কালিয়াগঞ্জ মামলায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য

- আপডেট : ৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার
- / 13
পারিজাত মোল্লা: উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জে নাবালিকা ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জোড়া মামলা রাজ্যের। একটি মামলা সিট গঠনকে কেন্দ্র করে। অন্যটি, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব নিয়ে। আগামী সোমবার দু’টি মামলার শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে । গত বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সিট কে অসহযোগিতা করার জন্য রাজ্যকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কালিয়াগঞ্জের মামলায়।
উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে নাবালিকার অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তভার সিটের হাতে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট । সিটকে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ । সেই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার । ওইদিন এই নিয়ে শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ।বিচারপতি ওইদিন সওয়াল-জবাব পর্বে জানান – “পুলিশ কেন সিটকে সাহায্য করছে না ? রাজ্য নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনছে । এবার সিবিআই দিলে কি খুশি হবেন ? আদালতের কাছে এটা স্পষ্ট যাতে সিট কাজ না করতে পারে, রাজ্য সেই চেষ্টা করেছে । একই সঙ্গে ইচ্ছে করে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে । যেখানে তদন্তে কোনও স্থগিতাদেশ নেই, সেখানে নির্দেশ মানা রাজ্যের উচিত ছিল ।”
রাজ্যের এই ধরনের আচরণ দেখে স্বরাষ্ট্র সচিবকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থার। বিচারপতি আরও বলেন , – ‘ গত ১১ মে তাঁর এজলাসের নির্দেশ অমান্য করেছে রাজ্য সরকার’ । একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দময়ন্তী সেনের বদলে অন্য কাউকে সিটের সদস্য করা হবে? নাকি তাঁকেই রাখা হবে?সে ব্যাপারে আগামী শুনানিতে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত’ ।
আগামী বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় পরবর্তী শুনানি রয়েছে সিঙ্গেল বেঞ্চে ।সম্প্রতি উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে এক নাবালিকা দেহ উদ্ধার হয় । নিহত পরিবারের দাবি, -‘ ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ‘। যদিও পরিবারের দাবির সঙ্গে পুলিশের বক্তব্য মেলেনি । পরে এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের হয় । ঘটনার তদন্তে আইপিএস দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটা সিট গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ।আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সিটে দময়ন্তী সেন, প্রাক্তন আইপিএস পঙ্কজ দত্ত ও প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন্দ্র বিশ্বাসের থাকার কথা ।
কিন্তু রাজ্য ইতিমধ্যে দময়ন্তী সেনকে অন্য দায়িত্ব দেওয়ায় তিনি সিটে দায়িত্বগ্রহণ করতেই পারেননি বলে অভিযোগ । তাছাড়া হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে সিটের দু’জন সদস্য অভিযোগ করেছেন যে -‘যাতায়াতের খরচও দেওয়া হয়নি তাঁদের ‘। রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করা হয় ।এই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার । ওইদিনকার শুনানিতে রাজ্য সরকারের আইনজীবী জানান, -‘ রাজ্য এই ব্যাপারে কিছু জানে না ।
মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে উল্লেখ হয়েছিল । তখন গ্রীষ্মাবকাশকালীন বেঞ্চ ছিল । গৃহীত হয়নি । আগামী সপ্তাহে যেকোনও দিন শুনানি হোক । তার মধ্যে ডিভিশন বেঞ্চে আবার যাওয়া হবে ‘।একথা শোনার পর বিচারপতি মান্থার বলেন, “এটা কী ধরনের আচরণ ? রাজ্য সব জানে । রাজ্য কিছু জানে না, এই যুক্তি গ্রাহ্য নয় । ইচ্ছে করে আদালতের রায় মানা হয়নি । সিবিআই দেব নাকি ? তাহলে খুশি হবেন ? ডিভিশন বেঞ্চের কোনও স্থগিতাদেশ নেই । তাহলে কেন নির্দেশ মানেননি ? সিটের সদস্যরা সিনিয়র দক্ষ আধিকারিক ছিলেন । তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের এহেন আচরণে ।” সিটের তিন সদস্যের মধ্যে প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস জানান , “আমরা এর পরেও কাজ করেছি । সিটের পক্ষ থেকে আদালতে জমা দেওয়া হয় প্রাথমিক রিপোর্ট । সব তথ্যের স্ক্রুটিনি করা হয়েছে । আমাদের কেউ সাহায্য করেন”। এরেই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জোড়া আপিল নিয়ে গেল রাজ্য।আগামী সোমবার শুনানি রয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে।