১৪ অগাস্ট ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত লঙ্কা গুঁড়ো ছড়ানো হয়েছে আমাদের ক্ষতে’, পুঞ্চে সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ

সামিমা এহসানা
  • আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার
  • / 15

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: কেউ বলছে পিঠে আর কোনও চামড়া নেই, কেউ বলছে জামা কাপড় খুলিয়ে লাঠি–লোহার রড দিয়ে মেরে ক্ষতের উপর লঙ্কা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়েছে সেনা। তিনজনকে পিটিয়ে মেরা ফেলা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার পুঞ্চে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ সেনা জওয়ান। তারপর তল্লাশির নামে ওই এলাকার নীরিহ গ্রামবাসীদের তুলে নিয়ে যায় সেনা। তিনজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আরও বেশ কয়েকজনকে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। একটি ভিডিয়ো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেখানে। ভিডিয়োতে দেখা যায়, গ্রামবাসীদের মেরে তাদের ক্ষতে লঙ্কার গুঁড়ো ছড়াচ্ছে সেনা জওয়ানরা। ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে পড়ছে দেখে তড়িঘড়ি বিক্ষোভ দমনের নামে পুঞ্চ–রাজৌরি সীমান্তে ইন্টারনেট বন্ধ করিয়ে দেয় প্রশাসন।

সেনার নির্যাতনে গুরুতর আহত মুহম্মদ আশরাফ হাসপাতালের বেড থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাকে ও আরও চার গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে যায় সেনা। লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। তারপর তাদের পোশাক খুলে নিয়ে নতুন করে মারধর শুরু হয়। এরপর যতক্ষণ না যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জ্ঞান হারায় তারা, ততক্ষণ তাদের ক্ষতের উপর লঙ্কা গুঁড়ো ছড়ানো হয়। রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে শনিবার সেনার হাতে নির্যাতিত ৫ গ্রামবাসীকে ভর্তি করানো হয়েছে।

আশরাফ জানিয়েছেন ভাইরাল ভিডিয়োতে যে ব্যক্তিকে লাঠি ও রড দিয়ে মারা হচ্ছিল, সেটা তিনিই। ব্যাথা আর আতঙ্কে গত শনিবার থেকে ঘুমাতে পারেননি তিনি। বিদ্যুত  উন্নয়ন বিভাগে চাকরি করেন আশরাফ। খুব সামান্য টাকা বেতন পান। তাতেই চলে তার সংসার।

ওই হাসপাতালে তার সঙ্গে ভর্তি করানো হয়েছে ৪৫ বছরের ফারুক আহমেদ, ফজল হোসেন (৫০), মুহম্মদ বেতাব (২৫) ও ১৫ বছরের এক নাবালককে।

আশরাফ বলেছেন, ‘আমরা দাঁড়াতে বা বসতে পারছি না। হাসপাতালে কর্মীরা কোনও টেস্ট করাতে হলে বা শৌচালয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদেরকে স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ারে নিয়ে যাচ্ছে।

আশরাফ বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ বাড়ি থেকে তাকে সেনা জওয়ানরা তুলে নিয়ে যায়। এরপর দেহরা কি গলির সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কিছু না বলে হঠাৎ লাঠি আর লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর চলতে থাকে। এরপর লঙ্কা গুঁড়ো ছড়ানো হয়।

সেনার হাতে নির্যাতিত ১৫ বছরের নাবালক দশম শ্রেণীর ছাত্র। তাকে সেনারা প্রশ্ন করে, তাদের বাড়িতে ভোজের আয়জন করা হয়েছিল হামলার কয়েকদিন আগে, সেখানে জঙ্গিদের সে খাবার খাইয়েছে কিনা। সে জানায়, তার দাদা বেতাবের বিয়ের জন্যে ভোজার আয়োজন হয়েছিল। এরপর তাকেও মারধর করা হয়।

বেতাব কাশ্মীরে শ্রমিক হিসবে কাজ করে। কয়েক দিন আগেই বিয়ের জন্যে বাড়ি ফিরেছিল সে। বিয়ের পর কিছুদিন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার পরিকল্পনা করেছিল। ১৫ ডিসেম্বর বিয়ে করে বেতাব। সেনারা তাকেও তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে মারধর করে। বেতাব জানিয়েছে তার শরীরের উপরের অংশে কোনও চামড়া নেই। এতটাই নৃশংসভাবে তাকে মারধর করেছে সেনা জওয়ানরা।

জঙ্গি খোঁজার নামে কেন এভাবে নীরিহ গ্রামবাসীদের উপর জুলুম করা হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলছে গ্রামবাসীরা। আগেও জম্মু্ ও কাশ্মীরে সেনার জুলুমের কথা বারবার উঠে এসেছে, তবে সুরাহা কোনওদিনও মেলেনি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত লঙ্কা গুঁড়ো ছড়ানো হয়েছে আমাদের ক্ষতে’, পুঞ্চে সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ

আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: কেউ বলছে পিঠে আর কোনও চামড়া নেই, কেউ বলছে জামা কাপড় খুলিয়ে লাঠি–লোহার রড দিয়ে মেরে ক্ষতের উপর লঙ্কা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়েছে সেনা। তিনজনকে পিটিয়ে মেরা ফেলা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার পুঞ্চে জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ সেনা জওয়ান। তারপর তল্লাশির নামে ওই এলাকার নীরিহ গ্রামবাসীদের তুলে নিয়ে যায় সেনা। তিনজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আরও বেশ কয়েকজনকে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। একটি ভিডিয়ো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সেখানে। ভিডিয়োতে দেখা যায়, গ্রামবাসীদের মেরে তাদের ক্ষতে লঙ্কার গুঁড়ো ছড়াচ্ছে সেনা জওয়ানরা। ওই ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে পড়ছে দেখে তড়িঘড়ি বিক্ষোভ দমনের নামে পুঞ্চ–রাজৌরি সীমান্তে ইন্টারনেট বন্ধ করিয়ে দেয় প্রশাসন।

সেনার নির্যাতনে গুরুতর আহত মুহম্মদ আশরাফ হাসপাতালের বেড থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাকে ও আরও চার গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে যায় সেনা। লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। তারপর তাদের পোশাক খুলে নিয়ে নতুন করে মারধর শুরু হয়। এরপর যতক্ষণ না যন্ত্রণায় কাতর হয়ে জ্ঞান হারায় তারা, ততক্ষণ তাদের ক্ষতের উপর লঙ্কা গুঁড়ো ছড়ানো হয়। রাজৌরির সরকারি হাসপাতালে শনিবার সেনার হাতে নির্যাতিত ৫ গ্রামবাসীকে ভর্তি করানো হয়েছে।

আশরাফ জানিয়েছেন ভাইরাল ভিডিয়োতে যে ব্যক্তিকে লাঠি ও রড দিয়ে মারা হচ্ছিল, সেটা তিনিই। ব্যাথা আর আতঙ্কে গত শনিবার থেকে ঘুমাতে পারেননি তিনি। বিদ্যুত  উন্নয়ন বিভাগে চাকরি করেন আশরাফ। খুব সামান্য টাকা বেতন পান। তাতেই চলে তার সংসার।

ওই হাসপাতালে তার সঙ্গে ভর্তি করানো হয়েছে ৪৫ বছরের ফারুক আহমেদ, ফজল হোসেন (৫০), মুহম্মদ বেতাব (২৫) ও ১৫ বছরের এক নাবালককে।

আশরাফ বলেছেন, ‘আমরা দাঁড়াতে বা বসতে পারছি না। হাসপাতালে কর্মীরা কোনও টেস্ট করাতে হলে বা শৌচালয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদেরকে স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ারে নিয়ে যাচ্ছে।

আশরাফ বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ বাড়ি থেকে তাকে সেনা জওয়ানরা তুলে নিয়ে যায়। এরপর দেহরা কি গলির সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর কিছু না বলে হঠাৎ লাঠি আর লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর চলতে থাকে। এরপর লঙ্কা গুঁড়ো ছড়ানো হয়।

সেনার হাতে নির্যাতিত ১৫ বছরের নাবালক দশম শ্রেণীর ছাত্র। তাকে সেনারা প্রশ্ন করে, তাদের বাড়িতে ভোজের আয়জন করা হয়েছিল হামলার কয়েকদিন আগে, সেখানে জঙ্গিদের সে খাবার খাইয়েছে কিনা। সে জানায়, তার দাদা বেতাবের বিয়ের জন্যে ভোজার আয়োজন হয়েছিল। এরপর তাকেও মারধর করা হয়।

বেতাব কাশ্মীরে শ্রমিক হিসবে কাজ করে। কয়েক দিন আগেই বিয়ের জন্যে বাড়ি ফিরেছিল সে। বিয়ের পর কিছুদিন স্ত্রীর সঙ্গে থাকার পরিকল্পনা করেছিল। ১৫ ডিসেম্বর বিয়ে করে বেতাব। সেনারা তাকেও তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে মারধর করে। বেতাব জানিয়েছে তার শরীরের উপরের অংশে কোনও চামড়া নেই। এতটাই নৃশংসভাবে তাকে মারধর করেছে সেনা জওয়ানরা।

জঙ্গি খোঁজার নামে কেন এভাবে নীরিহ গ্রামবাসীদের উপর জুলুম করা হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলছে গ্রামবাসীরা। আগেও জম্মু্ ও কাশ্মীরে সেনার জুলুমের কথা বারবার উঠে এসেছে, তবে সুরাহা কোনওদিনও মেলেনি।