১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রকেট ও টর্পেডো আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার
  • / 38

বিশেষ প্রতিবেদন: চিনারা ক্ষার থেকে বারুদ আবিষ্কার করেছিল। আতশবাজিতে তারা সেই বারুদ ব্যবহার করত। কিন্তু আরবরাই প্রথম সামরিক প্রয়োজনে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সাহায্যে বারুদ পরিশোধন করে। ‘স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার’ বইয়ের তথ্যমতে, ‘অ্যারাব সিভিলাইজেশন’ নামক গ্রন্থে ড. লিবন লিখেছেন, গোলা-বারুদ হল আরবদের একটি শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার।

 বারুদ আবিষ্কারের আগে তারা বন্দুক ব্যবহার করছিল। ‘হিস্টরি অব দ্য মুরিশ এম্পায়ার ইন স্পেন’-এর লেখক স্কট আরবদের বন্দুক ব্যবহারের সত্যতা সমর্থন করেছেন। আরবরা প্রাথমিক যুগে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং উমাইয়া খলিফা খালিদ ইবনে ইয়াজিদও পটাশিয়াম নাইট্রেটের কথা জানতেন।

তবে বিভিন্ন নামে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হতো। জাবির ইবনে হাইয়ান, আবু বকর আল-রাজি ও অন্যান্য আরব রসায়নবিদের রচনাবলীতে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের রেসিপি মিলেছে। আরবরাই প্রথম সল্টপিটারকে পরিশোধন করে অস্ত্র তৈরির মানে উন্নত করে।  সিরীয় সামরিক প্রকৌশলী ও রসায়নবিদ হাসান আল রাহ তাঁর ‘আল-কুরুসিয়া ওয়া আল-মানাসিব আল-হারবিয়া’ বইয়ে বিস্ফোরক ও বারুদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তিনি প্রথম পটাশিয়াম নাইট্রেট পরিশোধন করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন। এ ছাড়া তিনি পটাশিয়াম নাইট্রেট থেকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সল্ট অপসারণে পটাশিয়াম কার্বোনেট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। ১২৭০-৮০ সালের মধ্যে তিনি বইটি লিখেছিলেন। বইটিতে ১০৭ প্রকারের বারুদ তৈরির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

রকেট তৈরির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ২২টি রেসিপিতে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুযায়ী বারুদ তৈরির জন্য প্রয়োজন ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ১০ শতাংশ সালফার এবং ১৫ শতাংশ কার্বন। হাসান আল-রাম্মাহর রেসিপিতে ছিল ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ৯.০৬ শতাংশ সালফার এবং ১৫.৯৪ শতাংশ কার্বনের উল্লেখ।

 ১২৬০ সালে মিশরীয় সেনারা তাতার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আইন জালুতের যুদ্ধে ইতিহাসে প্রথম কামান থেকে গোলা ছোড়ে। স্পেনের আল-আন্দালুসে মুসলিমরা খ্রিস্টান  ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একইভাবে কামান ব্যবহার করে। মুসলিম আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ক্রুসেডারদের সন্ত্রস্ত করে তোলে। পঞ্চদশ  শতাধীতে আরবরা রকেট ও টর্পেডো দু’টিই আবিষ্কার করে। রকেটকে বলা হতো ‘তায়ার বুরাক’ বা ‘স্বয়ংক্রিয় ও জ্বলন্ত ডিম’।

 আরবদের উদ্ভাবিত টর্পেডো ছিল সামনে বর্শা সজ্জিত নাশপাতির আকৃতিবিশিষ্ট একটি স্বয়ংক্রিয় বোমা। বোমাটি শক্ত জাহাজ ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গিয়ে বিস্ফোরিত হতো। এসব মারণাস্ত্র ব্যবহারের ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। কিন্তু মুসলমানদের দুর্ভাগ্য যে, এ প্রযুক্তি স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং মুসলিমদের সঙ্গে শেষ লড়াইয়ে ক্রুসেডারদের  কামান ব্যবহার করে। স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছ থেকে এ প্রযুক্তি পশ্চিম ইউরোপে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর মুসিমলদের তৈরি সেই মূল্যবান প্রযুক্তি চলে যায় ইংল্যান্ডের হাতে।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রকেট ও টর্পেডো আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার

বিশেষ প্রতিবেদন: চিনারা ক্ষার থেকে বারুদ আবিষ্কার করেছিল। আতশবাজিতে তারা সেই বারুদ ব্যবহার করত। কিন্তু আরবরাই প্রথম সামরিক প্রয়োজনে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সাহায্যে বারুদ পরিশোধন করে। ‘স্বর্ণযুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার’ বইয়ের তথ্যমতে, ‘অ্যারাব সিভিলাইজেশন’ নামক গ্রন্থে ড. লিবন লিখেছেন, গোলা-বারুদ হল আরবদের একটি শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার।

 বারুদ আবিষ্কারের আগে তারা বন্দুক ব্যবহার করছিল। ‘হিস্টরি অব দ্য মুরিশ এম্পায়ার ইন স্পেন’-এর লেখক স্কট আরবদের বন্দুক ব্যবহারের সত্যতা সমর্থন করেছেন। আরবরা প্রাথমিক যুগে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং উমাইয়া খলিফা খালিদ ইবনে ইয়াজিদও পটাশিয়াম নাইট্রেটের কথা জানতেন।

তবে বিভিন্ন নামে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হতো। জাবির ইবনে হাইয়ান, আবু বকর আল-রাজি ও অন্যান্য আরব রসায়নবিদের রচনাবলীতে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের রেসিপি মিলেছে। আরবরাই প্রথম সল্টপিটারকে পরিশোধন করে অস্ত্র তৈরির মানে উন্নত করে।  সিরীয় সামরিক প্রকৌশলী ও রসায়নবিদ হাসান আল রাহ তাঁর ‘আল-কুরুসিয়া ওয়া আল-মানাসিব আল-হারবিয়া’ বইয়ে বিস্ফোরক ও বারুদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তিনি প্রথম পটাশিয়াম নাইট্রেট পরিশোধন করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন। এ ছাড়া তিনি পটাশিয়াম নাইট্রেট থেকে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সল্ট অপসারণে পটাশিয়াম কার্বোনেট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। ১২৭০-৮০ সালের মধ্যে তিনি বইটি লিখেছিলেন। বইটিতে ১০৭ প্রকারের বারুদ তৈরির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

রকেট তৈরির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ২২টি রেসিপিতে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুযায়ী বারুদ তৈরির জন্য প্রয়োজন ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ১০ শতাংশ সালফার এবং ১৫ শতাংশ কার্বন। হাসান আল-রাম্মাহর রেসিপিতে ছিল ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ৯.০৬ শতাংশ সালফার এবং ১৫.৯৪ শতাংশ কার্বনের উল্লেখ।

 ১২৬০ সালে মিশরীয় সেনারা তাতার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আইন জালুতের যুদ্ধে ইতিহাসে প্রথম কামান থেকে গোলা ছোড়ে। স্পেনের আল-আন্দালুসে মুসলিমরা খ্রিস্টান  ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একইভাবে কামান ব্যবহার করে। মুসলিম আগ্নেয়াস্ত্রগুলি ক্রুসেডারদের সন্ত্রস্ত করে তোলে। পঞ্চদশ  শতাধীতে আরবরা রকেট ও টর্পেডো দু’টিই আবিষ্কার করে। রকেটকে বলা হতো ‘তায়ার বুরাক’ বা ‘স্বয়ংক্রিয় ও জ্বলন্ত ডিম’।

 আরবদের উদ্ভাবিত টর্পেডো ছিল সামনে বর্শা সজ্জিত নাশপাতির আকৃতিবিশিষ্ট একটি স্বয়ংক্রিয় বোমা। বোমাটি শক্ত জাহাজ ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গিয়ে বিস্ফোরিত হতো। এসব মারণাস্ত্র ব্যবহারের ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। কিন্তু মুসলমানদের দুর্ভাগ্য যে, এ প্রযুক্তি স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং মুসলিমদের সঙ্গে শেষ লড়াইয়ে ক্রুসেডারদের  কামান ব্যবহার করে। স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছ থেকে এ প্রযুক্তি পশ্চিম ইউরোপে গিয়ে পৌঁছায়। এরপর মুসিমলদের তৈরি সেই মূল্যবান প্রযুক্তি চলে যায় ইংল্যান্ডের হাতে।