১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তিন দশকের ভয়াবহ খরায় আফগানিস্তান

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার
  • / 211

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরায় বিপর্যস্ত আফগানিস্তান। পরপর কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি, দ্রুত হ্রাসমান তুষারপাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেদেশের কৃষি ও জীবনযাত্রা এখন মারাত্মক সংকটে।

রাষ্ট্রসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় দুই কোটি আফগান নাগরিক তীব্র খাদ্য ও পানিসংকটে ভুগছেন; যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। আফগানিস্তানের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হেরাত, ফারাহ, হেলমান্দ ও কান্দাহার প্রদেশের বহু নদী ও খাল সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: T-20-তে ইতিহাস, সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক রশিদ

জমিতে ফাটল ধরেছে, গম ও ভুট্টার খেত নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফসলের উৎপাদন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কম। অনেকেই গবাদি পশু বিক্রি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দীর্ঘ খরায় পশুখাদ্যের অভাবে প্রাণীর মৃত্যুহারও বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়াল

রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, খরায় সৃষ্ট খাদ্য সংকট এখন তমানবিক বিপর্যয়েরদ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার হার দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে পানির অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক গ্রামাঞ্চলে পরিষ্কার পানির উৎস সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষ কুয়ো ও বৃষ্টির পুরনো জল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।

আরও পড়ুন: স্থায়ীভাবে বন্ধ ভারতে আফগান দূতাবাস

যার ফলে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ২০২১ সালে তালিবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিদেশি তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষি পুনরুদ্ধার বা সেচব্যবস্থার উন্নয়ন প্রায় থেমে গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, সহায়তা না পেলে আগামী শীত মৌসুমে অন্তত দশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানের এই সংকট শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং এক গভীর মানবিক ও সামাজিক সংকটের প্রতিফলন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে এমন দেশগুলোর একটি এখন আফগানিস্তান, অথচ এর মোকাবিলায় তাদের হাতে নেই প্রয়োজনীয় সম্পদ বা কাঠামো। তারা সতর্ক করেছেন; দ্রুত বৈশ্বিক সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ না হলে দেশটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও গণঅভিবাসনের মুখে পড়বে।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

তিন দশকের ভয়াবহ খরায় আফগানিস্তান

আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরায় বিপর্যস্ত আফগানিস্তান। পরপর কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাতের ঘাটতি, দ্রুত হ্রাসমান তুষারপাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সেদেশের কৃষি ও জীবনযাত্রা এখন মারাত্মক সংকটে।

রাষ্ট্রসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় দুই কোটি আফগান নাগরিক তীব্র খাদ্য ও পানিসংকটে ভুগছেন; যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। আফগানিস্তানের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হেরাত, ফারাহ, হেলমান্দ ও কান্দাহার প্রদেশের বহু নদী ও খাল সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন: T-20-তে ইতিহাস, সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক রশিদ

জমিতে ফাটল ধরেছে, গম ও ভুট্টার খেত নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ফসলের উৎপাদন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কম। অনেকেই গবাদি পশু বিক্রি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দীর্ঘ খরায় পশুখাদ্যের অভাবে প্রাণীর মৃত্যুহারও বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৪০০ ছাড়াল

রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, খরায় সৃষ্ট খাদ্য সংকট এখন তমানবিক বিপর্যয়েরদ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার হার দ্রুত বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতে পানির অভাবে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক গ্রামাঞ্চলে পরিষ্কার পানির উৎস সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়ায় মানুষ কুয়ো ও বৃষ্টির পুরনো জল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।

আরও পড়ুন: স্থায়ীভাবে বন্ধ ভারতে আফগান দূতাবাস

যার ফলে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ২০২১ সালে তালিবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক সহায়তা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিদেশি তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষি পুনরুদ্ধার বা সেচব্যবস্থার উন্নয়ন প্রায় থেমে গেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, সহায়তা না পেলে আগামী শীত মৌসুমে অন্তত দশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানের এই সংকট শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং এক গভীর মানবিক ও সামাজিক সংকটের প্রতিফলন। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে এমন দেশগুলোর একটি এখন আফগানিস্তান, অথচ এর মোকাবিলায় তাদের হাতে নেই প্রয়োজনীয় সম্পদ বা কাঠামো। তারা সতর্ক করেছেন; দ্রুত বৈশ্বিক সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ না হলে দেশটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও গণঅভিবাসনের মুখে পড়বে।