১১ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মুক্তি আটকাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ

ঘৃণার সিনেমা ‘উদয়পুর ফাইলস’ মুক্তিতে স্থগিতাদেশ, দিল্লি হাইকোর্টে বড় ধাক্কা নির্মাতাদের

কিবরিয়া আনসারি
  • আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
  • / 169

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দিল্লি হাইকোর্টে বড় ধাক্কা খেল ‘উদয়পুর ফাইলস’-এর নির্মাতারা। বিতর্কিত সিনেমাটির মুক্তিতে স্থগিতাদেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা শুনানির চলার পর স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং বিচারপতি অনীশ দয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ। একইসঙ্গে কেন্দ্রকে সিবিএফসি সার্টিফিকেটের বিরুদ্ধে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। দেশজুড়ে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি প্রদর্শিত শুরু হওয়ার ঠিক একদিন আগে আদালতের স্থগিতাদেশ বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

দেশে ঘৃণা ও অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে চলচ্চিত্র জগতকেও ব্যবহার করেছে গেরুয়া শিবির। একাধিক বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘কাশ্মীর ফাইলস’, ‘কেরালা ফাইলস’ ও ‘সবরমতী রিপোর্ট’-এর মত বেশকিছু সিনেমা। মূলত হিন্দুত্বে শান দিতেই এই সমস্ত সিনেমা নির্মিত করা হয়েছে। ২০২২ সালের একটি ঘটনাকে বিকৃতি করে নির্মিত হয়েছে ‘উদয়পুর ফাইলস’। আসল তথ্যকে ধামা চাপা দিয়ে তথ্য বিকৃতি করে এই সিনেমা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ। ছবিটির মুক্তি আটকাতে দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মুসলিম সংগঠনটি। দেশের শীর্ষ আদালতেও মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, সিনেমাটি মুক্তি পেলে ঘৃণ্যার প্রচার, নিদিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উস্কে দিতে পারে।

বৃহস্পতিবার পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এই মামলার শুনানি চলে আদালতে। প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং বিচারপতি অনীশ দয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ছবিটি মুক্তি দেওয়া উচিত কিনা সে বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকে। আদালত উল্লেখ করেছে, শংসাপত্র ছাড়াই সিনেমার একটি টিজার মুক্তি পেয়েছে। বেঞ্চের বক্তব্য, “এটা স্পষ্ট যে প্রযোজক একটি টিজার আপলোড করার কথা স্বীকার করেছেন যাতে ছবিটির কিছু অংশ ছিল যা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন: ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোটের আর্জি খারিজ দিল্লি হাইকোর্টে

২ জুলাই সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) টিজার থেকে কিছু কাটছাঁট সহ একটি ট্রেলারকে শংসাপত্র দিয়েছে। যা ২৬ জুন বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড করা হয়েছিল। ২০ জুন ছবিটি প্রদর্শনের জন্য বোর্ড কর্তৃক ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, “বিভিন্ন চ্যানেলে প্রকাশিত এবং আপলোড করা ট্রেলারটিতে ছবিটির অপ্রত্যয়িত অংশ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যার ফলে বোর্ড ১ জুলাই প্রযোজককে নোটিশ জারি করেছে। সিবিএফসি যে সিনেমাটি কাটছাঁট করতে বলেছে তার কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে, যা সিনেমাটোগ্রাফ আইনের লঙ্ঘন।”

আরও পড়ুন: বিচারপতির বাড়ি থেকে উদ্ধার বিপুল টাকা, উৎস কি! মেলেনি সদুত্তর

মামলাকারীর সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবাল যুক্তি দিয়েছিলেন, যে ছবিটি একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে নির্মিত হয়েছে। আদালত বলেছে, “ছবিতে কিছু ঘটনা এবং সংলাপ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে চলচ্চিত্রটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সবচেয়ে খারাপ রূপ, যা জনশৃঙ্খলা ও সম্প্রীতির জন্য আসন্ন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।” দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, “এই আদালতের পক্ষে অসাধারণ এখতিয়ার প্রয়োগ করা অগ্রহণযোগ্য, এমন একটি মামলায় যেখানে আদালতে আবেদনকারী কোনও আবেদনকারী বিকল্প প্রতিকার ব্যবহার করেননি। তবে মামলার সত্যতা বিবেচনা করে… আমাদের মতামত যে আবেদনকারীর সিনেমাটোগ্রাফ আইনের ধারা ৬ এর অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করা উচিত ছিল।”

আরও পড়ুন: জামিন পেলেন কুস্তিগীর সুশীল কুমার

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুনে রাজস্থানের উদয়পুরে তৎকালীন বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মা বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। বিশ্বনবীকে নিয়ে বিজেপি নেত্রীর উস্কানিমূলক মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভের জন্ম হয়। বিশ্বনবীর অপমান নিয়ে দেশের কোনায় কোনায় শুরু হয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। সেই সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল কানহাইয়া লাল নামের এক দর্জিকে। এই ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘উদয়পুর ফাইলস’। জানা গিয়েছে, ১১ জুলাই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। ছবিটির পরিচালনা করেছেন ভারত এস শ্রীনাতে। ছবির প্রধান চরিত্রে রয়েছেন বিজয় রাজ।

প্রতিবেদক

কিবরিয়া আনসারি

Kibria obtained a master's degree in journalism from Aliah University. He has been in journalism since 2018, gaining work experience in multiple organizations. Focused and sincere about his work, Kibria is currently employed at the desk of Purber Kalom.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মুক্তি আটকাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ

ঘৃণার সিনেমা ‘উদয়পুর ফাইলস’ মুক্তিতে স্থগিতাদেশ, দিল্লি হাইকোর্টে বড় ধাক্কা নির্মাতাদের

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দিল্লি হাইকোর্টে বড় ধাক্কা খেল ‘উদয়পুর ফাইলস’-এর নির্মাতারা। বিতর্কিত সিনেমাটির মুক্তিতে স্থগিতাদেশ দিল দিল্লি হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার প্রায় পাঁচ ঘণ্টা শুনানির চলার পর স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেয় প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং বিচারপতি অনীশ দয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ। একইসঙ্গে কেন্দ্রকে সিবিএফসি সার্টিফিকেটের বিরুদ্ধে সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। দেশজুড়ে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি প্রদর্শিত শুরু হওয়ার ঠিক একদিন আগে আদালতের স্থগিতাদেশ বড় ধাক্কা বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

দেশে ঘৃণা ও অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে চলচ্চিত্র জগতকেও ব্যবহার করেছে গেরুয়া শিবির। একাধিক বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘কাশ্মীর ফাইলস’, ‘কেরালা ফাইলস’ ও ‘সবরমতী রিপোর্ট’-এর মত বেশকিছু সিনেমা। মূলত হিন্দুত্বে শান দিতেই এই সমস্ত সিনেমা নির্মিত করা হয়েছে। ২০২২ সালের একটি ঘটনাকে বিকৃতি করে নির্মিত হয়েছে ‘উদয়পুর ফাইলস’। আসল তথ্যকে ধামা চাপা দিয়ে তথ্য বিকৃতি করে এই সিনেমা তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ। ছবিটির মুক্তি আটকাতে দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মুসলিম সংগঠনটি। দেশের শীর্ষ আদালতেও মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, সিনেমাটি মুক্তি পেলে ঘৃণ্যার প্রচার, নিদিষ্ট একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্যবস্তু করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উস্কে দিতে পারে।

বৃহস্পতিবার পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এই মামলার শুনানি চলে আদালতে। প্রধান বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং বিচারপতি অনীশ দয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ছবিটি মুক্তি দেওয়া উচিত কিনা সে বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকে। আদালত উল্লেখ করেছে, শংসাপত্র ছাড়াই সিনেমার একটি টিজার মুক্তি পেয়েছে। বেঞ্চের বক্তব্য, “এটা স্পষ্ট যে প্রযোজক একটি টিজার আপলোড করার কথা স্বীকার করেছেন যাতে ছবিটির কিছু অংশ ছিল যা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন: ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোটের আর্জি খারিজ দিল্লি হাইকোর্টে

২ জুলাই সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি) টিজার থেকে কিছু কাটছাঁট সহ একটি ট্রেলারকে শংসাপত্র দিয়েছে। যা ২৬ জুন বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড করা হয়েছিল। ২০ জুন ছবিটি প্রদর্শনের জন্য বোর্ড কর্তৃক ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, “বিভিন্ন চ্যানেলে প্রকাশিত এবং আপলোড করা ট্রেলারটিতে ছবিটির অপ্রত্যয়িত অংশ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যার ফলে বোর্ড ১ জুলাই প্রযোজককে নোটিশ জারি করেছে। সিবিএফসি যে সিনেমাটি কাটছাঁট করতে বলেছে তার কিছু অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে, যা সিনেমাটোগ্রাফ আইনের লঙ্ঘন।”

আরও পড়ুন: বিচারপতির বাড়ি থেকে উদ্ধার বিপুল টাকা, উৎস কি! মেলেনি সদুত্তর

মামলাকারীর সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিবাল যুক্তি দিয়েছিলেন, যে ছবিটি একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে নির্মিত হয়েছে। আদালত বলেছে, “ছবিতে কিছু ঘটনা এবং সংলাপ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে চলচ্চিত্রটি বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের সবচেয়ে খারাপ রূপ, যা জনশৃঙ্খলা ও সম্প্রীতির জন্য আসন্ন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।” দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, “এই আদালতের পক্ষে অসাধারণ এখতিয়ার প্রয়োগ করা অগ্রহণযোগ্য, এমন একটি মামলায় যেখানে আদালতে আবেদনকারী কোনও আবেদনকারী বিকল্প প্রতিকার ব্যবহার করেননি। তবে মামলার সত্যতা বিবেচনা করে… আমাদের মতামত যে আবেদনকারীর সিনেমাটোগ্রাফ আইনের ধারা ৬ এর অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করা উচিত ছিল।”

আরও পড়ুন: জামিন পেলেন কুস্তিগীর সুশীল কুমার

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের জুনে রাজস্থানের উদয়পুরে তৎকালীন বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মা বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা. কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। বিশ্বনবীকে নিয়ে বিজেপি নেত্রীর উস্কানিমূলক মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ক্ষোভের জন্ম হয়। বিশ্বনবীর অপমান নিয়ে দেশের কোনায় কোনায় শুরু হয় প্রতিবাদ-আন্দোলন। সেই সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল কানহাইয়া লাল নামের এক দর্জিকে। এই ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘উদয়পুর ফাইলস’। জানা গিয়েছে, ১১ জুলাই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। ছবিটির পরিচালনা করেছেন ভারত এস শ্রীনাতে। ছবির প্রধান চরিত্রে রয়েছেন বিজয় রাজ।