০১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রদ্ধা নয় এই তালিকায় আছে আরও অনেকেই! স্ত্রী’র দেহ কুচিয়ে ৩০০ টুকরো করেছিলেন এক কর্নেল

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 12

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক  :  শুধু শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডই নয়, এই দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা নারকীয়তা চরম সীমায় পৌঁছেছে। ২০১০ সালে অনুপমা গুলাটির হত্যাকাণ্ডের খবরে শিউরে উঠেছিল সমাজ। যেখানে স্বামী রাজেশ গুলাটির হাতে খুন হন অনুপমা। এখানেও শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে অনুপমার দেহ ৭২ টুকরো করা হয়।  ২০১৩ সালের ৩ জুন এই রকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল ওড়িশার ভুবনেশ্বরে।

সেখানে এই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন একজন চিকিৎসক। যিনি স্ত্রীকে খুন করে ৩০০ টি খণ্ড করেছিলেন। অভিযুক্ত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সোমনাথ পারিদার। ৭১ বছরের কর্নেল সোমনাথ তিনি তার ৬২ বছরের স্ত্রী ঊষসীকে খুন করেন। ১৯৯২ সালে সেনা থেকে অবসর নেন  সোমনাথ পারিদার। সেনায় তিনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় এক মহিলাকে নিয়ে ঝামেলার  সূত্রপাত হয়। এর পরেই এই ঘটনার মর্মান্তিক পরিণতি। সেই সময় ঊষসী হত্যাকাণ্ডে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাতর্ভ্রমণে এক অল্পবয়সি মহিলার সঙ্গে কর্নেল সোমনাথ পারিদারের বন্ধুত্ব গড়ে  ওঠে।  সেই মহিলাই পরে নানা অছিলায় ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেন কর্নেলকে। এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হয় কর্নেল ও তার স্ত্রীয়ের মধ্যে।

অবসরের পর ভুবনেশ্বেরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরামর্শদাতা চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন সোমনাথ। বাড়িতে স্ত্রী ঊষসী ছাড়া আর কেউ থাকতেন না।  ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে বিদেশে থাকতেন।  বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তারা। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ফোন করে না পাওয়ায় সোমনাথের ছেলে তাঁর মামা রঞ্জন সামালের সঙ্গে  যোগাযোগ করে খোঁজ নিতে বলেন। রঞ্জন সেই মতো সোমনাথের বাড়িতে যান। সোমনাথকে  বাড়িতে দেখতে পেলেও, দিদি ঊষসীকে দেখতে পাচ্ছিলেন না।

দিদি কোথায় জানতে চাওয়ায়, সোমনাথ দাবি করেন,  ঊষসী দুবাইয়ে গিয়েছেন মেয়ের কাছে।  এদিকে  সোমনাথের বাড়ির ভিতর থেকে পচা গন্ধ পেয়েই সন্দেহ হয় রঞ্জনের। পুলিশে সোমনাথের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। সেই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ  সোমনাথের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সোমনাথের ঘরে ঢুকতেই পুলিশ দেখতে পায় চারদিকে ছড়ানো রয়েছে বেশ কয়েকটি টিফিন বাক্স। সেগুলি খুলতেই হতবাক পুলিশ। প্রতিটি টিফিনবাক্সে  ঠাসা ছিল মানুষের মাংসের টুকরো।  শুধু টিফিন বাক্সই নয়,  ঘরের এক কোণে দু’টি বড় লোহার ট্রাঙ্কও রাখা ছিল। সেখানেও ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল মানবশরীরের অংশ। গ্রেফতার হন কর্নেল সোমনাথ পারিদার। পুলিশের জেরায় এই সেনা চিকিৎসক প্রথমে জানান, রাগের বশে দেওয়ালে মাথা ঠুকে আত্মঘাতী হয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু তাঁর কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে।

পরে পুলিশের জেরায় সোমনাথ স্বীকার করে নেন স্ত্রী ঊষসীকে খুনের কথা। সোমনাথ জানান, স্ত্রীকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেছেন তিনি। তার পর গলার নলি কেটে দেন।  স্ত্রীর দেহ লোপাট করার পরিকল্পনাও করেন সোমনাথ। এর জন্য বাজার  থেকে দু’টি বড় ট্রাঙ্ক,  ২২টি টিফিন বাক্স কিনে আনেন তিনি। তার পর করাত  দিয়ে উষসীর দেহ টুকরো টুকরো করেন। ছুরি, করাত এমনকি অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন সরঞ্জাম স্ত্রীর দেহ কাটেন তিনি।

জেরায় পুলিশকে সোমনাথ জানিয়েছিলেন,  স্ত্রীর দেহের ৩০০ টুকরো করেছেন তিনি। তার পর  সেগুলি টিফিন বাক্সে, আর ট্রাঙ্কে ভরে রেখেছিলেন। দুর্গন্ধ লুকোতে দেহাংশের উপর ফিনাইল ঢেলে দিতেন।

প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন,  যে ক্লিনিক সোমনাথ চালাতেন,  সেখানে তিনি নিয়মিত যেতেন। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবেশীদের কেউ তাঁর স্ত্রীর প্রসঙ্গ তুললে বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন।

সোমনাথ পুলিশের কাছে দাবি করেন,  স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর শেষকৃত্য যেন শিরডিতে করা হয়। তাই দেহের একটা টুকরো শিরডিতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল  সোমনাথের। সোমনাথকে জেরা করার সময় পুলিশ জানতে পারে, স্ত্রীকে খুন করার পর তাঁর কাটা  মাথা বেশ কয়েক দিন ঘরের মাঝে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছিলেন। বেশ কয়েক দিন  স্ত্রীর ওই কাটা মাথার সঙ্গে কথাও বলেছিলেন।  সোমনাথের আরও জানান,  কিছু দিন যাওয়ার পর কাটা মাথা থেকে চুলসমেত চামড়া আলগা হয়ে গিয়েছিল। তার পরই সেই মাথা ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভুবনেশ্বরের স্থানীয় আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল সোমনাথকে। ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয় সোমনাথকে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

শ্রদ্ধা নয় এই তালিকায় আছে আরও অনেকেই! স্ত্রী’র দেহ কুচিয়ে ৩০০ টুকরো করেছিলেন এক কর্নেল

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২২, বুধবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক  :  শুধু শ্রদ্ধা হত্যাকাণ্ডই নয়, এই দেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যা নারকীয়তা চরম সীমায় পৌঁছেছে। ২০১০ সালে অনুপমা গুলাটির হত্যাকাণ্ডের খবরে শিউরে উঠেছিল সমাজ। যেখানে স্বামী রাজেশ গুলাটির হাতে খুন হন অনুপমা। এখানেও শ্বাসরোধ করে খুন করার পরে অনুপমার দেহ ৭২ টুকরো করা হয়।  ২০১৩ সালের ৩ জুন এই রকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল ওড়িশার ভুবনেশ্বরে।

সেখানে এই ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন একজন চিকিৎসক। যিনি স্ত্রীকে খুন করে ৩০০ টি খণ্ড করেছিলেন। অভিযুক্ত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সোমনাথ পারিদার। ৭১ বছরের কর্নেল সোমনাথ তিনি তার ৬২ বছরের স্ত্রী ঊষসীকে খুন করেন। ১৯৯২ সালে সেনা থেকে অবসর নেন  সোমনাথ পারিদার। সেনায় তিনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় এক মহিলাকে নিয়ে ঝামেলার  সূত্রপাত হয়। এর পরেই এই ঘটনার মর্মান্তিক পরিণতি। সেই সময় ঊষসী হত্যাকাণ্ডে শিউরে উঠেছিল গোটা দেশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাতর্ভ্রমণে এক অল্পবয়সি মহিলার সঙ্গে কর্নেল সোমনাথ পারিদারের বন্ধুত্ব গড়ে  ওঠে।  সেই মহিলাই পরে নানা অছিলায় ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেন কর্নেলকে। এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হয় কর্নেল ও তার স্ত্রীয়ের মধ্যে।

