০১ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওড়িশায় খনন বিরোধী প্রতিবাদে আদিবাসী নেত্রী নারংগিদেই মাঝির গ্রেফতারিতে নিন্দার ঝড়

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ৭ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার
  • / 139

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ওড়িশার পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে খনিজ সম্পদের লোভে দিন দিন জমি, জঙ্গল ও জলাশয় গিলে খাচ্ছে কর্পোরেট স্বার্থ। আর এবার এই লোভের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আদিবাসী নারীরাই। তাঁদের একটিই ভাষ্য “জমি আমাদের মা, বিক্রি নয়।” সেই প্রতিবাদের মুখ নারংগিদেই মাঝি, যিনি শুধুমাত্র নিজের জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় নয়, গোটা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ে এক সাহসী প্রতীক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সেই প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতে তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছে রাষ্ট্রের দমননীতি ও গ্রেফতারি।

ওড়িশার রায়গড়া ও কালাহান্ডি জেলায় খননের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত আদিবাসী নেত্রী নারংগিদেই মাঝিকে ২ আগস্ট রায়গড়ায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই এই গ্রেফতারিকে ঘিরে পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জানা যায়, গত মাসে নারংগিদেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে রায়গড়া ও কালাহান্ডিতে চলমান অবৈধ খননের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এমনকি তিনি ছিলেন সেই আদিবাসী প্রতিনিধিদলের একজন, যারা ১১ জুলাই ভুবনেশ্বরে রাহুল গান্ধীর একটি জনসভায় অংশ নিয়ে তাঁকে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন।

আরও পড়ুন: I love Muhammad’ ব্যানারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অসাংবিধানিক: জামায়াতে ইসলামি হিন্দ

এই পরিস্থিতিতে নারংগিদেই- এর গ্রেফতারি আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের মতে, এটি একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। যার মাধ্যমে কর্পোরেট-সমর্থিত খননের বিরোধীদের দমন করার চেষ্টা চলছে। পরিবেশ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এবং ২০১৭ সালের গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রফুল্ল সামন্ত্রা জানান, নারংগিদেই ১ই থেকে ৯ই আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলে বেআইনি খননের বিরুদ্ধে জনমত গঠন। তিনি বলেন, “কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যখন নারংগিদেই রায়গড়ায় তাঁর পুত্রবধূর প্রসবের সময় পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছিলেন, তখন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।”

আরও পড়ুন: পুলিশের তৎপরতায় ছিনতাইয়ের মূল চক্র গ্রেফতার

সংগঠন ফেক কেসেস অ্যাগেইনস্ট অ্যাক্টিভিস্টস (CAFCA) এর ওড়িশা রাজ্যের সমন্বয়কারী নরেন্দ্র মহন্তি জানান, নারংগিদেই ২৮ মে সিজিমালি খননস্থলে পুলিশের প্রবেশ আটকান। এছাড়াও আদিবাসীরা খননকারী কোম্পানির পক্ষে পুলিশের ক্যাম্প বসানোর প্রচেষ্টাকে রুখে দেয়। তিনি আরও জানান যে, ৫ জুন পরিবেশকর্মী মেধা পাটেকরকে এলাকায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও নারংগিদেই সরব হন। এই ঘটনার পর তিনি অন্যান্য আদিবাসীদের সঙ্গে ভুবনেশ্বরে গিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন এবং খননের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষতি ও জীবিকা সংকটের কথা তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন: ডায়মন্ডহারবারে গ্রেফতার ভুয়ো ৫ সরকারি আধিকারিক

রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নারংগিদেই বলেন যে, “সরকার তো আমাদের কথা শুনছে না। আমরা আমাদের জমি ভেদান্তা, আদানি ও আম্বানির হাতে তুলে দিতে পারি না। এর ফলে তিন লক্ষেরও বেশি মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়েছেন।” আদিবাসীদের দাবি, পাহাড়ে এভাবেই খনন চলতে থাকলে কমপক্ষে ২০০টি নদী শুকিয়ে যাবে। তাঁদের অভিযোগ, সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে কর্পোরেটদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি পুলিশের দমননীতি, বনাধিকার আইন ও পঞ্চায়েত আইনের অবজ্ঞা সবই হয়েছে খননকারী কোম্পানিগুলোর স্বার্থে। ভুয়া রিপোর্ট ব্যবহার করেও তাদের সহায়তা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ভেদান্তা গ্রুপ রায়গড়ার সিজিমালি বক্সাইট খনি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। অন্যদিকে, আদানি গ্রুপের মুণ্ড্রা অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড এর অধীনে রায়গড়া ও কালাহান্ডির কুট্রুমালি ব্লক এবং কোরাপুটের বল্লাদা বক্সাইট ব্লক রয়েছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ওড়িশায় খনন বিরোধী প্রতিবাদে আদিবাসী নেত্রী নারংগিদেই মাঝির গ্রেফতারিতে নিন্দার ঝড়

আপডেট : ৭ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : ওড়িশার পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে খনিজ সম্পদের লোভে দিন দিন জমি, জঙ্গল ও জলাশয় গিলে খাচ্ছে কর্পোরেট স্বার্থ। আর এবার এই লোভের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন আদিবাসী নারীরাই। তাঁদের একটিই ভাষ্য “জমি আমাদের মা, বিক্রি নয়।” সেই প্রতিবাদের মুখ নারংগিদেই মাঝি, যিনি শুধুমাত্র নিজের জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় নয়, গোটা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার লড়াইয়ে এক সাহসী প্রতীক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সেই প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতে তাঁর দিকে ধেয়ে এসেছে রাষ্ট্রের দমননীতি ও গ্রেফতারি।

ওড়িশার রায়গড়া ও কালাহান্ডি জেলায় খননের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত আদিবাসী নেত্রী নারংগিদেই মাঝিকে ২ আগস্ট রায়গড়ায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই এই গ্রেফতারিকে ঘিরে পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জানা যায়, গত মাসে নারংগিদেই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে রায়গড়া ও কালাহান্ডিতে চলমান অবৈধ খননের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এমনকি তিনি ছিলেন সেই আদিবাসী প্রতিনিধিদলের একজন, যারা ১১ জুলাই ভুবনেশ্বরে রাহুল গান্ধীর একটি জনসভায় অংশ নিয়ে তাঁকে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন।

আরও পড়ুন: I love Muhammad’ ব্যানারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা অসাংবিধানিক: জামায়াতে ইসলামি হিন্দ

এই পরিস্থিতিতে নারংগিদেই- এর গ্রেফতারি আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে। তাঁদের মতে, এটি একটি পরিকল্পিত চক্রান্ত। যার মাধ্যমে কর্পোরেট-সমর্থিত খননের বিরোধীদের দমন করার চেষ্টা চলছে। পরিবেশ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এবং ২০১৭ সালের গোল্ডম্যান পরিবেশ পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রফুল্ল সামন্ত্রা জানান, নারংগিদেই ১ই থেকে ৯ই আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়ি অঞ্চলে বেআইনি খননের বিরুদ্ধে জনমত গঠন। তিনি বলেন, “কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যখন নারংগিদেই রায়গড়ায় তাঁর পুত্রবধূর প্রসবের সময় পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছিলেন, তখন পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে।”

আরও পড়ুন: পুলিশের তৎপরতায় ছিনতাইয়ের মূল চক্র গ্রেফতার

সংগঠন ফেক কেসেস অ্যাগেইনস্ট অ্যাক্টিভিস্টস (CAFCA) এর ওড়িশা রাজ্যের সমন্বয়কারী নরেন্দ্র মহন্তি জানান, নারংগিদেই ২৮ মে সিজিমালি খননস্থলে পুলিশের প্রবেশ আটকান। এছাড়াও আদিবাসীরা খননকারী কোম্পানির পক্ষে পুলিশের ক্যাম্প বসানোর প্রচেষ্টাকে রুখে দেয়। তিনি আরও জানান যে, ৫ জুন পরিবেশকর্মী মেধা পাটেকরকে এলাকায় প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও নারংগিদেই সরব হন। এই ঘটনার পর তিনি অন্যান্য আদিবাসীদের সঙ্গে ভুবনেশ্বরে গিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন এবং খননের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষতি ও জীবিকা সংকটের কথা তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন: ডায়মন্ডহারবারে গ্রেফতার ভুয়ো ৫ সরকারি আধিকারিক

রাহুল গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নারংগিদেই বলেন যে, “সরকার তো আমাদের কথা শুনছে না। আমরা আমাদের জমি ভেদান্তা, আদানি ও আম্বানির হাতে তুলে দিতে পারি না। এর ফলে তিন লক্ষেরও বেশি মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়েছেন।” আদিবাসীদের দাবি, পাহাড়ে এভাবেই খনন চলতে থাকলে কমপক্ষে ২০০টি নদী শুকিয়ে যাবে। তাঁদের অভিযোগ, সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে কর্পোরেটদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকি পুলিশের দমননীতি, বনাধিকার আইন ও পঞ্চায়েত আইনের অবজ্ঞা সবই হয়েছে খননকারী কোম্পানিগুলোর স্বার্থে। ভুয়া রিপোর্ট ব্যবহার করেও তাদের সহায়তা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ভেদান্তা গ্রুপ রায়গড়ার সিজিমালি বক্সাইট খনি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। অন্যদিকে, আদানি গ্রুপের মুণ্ড্রা অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড এর অধীনে রায়গড়া ও কালাহান্ডির কুট্রুমালি ব্লক এবং কোরাপুটের বল্লাদা বক্সাইট ব্লক রয়েছে।