ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সভায় উঠে এল মুসলিমদেরও সমস্যার কথা

- আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 7

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আলোচনা সভায় রয়েছেন (বামদিক থেকে) আব্দুর রহমান কাসেমী, আহমদ হাসান ইমরান, ক্কারী শফিক কাসেমী, নুরুল হক, মুহম্মদ কামরুজ্জামান। (ছবি-সন্দীপ সাহা)
পুবের কলম প্রতিবেদক: বুধবার নাখোদা মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ শফিক কাসেমী এবং রাজ্য সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান-এর যৌথ আহ্বানে কলকাতায় রাজ্যের কয়েকটি জেলার দায়িত্বশীল ইমামদের নিয়ে বিশেষ আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এজেসি বোস রোডের হোটেল হেভেনে এই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল।
রাজ্যের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের সার্বিক অবস্থা, প্রয়োজনীয়তা, ওয়াকফ বোর্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এদিনের সভায় আলোচনা হয়।
এ দিনের সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন নাখোদা মসজিদের ইমাম ক্বারী শফিক কাসেমী, জিডি মিশনের সম্পাদক এবং প্রাক্তন আইএএস নুরুল হক, পুবের কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং সাবেক সাংসদ আহমদ হাসান ইমরান, রাজ্য সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদ মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের রাজ্য সম্পাদক আবদুর রহমান কাসেমী এবং যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, অল ইন্ডিয়া মিল্লি কাউন্সিলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সাউদ আলম প্রমুখ।
শফিক কাসেমী বলেন, আমাদেরকে নিজের পাশাপাশি অবশ্যই জাতির ভালোর জন্য কিছু করতে হবে। তিনি রাজ্যের নেতৃত্বস্থানীয়দের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সার্বিক প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কয়েক বছর আগে ইমামদের বাড়ি এবং জমি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমরা চিঠি দিয়ে বা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাব।
নুরুল হক বলেন, ইসলামের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই বরং বন্ধুত্ব রয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি দুনিয়াবী শিক্ষাও সমানভাবে গ্রহণ করতে হবে। আর তাহলেই দুনিয়াতে এবং পরকালে দুই জায়গাতেই সফল হওয়া যাবে। কোনও বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি না করে ঠান্ডা মাথায় সুনির্দিষ্ট পথে এবং সুকৌশলে নিজেদের অধিকারকে আদায় করে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রামাঞ্চলের লোকেরা ইমামদের কথাই বেশি মানেন। তাই ইমামরা সমাজ পরিবর্তনে এবং সার্বিক শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারেন। সব কিছু সরকার করে দেবে না। সমাজের দায়িত্বশীলদের নিজেদের উন্নতিতে এগিয়ে আসতে হবে।
আহমদ হাসান ইমরান রাজ্যের ইমামদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ওয়াকফ বোর্ড সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তিগুলির উন্নয়ন ঘটিয়ে এবং নতুন পরিকাঠামো তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর অর্থ পাওয়া যেতে পারে। সেই অর্থ জাতির উন্নতির কাজে, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো যেতে পারে।
তিনি ইমামদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই মাসেই নবী (সা:) পৃথিবীতে এসেছিলেন। নবীর বাণীকে মুসলিমদের পাশাপাশি অমুসলিমদের কাছেও পৌঁছে দিতে হবে। রাজ্যের ইমামরা এই কাজে সব থেকে বড় ভূমিকা নিতে পারেন। আমরা কারও তোষণ করে যাব না। সব সময় সঠিক এবং হক কথা বলতে হবে। এটা নবীর শিক্ষা। মানুষ শুধু পেটের জন্য বাঁচে না, মর্যাদার জন্যও বাঁচে। সেই মর্যাদা নিজেদের কাজের মাধ্যমে আদায় করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইমামদের জন্য ২০১২ সালে প্রথম ভাতা চালু করেছিলেন। এটা মুখ্যমন্ত্রীর কৃতিত্ব। পরবর্তীতে দিল্লি ও তেলেঙ্গানায় ইমামদের ১০, ০০০ টাকা করে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রাজ্যের ইমামদের ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখতে হবে বলে জানান। কামরুজ্জামান বলেন, রাজ্যের ইমামদের ভাতা বৃদ্ধির করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মিল্লি কাউন্সিলের সাউদ আলম বলেন, ইমামরা ইমামতির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন। আমাদেরকে তাঁরা বা তাঁদের পরিবার যাতে কোনও সমস্যার মধ্য দিয়ে না যায় সে বিষয়টা দেখতে হবে। ইমাম অর্গানাইজেশনের যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাজ্যে ৩০ শতাংশ মুসলিম হলেও গরিবদের হার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। মুসলিম সমাজের মধ্যে মদ, গাঁজা ও অশিক্ষার হারও যথেষ্ট রয়েছে। তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে এনে সঠিক পথে এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে দায়িত্বশীলদের আরও বেশি ভূমিকা নিতে হবে।
এছাড়া মাওলানা মুহাম্মদ শফিক কাসেমী এবং মুহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, তাঁরা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং সমাজসেবীদের নিয়ে একটি বড় অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা করেছেন। এতে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মুসলিমদের দাবি-দাওয়াগুলি তুলে ধরা হবে। মুখ্যমন্ত্রীকেও এই সভায় আমন্ত্রণ করার কথা বলেন তাঁরা। এ জন্য কয়েকজনকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এদিনের আলোচনা সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ইমামরা নিজেদের এবং সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা, সমস্যা এবং ভবিষ্যতে জাতির উন্নয়নে কি ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। রাজ্যের ইমাম সংগঠনের নেতৃবন্দ এবং ওয়াকফ বোর্ডকে সদর্থক উদ্যোগ নিয়ে বিষয়গুলি দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।