অবসরের পর ভুবনেশ্বেরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরামর্শদাতা চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন সোমনাথ। বাড়িতে স্ত্রী ঊষসী ছাড়া আর কেউ থাকতেন না।  ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে বিদেশে থাকতেন।  বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তারা। কিন্তু কয়েকদিন ধরে ফোন করে না পাওয়ায় সোমনাথের ছেলে তাঁর মামা রঞ্জন সামালের সঙ্গে  যোগাযোগ করে খোঁজ নিতে বলেন। রঞ্জন সেই মতো সোমনাথের বাড়িতে যান। সোমনাথকে  বাড়িতে দেখতে পেলেও, দিদি ঊষসীকে দেখতে পাচ্ছিলেন না।

দিদি কোথায় জানতে চাওয়ায়, সোমনাথ দাবি করেন,  ঊষসী দুবাইয়ে গিয়েছেন মেয়ের কাছে।  এদিকে  সোমনাথের বাড়ির ভিতর থেকে পচা গন্ধ পেয়েই সন্দেহ হয় রঞ্জনের। পুলিশে সোমনাথের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। সেই অভিযোগ পেয়ে পুলিশ  সোমনাথের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সোমনাথের ঘরে ঢুকতেই পুলিশ দেখতে পায় চারদিকে ছড়ানো রয়েছে বেশ কয়েকটি টিফিন বাক্স। সেগুলি খুলতেই হতবাক পুলিশ। প্রতিটি টিফিনবাক্সে  ঠাসা ছিল মানুষের মাংসের টুকরো।  শুধু টিফিন বাক্সই নয়,  ঘরের এক কোণে দু’টি বড় লোহার ট্রাঙ্কও রাখা ছিল। সেখানেও ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল মানবশরীরের অংশ। গ্রেফতার হন কর্নেল সোমনাথ পারিদার। পুলিশের জেরায় এই সেনা চিকিৎসক প্রথমে জানান, রাগের বশে দেওয়ালে মাথা ঠুকে আত্মঘাতী হয়েছিলেন স্ত্রী। কিন্তু তাঁর কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে।

পরে পুলিশের জেরায় সোমনাথ স্বীকার করে নেন স্ত্রী ঊষসীকে খুনের কথা। সোমনাথ জানান, স্ত্রীকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেছেন তিনি। তার পর গলার নলি কেটে দেন।  স্ত্রীর দেহ লোপাট করার পরিকল্পনাও করেন সোমনাথ। এর জন্য বাজার  থেকে দু’টি বড় ট্রাঙ্ক,  ২২টি টিফিন বাক্স কিনে আনেন তিনি। তার পর করাত  দিয়ে উষসীর দেহ টুকরো টুকরো করেন। ছুরি, করাত এমনকি অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন সরঞ্জাম স্ত্রীর দেহ কাটেন তিনি।

জেরায় পুলিশকে সোমনাথ জানিয়েছিলেন,  স্ত্রীর দেহের ৩০০ টুকরো করেছেন তিনি। তার পর  সেগুলি টিফিন বাক্সে, আর ট্রাঙ্কে ভরে রেখেছিলেন। দুর্গন্ধ লুকোতে দেহাংশের উপর ফিনাইল ঢেলে দিতেন।

প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন,  যে ক্লিনিক সোমনাথ চালাতেন,  সেখানে তিনি নিয়মিত যেতেন। শুধু তা-ই নয়, প্রতিবেশীদের কেউ তাঁর স্ত্রীর প্রসঙ্গ তুললে বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন।

সোমনাথ পুলিশের কাছে দাবি করেন,  স্ত্রীর শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর শেষকৃত্য যেন শিরডিতে করা হয়। তাই দেহের একটা টুকরো শিরডিতে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল  সোমনাথের। সোমনাথকে জেরা করার সময় পুলিশ জানতে পারে, স্ত্রীকে খুন করার পর তাঁর কাটা  মাথা বেশ কয়েক দিন ঘরের মাঝে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছিলেন। বেশ কয়েক দিন  স্ত্রীর ওই কাটা মাথার সঙ্গে কথাও বলেছিলেন।  সোমনাথের আরও জানান,  কিছু দিন যাওয়ার পর কাটা মাথা থেকে চুলসমেত চামড়া আলগা হয়ে গিয়েছিল। তার পরই সেই মাথা ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভুবনেশ্বরের স্থানীয় আদালত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল সোমনাথকে। ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয় সোমনাথকে।