৃণমূল, কিন্তু আদিবাসী মহিলা মুর্মুকে নেমে বিজেপি মাঠে নেমে পড়ায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

 

কংগ্রেস দলও বিরোধী প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে কোনও উদ্যোগ দেখায়নি। রাহুল গান্ধি তাঁর পঞ্চম বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত, ফিরবেন ভোটের দিনই। কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভাপতি সনিয়া গান্ধি এদিক-ওদিক ফোন করছেন এবং প্রার্থী সিনহার জন্য এখানে-ওখানে হাজিরা দিচ্ছেন। বিজেপির স্পষ্ট রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে আর সেটি হল, অকালি দলের মতো মিত্রশক্তিদের মন জয় করা। অকালি দল মুর্মু ও ধনকরকে সমর্থন করেছে।

 

গায়ের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বিজেডিকে নিজের দিকে টেনে আনতেও তৎপর বিজেপি। এমনকি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী যিনি সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে প্রায় কোনও বিষয়েই একমত হতে পারেন না, তিনিও পথে এসেছেন এবং বিজেপির তৈরি করা নকশা মেনে আচরণ করে যাচ্ছেন। লোকসভা নির্বাচনের আর দুই বছর বাকি। তাই দুটি সর্বোচ্চ অফিসে নিজেদের অনুগত সৈনিককে বসাতে বিজেপি বদ্ধপরিকর। আরও কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেছিলেন রাষ্টপ্রতি পদে আসীন হওয়ার। কিন্তু শেষ অবধি তা হয়ে ওঠেনি।

 

বিজেপির মুখতার আব্বাস নকভি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক ত্যাগ করেছেন। রাজ্যসভায় চতুর্থ বারের মতো তাঁকে সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপটেন অমরিন্দর সিং গত বছর কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনিও আশাবাদী ছিলেন।

 

প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিরোধীরা আরও দুরদর্শীতা পরিচয় দিতে পারত, এটা জেনেও যে, হারই ভবিতব্য। কিন্তু তাদের চিত্রনাট্যে বিস্তর ফাঁক। মহাত্মা গান্ধির পৌত্র গোপাল গান্ধি যখন রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন, তখনই বিরোধীদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল।

 

কিন্তু তারা তাদের চেনা ছকে এগিয়েছে। এই ছকে কোনও রাজনৈতিক স্মার্টনেস নেই। বামনেতা সীতারাম ইয়েচুরি প্রতিযোগিতায় নামাতে চেয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশিকে। গোপাল গান্ধির মতো তিনিও বিনম্র ভাবে সেই প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়েছিলেন। এই হল আমাদের বিরোধীদের অবস্থা।