সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে উতপ্ত কটক, বন্ধ ইন্টারনেট
- আপডেট : ৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 486
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে তপ্ত হয়ে ওঠে ওড়িশার রাজধানী কটক। অভিযোগ, একটি মুসলিম মহল্লার মধ্য দিয়ে বিসর্জনের জন্য প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। সেই মিছিল থেকে মুসলিম বিদ্বেষী একের পর এক আশ্লীল মন্তব্য করা হয়। প্রতিবাদ করে স্থানীয় মুসলিমরা। তা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত। সেইসময় কট্টর হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজরা (বেশিরভাগই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য) হিন্দু মহল্লাগুলিতে গুজব ছড়িয়ে দেয়, এই সংঘর্ষে তাদের ২ সমর্থককে নাকি মুসলিমরা খুন করেছে। সেই গুজব আগুনের স্ফূলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এতে পরিস্থিতি আরও তপ্ত হয়ে ওঠে।
এক হাজার বছরের পুরনো শহর কটক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য সুপরিচিত। সেখানে সম্ভবত এই প্রথম এমন তীব্র সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটল। অভিযোগ, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতা দখলের পরই সাম্প্রদায়িকতা প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। শুক্রবার রাতে এই হিংসার ঘটনা শুরু হলেও তার জের এখনও চলছে। এর মধ্যেই শনি ও রবিবার বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা তাণ্ডব চালানোর পর শহরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মীরা একটি শপিং মলে হামলা চালায়। সেটি ভাঙচুর করে। রাস্তার পাশের দোকানগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত বছর বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ওড়িশায় সাম্প্রদায়িক ঘৃণা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খ্রিস্টানদের উপর হামলার ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। ট্রেন থেকে একজন সন্ন্যাসীকে টেনে নামিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। গরু রক্ষার নামে তৈরি হওয়া গুন্ডা বাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে। দরগা বাজারের কাছে একটি মুসলিম মহল্লার মধ্য দিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের একটি মিছিল যাচ্ছিল। সেখানে তারস্বরে ডিজে বাজছিল। অভিযোগ, সেই মিছিল থেকে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক কটূক্তি করা হয়। তা থেকে অশান্তির সূত্রপাত। পরস্পরকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি শুরু হয়। এই প্রসঙ্গে স্থানীয় মুদি দোকানদার মুহাম্মদ আসিফ বলেন, প্রাথমিক বিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। এটিকে একটি সাম্প্রদায়িক রং দেওয়া হয়েছিল।
মিছিলটি যখন আমাদের এলাকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে দু’টি দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। আমরা প্রাথমিকভাবে উভয় পক্ষকে শান্ত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু পরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের সংঘর্ষ শুরু হয় এবং তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। সেইসময় একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, এই সংঘর্ষে দু’জন হিন্দু নিহত হয়েছে। এই মিথ্যা প্রচার ও গুজবকেকাজে লাগিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) সোমবার কটকে বন্ধের ডাক দেয় এবং রবিবার সন্ধ্যায় একটি মোটরসাইকেল র্যালির আয়োজন করে। ২ হাজারের বেশি লোক এবং ১ হাজারের বেশি মোটরবাইক নিয়ে এই সমাবেশটি দরগা বাজার এলাকা দিয়ে যাওয়ার অনুমতিও দেয় পুলিশ। ভিএইচপি’র লোকদের দরগা বাজারের কাছে জড়ো হতে দেওয়া হয়।
ভিএইচপি’র কর্মীরা তখন কার্যত তাণ্ডব চালাতে শুরু করে। লুটপাট করে। একটি শপিং মলে ঢুকে ভাঙচুর করে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি দোকানে হামলা করে। মলের বাইরে বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন লাগানো হয়। পুলিশ অবশ্য এলাকায় টহলদারি শুরু করেছে। দু’পক্ষের মোট ১৪জনকে আটক করা হয়েছে। ৬জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য বারবার মাইকিং করা হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। হিংসায় কারও মৃত্যু হয়নি বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে। পুলিশ কমিশনার এস দেব দত্ত সিং জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শহর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। দরগা বাজার পূজা কমিটির সচিব রাজ কিশোর মিশ্র বলেছেন, আমাদের পুজো কমিটিকে অনেক মুসলিম সাহায্য করে। আমরা কটকে এমন দাঙ্গা আগে দেখিনি। মেয়র সুভাষ সিং বলেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানে সম্প্রীতি রয়েছে। কাউকে এই সম্প্রীতির বন্ধন নষ্ট করতে দেওয়া উচিত নয়।

















































