০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাত্র সাত পেরিয়েই মায়ের কাছে কুরআন হিফজ ভাইবোনের      

অর্পিতা লাহিড়ী
  • আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
  • / 41

দুই ভাইবোন মিসবাহুর রহমান ও মাসরুরা ফারহিন

 

 

 

 

পুবের কলম প্রতিবেদক: পবিত্র কুরআন হিফজ  করা বা হৃদয়ে ধারণ করে কুরআন শরীফ সারা জীবনের জন্য কণ্ঠস্থ করে ফেলা কোনও সাধারণ অর্জন নয়। আর এই ভক্তি ও সাফল্যেরই আনজাম  দিয়েছে বীরভূমের দুই ছোট্ট ভাইবোন, আর সেইসঙ্গে তাদের পরিবার।

চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর কুরআন হিফজ করে মাসরুরা ফারহিন। তার বয়স মাত্র ৮ বছর। সে-খবর ‘পুবের কলম’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। বহু পাঠক এতে আনন্দিত  হয়ে ‘পুবের কলম’ দফতরে সে সময়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

এখন আবার নতুন করে খবর এসেছে যে ফারহিনের ভাই মিসবাহুর রহমানও সম্পূর্ণ কুরআন হিফজ বা মুখস্থ করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটি হল ২৬ ডিসেম্বর। তার বয়স সবে ৭ পেরিয়েছে। এত কম বয়সে দুই ভাইবোনের এই অসামান্য কৃতিত্বে পরিচিতরা সকলেই খুশি। বর্তমানে মিসবাহুর সিউড়ির সুধীর স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

আর এর পেছনে রয়েছেন বালক-বালিকা দুটির আম্মা  দুজনেরই কুরআন হিফজ করার পেছনে তাঁর ভূমিকা মুখ্য। ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর এই দুই সন্তানকে আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থ কুরআন হিফজ করানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আর এই কাজ যে কত মেহনতসম্পন্ন তা সহজেই অনুমেয়। সত্যিই বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য ফারহিন ও মিসবাহুরের মা প্রকৃত অর্থেই গর্বের বিষয়। এই ধরনের মায়েরা যে আজও রয়েছেন, তা নিশ্চয়ই সমাজকে ইসলামি শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করবে।

এই দুই সন্তানের পিতা হচ্ছেন মুফতি মসিহুর রহমান। তিনি সিউড়ির মাদ্রাসা  জিয়াউল ইসলামের শিক্ষক। বুখারি শরীফ পড়ান। তবে আগেই বলা হয়েছে কোনও মাদ্রাসায় পড়ে ভাইবোনের এই কৃতিত্ব অর্জনের ঘটনা ঘটেনি। বাড়িতেই মায়ের কাছে শিখেছে কুরআন পাঠ। এরপর মায়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় কুরআন মুখস্থ করার পালা। মাত্র ১৫ মাসে ফারহীন হাফেজা হওয়ার পর তার ভাই মিসবাহুরও শুধুমাত্র ১১ মাসে কুরআন হিফ্জ সম্পন্ন করে। এই দুই কৃতী সন্তানের মা নিজেও একজন কুরআনের হাফেজা। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির মাহবুবিয়া মাদ্রাসাতুল বানাত থেকে তিনি কুরআনে হাফেজা হন। সন্তানদেরও আল্লাহ্র  পথে চালিত করতে প্রথম থেকেই সচেষ্ট রয়েছেন জন্মদাত্রী। নিজের তত্ত্বাবধানেই তাদের হাফেজ করে তুলেছেন।

মিসবাহুরদের আদি বাড়ি বীরভূমের মুরারই থানার রামচন্দ্রপুরের ঘুসকিরা গ্রাম। আব্বার চাকরি সূত্রে এর আগে তারা থাকত পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার মুরাতিপুরের মাদ্রাসা আরাবিয়া দারুস সালামের কোয়ার্টারে। সেখানেই মায়ের কাছে আরবি বিষয়ে পড়াশোনায় হাতেখড়ি। মুরাতিপুরে থাকাকালীনই মায়ের কাছে কুরআনের ১২ পারা মুখস্থ করে ফেলে মিসবাহুর। সিউড়ির মাদ্রাসায় আব্বা চাকরি সূত্রে চলে এলে তারা মাদ্রাসা কোয়ার্টারে থাকতে শুরু করে। বাকি ১৮ পারা কুরআন শরিফ এখানেই মুখস্থ করার পর ২৬ ডিসেম্বর সে কুরআন হিফজ করে। মাত্র ৭ বছর পেরিয়েই সে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করল।

তবে গোটা বিষয়টিতেই নিজেকে কোনও কৃতিত্ব দিতে চান না দুই হাফেজ সন্তানের মা। তাঁর কথায়, আল্লাহর  রহমত ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হত না। তাই আল্লাহর  কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। তিনি আরও বলেন, তার বছর দুয়েকের কোলের সন্তান মিফতাহুর রহমানকেও তিনি হাফেজ করার স্বপ্ন দেখেন। আল্লাহ্ হয়তো তার আশা পূরণ করবেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মাত্র সাত পেরিয়েই মায়ের কাছে কুরআন হিফজ ভাইবোনের      

আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার

 

 

 

 

পুবের কলম প্রতিবেদক: পবিত্র কুরআন হিফজ  করা বা হৃদয়ে ধারণ করে কুরআন শরীফ সারা জীবনের জন্য কণ্ঠস্থ করে ফেলা কোনও সাধারণ অর্জন নয়। আর এই ভক্তি ও সাফল্যেরই আনজাম  দিয়েছে বীরভূমের দুই ছোট্ট ভাইবোন, আর সেইসঙ্গে তাদের পরিবার।

চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর কুরআন হিফজ করে মাসরুরা ফারহিন। তার বয়স মাত্র ৮ বছর। সে-খবর ‘পুবের কলম’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। বহু পাঠক এতে আনন্দিত  হয়ে ‘পুবের কলম’ দফতরে সে সময়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।

এখন আবার নতুন করে খবর এসেছে যে ফারহিনের ভাই মিসবাহুর রহমানও সম্পূর্ণ কুরআন হিফজ বা মুখস্থ করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ এই দিনটি হল ২৬ ডিসেম্বর। তার বয়স সবে ৭ পেরিয়েছে। এত কম বয়সে দুই ভাইবোনের এই অসামান্য কৃতিত্বে পরিচিতরা সকলেই খুশি। বর্তমানে মিসবাহুর সিউড়ির সুধীর স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

আর এর পেছনে রয়েছেন বালক-বালিকা দুটির আম্মা  দুজনেরই কুরআন হিফজ করার পেছনে তাঁর ভূমিকা মুখ্য। ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর এই দুই সন্তানকে আল্লাহর পবিত্র গ্রন্থ কুরআন হিফজ করানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আর এই কাজ যে কত মেহনতসম্পন্ন তা সহজেই অনুমেয়। সত্যিই বাংলার মুসলিম সমাজের জন্য ফারহিন ও মিসবাহুরের মা প্রকৃত অর্থেই গর্বের বিষয়। এই ধরনের মায়েরা যে আজও রয়েছেন, তা নিশ্চয়ই সমাজকে ইসলামি শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করবে।

এই দুই সন্তানের পিতা হচ্ছেন মুফতি মসিহুর রহমান। তিনি সিউড়ির মাদ্রাসা  জিয়াউল ইসলামের শিক্ষক। বুখারি শরীফ পড়ান। তবে আগেই বলা হয়েছে কোনও মাদ্রাসায় পড়ে ভাইবোনের এই কৃতিত্ব অর্জনের ঘটনা ঘটেনি। বাড়িতেই মায়ের কাছে শিখেছে কুরআন পাঠ। এরপর মায়ের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় কুরআন মুখস্থ করার পালা। মাত্র ১৫ মাসে ফারহীন হাফেজা হওয়ার পর তার ভাই মিসবাহুরও শুধুমাত্র ১১ মাসে কুরআন হিফ্জ সম্পন্ন করে। এই দুই কৃতী সন্তানের মা নিজেও একজন কুরআনের হাফেজা। পূর্ব বর্ধমানের মেমারির মাহবুবিয়া মাদ্রাসাতুল বানাত থেকে তিনি কুরআনে হাফেজা হন। সন্তানদেরও আল্লাহ্র  পথে চালিত করতে প্রথম থেকেই সচেষ্ট রয়েছেন জন্মদাত্রী। নিজের তত্ত্বাবধানেই তাদের হাফেজ করে তুলেছেন।

মিসবাহুরদের আদি বাড়ি বীরভূমের মুরারই থানার রামচন্দ্রপুরের ঘুসকিরা গ্রাম। আব্বার চাকরি সূত্রে এর আগে তারা থাকত পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার মুরাতিপুরের মাদ্রাসা আরাবিয়া দারুস সালামের কোয়ার্টারে। সেখানেই মায়ের কাছে আরবি বিষয়ে পড়াশোনায় হাতেখড়ি। মুরাতিপুরে থাকাকালীনই মায়ের কাছে কুরআনের ১২ পারা মুখস্থ করে ফেলে মিসবাহুর। সিউড়ির মাদ্রাসায় আব্বা চাকরি সূত্রে চলে এলে তারা মাদ্রাসা কোয়ার্টারে থাকতে শুরু করে। বাকি ১৮ পারা কুরআন শরিফ এখানেই মুখস্থ করার পর ২৬ ডিসেম্বর সে কুরআন হিফজ করে। মাত্র ৭ বছর পেরিয়েই সে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করল।

তবে গোটা বিষয়টিতেই নিজেকে কোনও কৃতিত্ব দিতে চান না দুই হাফেজ সন্তানের মা। তাঁর কথায়, আল্লাহর  রহমত ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হত না। তাই আল্লাহর  কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। তিনি আরও বলেন, তার বছর দুয়েকের কোলের সন্তান মিফতাহুর রহমানকেও তিনি হাফেজ করার স্বপ্ন দেখেন। আল্লাহ্ হয়তো তার আশা পূরণ করবেন।