চিনের সন্দেহজনক গতিবিধি ভারত মহাসাগরে: কেরলে শক্তিশালী র্যাডার বসাল ভারত, নজরে গদর ও হাম্বানতোতা বন্দর

- আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
- / 242
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইরান-ইসরাইল সংঘাতের আবহে যখন বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময় ভারত মহাসাগরে নতুন কারসাজি শুরু করেছে চিন। সাম্প্রতিক সময়ে চিনের সন্দেহজনক সামরিক গতিবিধি ভারতীয় গোয়েন্দা এবং প্রতিরক্ষা মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ভারতের কেরলে প্রথমবার বসানো হল এক অত্যাধুনিক এবং উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন র্যাডার, যার মাধ্যমে নজর রাখা যাবে চিনের “চুপি চুপি বিচরণ” এবং পড়শি দেশগুলির বন্দর এলাকায় সক্রিয় চিনা উপস্থিতির উপর।
কেরলের কোঝিকোড় জেলার বেপোর সংলগ্ন চালিয়ামে ভারতীয় বায়ুসেনা এই শক্তিশালী র্যাডারটি স্থাপন করেছে। এর ফলে গদর (পাকিস্তান) এবং হাম্বানতোতা (শ্রীলঙ্কা) বন্দরের উপরে সরাসরি নজরদারি চালাতে পারবে ভারত। জানা গিয়েছে, চিন ইতিমধ্যেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজে নিয়ে সেখানে নৌবাহিনীর জাহাজ এবং গুপ্তচর জাহাজ পাঠিয়ে রেখেছে, যা ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন’-এর আড়ালে একটি সুপরিকল্পিত সামরিক তৎপরতা বলে মনে করছে ভারত।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং যখন চিন সফরে গিয়ে সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তানের উস্কানি নিয়ে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন, তখনই চিনের যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছে। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ভারতের রাডার নেটওয়ার্ককে আরও আধুনিক ও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় বায়ুসেনা।
তামিলনাড়ুর দিকে আগে থেকেই একটি শক্তিশালী র্যাডার স্থাপন করা ছিল। তবে কেরলের দিকের পুরনো প্রযুক্তির র্যাডার নজরদারির ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয় বলে মনে করা হচ্ছিল। চিনের অনুপ্রবেশ-সদৃশ তৎপরতা নজরে আসতেই কেরলে দ্রুত এই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন র্যাডার বসানো হয়।
ভারতীয় বায়ুসেনার আধিকারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই র্যাডার ইন্টিগ্রেটেড এয়ার কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম (IACCS)-এর আওতায় পরিচালিত হবে। ৩৬০ ডিগ্রি কভারেজ সম্পন্ন এই র্যাডার এমন প্রযুক্তিতে সক্ষম, যা ছোট নৌকা থেকে বিশাল যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান পর্যন্ত সহজেই শনাক্ত করতে পারবে। এর ফলে আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের উপরে প্রতিটি গতিবিধির উপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে।
চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর আওতায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। পাকিস্তানের গদর বন্দর এবং শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা বন্দরে চিনের নিয়ন্ত্রণ ভারতকে কৌশলগতভাবে ঘিরে ফেলার অংশ বলেই মনে করছে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা। সেই প্রেক্ষিতে ভারত মহাসাগরে নজরদারির ব্যবস্থা আরও নিখুঁত করা হয়েছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে ব্রহ্মস সুপারসনিক মিসাইলসমৃদ্ধ যুদ্ধজাহাজ এবং ডুবোজাহাজ মোতায়েন করেছে। এবার র্যাডার স্থাপনের মাধ্যমে এক নতুন স্তরে পৌঁছল ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা এবং নজরদারি ব্যবস্থা।
ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, চিনের কোনও তৎপরতা যাতে দেশের নিরাপত্তায় বিঘ্ন না ঘটাতে পারে, সেজন্য আকাশপথ এবং সমুদ্রপথ—দুই দিকেই নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে।