পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: মহারাষ্ট্রের মিরা রোডে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আয়োজিত সমাবেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ব্যবসা বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়েছে। ‘হিন্দু জন আক্রোশ মোর্চা’র ডাকে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এই সমাবেশ করে। মিরা ভাইন্দরের বিধায়ক গীতা জৈন এই সমাবেশ-রালির সূচনা করেন।গত কয়েক মাসে ওই রাজ্যে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলি এই ধরণের সমাবেশ করেই চলেছে।
সমাবেশে বিধায়ক নীতেশ রানে সহ ভারতীয় জনতা পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা এবং ভিএইচপি এবং বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।মিরা রোডের গোল্ডেন নেস্ট চক থেকে র্র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করেন। এরপরে অনেক নেতা রাজ্যে কথিত ‘লাভ জিহাদ’ এবং ‘ল্যান্ড জিহাদ’-এর বিরুদ্ধে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে কয়েকজন বক্তা অংশগ্রহণকারীদের অর্থনৈতিকভাবে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে বয়কট করার আহ্বান জানান। গত বছরের নভেম্বর থেকে মহারাষ্ট্র জুড়ে একই রকম বেশ কয়েকটি সমাবেশ হয়েছে। প্রায় সব সমাবেশেই বক্তারা “মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতার” পক্ষে কথা বলেছেন।
তেলেঙ্গানার বিধায়ক উগ্র হিন্দু নেতা রাজা সিং ‘হিন্দু জন আক্রোশ মোর্চা’র অনুষ্ঠানে মুসলমানদের হত্যার বিষয়ে প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছে। একইভাবে, হিন্দুত্ববাদী নেতা সাক্ষী গায়কওয়াড তার বক্তৃতায় বলেছেন, “মুসলিমরা বলিদানকারী ভেড়ার বাচ্চার মতো, বলি হওয়ার অপেক্ষায় আছে।”
গত ২৯ জানুয়ারি রবিবার, মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে হিন্দু জন আক্রোশ মোর্চার একটি সমাবেশ হয়। সেখানে হাজারও উগ্র জনতা উপস্থিত ছিল। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ বিশাল সমাবেশে গণহত্যামূলক উসকানি এবং ধর্মান্তর বিরোধী আইন ও কথিত ‘লাভ জিহাদ’ বিরোধী আইনের দাবি জানিয়েছে। ৪ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে চলা এই সমাবেশে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিদ্বেষমূলক স্লোগান দিতে থাকে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ, বজরং দল এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এর মতো এই হিন্দুত্ববাদী দলটিও মুসলিমদের প্রতি তীব্র ঘৃণাত্মক শ্লোগান দেয়। তারাও সকল হিন্দুকে মুসলিমদের বয়কটের আহ্বান জানায়। বিজেপির অনেক নেতা, বিধায়ক এবং মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের শিবসেনা গোষ্ঠীর হিন্দুরাও সেই সমাবেশে অংশ নিয়েছে।
ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি মুসলিমদের জন্য কতটা উদ্বেগের, উপরের এই দুটি ঘটনাই তা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট। মুসলিমদের তাই সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকাটাও এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন ইসলামি চিন্তাবিদগণ।
সমাবেশের পরে মহারাষ্ট্র সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে এই ধরণের “ঘৃণাত্মক বক্তৃতা” করা সমাবেশের তারা আর অনুমতি দেবে না। সুপ্রিম কোর্ট মহারাষ্ট্র পুলিশকে পরবর্তী সমাবেশের একটি ভিডিও রেকর্ড করার নির্দেশ দেওয়ার পরে মহারাষ্ট্র সরকারও প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু তেমন কোন ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।