কাছে না থাক, পাশে তো আছে… এই ভাবনায় করোনায় প্রয়াত স্ত্রীয়ের মূর্তি গড়লেন স্বামী

- আপডেট : ৯ জানুয়ারী ২০২৩, সোমবার
- / 12
পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: বর্তমান সময়ে চতুর্দিকেই মানুষের মধ্যে হানাহানি থেকে রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে চলেছে। প্রেম, ভালোবাসার পরণতি যে ভয়ঙ্কর হতে পারে, পর পর কয়েকটি ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা সমাজ। এখনও মানুষের মনে শ্রদ্ধা-আফতাব কাণ্ডের বীভৎসতার দাগ স্পষ্ট। প্রেমিকার শ্রদ্ধার দেহ টুকরো টুকরো করে সেই দেহ ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল আফতাব।
এর পরেও শিলিগুড়ি থেকে স্ত্রীয়ের দেহ দুটুকরো করা তিস্তার জলে ভাসিয়ে দেয় স্বামী। মহারাষ্ট্রেও প্রেমিকাকে বিয়ে করতে না চেয়ে তার দেহ খুন করে ৩৫ কোপে ছিন্নবিচ্ছন্ন করে তার প্রেমিক। এই সমস্ত ঘটনার মধ্যে এক হিমেল বাতাসের মতোই ভিআইপি রোডের বাসিন্দা তাপস শাণ্ডিল্যের ঘটনা। করোনায় প্রয়াত স্ত্রীয়ের মূর্তি গড়ে নিজের বাড়িতে রাখলেন তিনি। এই ভাবে মৃত মানুষের মূর্তি বাড়ির মধ্যে রাখা রাখা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল তার পরিবারের লোকেরা। কিন্তু বৃদ্ধের কথায়, প্রয়াত মানুষের ছবি যদি ঘরে রাখা যায়, তাহলে প্রয়াত মানুষের মূর্তি রাখতে অসুবিধা কোথায়।
ভিআইপি রোডের বাড়িতে যেখানে স্ত্রী ইন্দ্রাণীর প্রিয় জায়গা ছিল সেখানেই আড়াইলক্ষ টাকা খরচ করে মূর্তি বসিয়েছেন তিনি। অবিকল জীবন্ত মানুষের মতো দেখতে এই সিলিকনের মূর্তি। মূর্তি অঙ্গে পরানো শাড়ি, সোনার গয়না। তাপসবাবু জানিয়েছেন, যে গয়নাগুলি সবচেয়ে পছন্দের ছিল তাঁর, সেগুলিই পরানো হয়েছে। মূর্তির ওজন ৩০ কেজি। স্ত্রী ইন্দ্রাণীর সিলিকনের মূর্তির গায়ে রয়েছে অসমের শাড়ি। ছেলের বিয়ের রিসেপশনে এই শাড়িই পরেছিলেন ইন্দ্রাণী। এই প্রাণবন্ত মূর্তিটি তৈরি করেছেন মূর্তির ভাস্কর সুবিমল দাস। এই মূর্তি তৈরি করতে সময় লেগেছে ছয়মাসের কিছু বেশি।
সম্প্রতি ইস্কন মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, ভক্তিবেদান্ত স্বামীর প্রাণবন্ত একটি স্বামীর এমনই একটি জীবন্ত মূর্তি দেখে পছন্দ হয়েছিল ইন্দ্রাণীর। তখনই স্বামীর কাছে আবদার করেছিলেন, তিনি যদি আগে মারা যান, তাহলে যেন তার এই রকমই একটি মূর্তি বানিয়ে দেন তিনি।
২০২১ সালের ৪ মে করোনায় প্রয়াত হন ইন্দ্রাণী। মৃত্যুর কয়েকমাস পরে তাপসবাবু এমন একজন কারিগরের খোঁজ করতে থাকেন, যিনি তাঁর স্ত্রীয়ের অপূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করতে পারবেন। তখনই যোগাযোগ হয় সুবিমল দাসের সঙ্গে। খুব চ্যালেঞ্জের সঙ্গে এই মূর্তি গড়ার কাজ গড়ে তোলেন সুবিমলবাবু। প্রথমে একটি মাটির মডেল গড়ে তোলা হয়। মাটির ছাঁচ তৈরিতে সুবিমলের সঙ্গে হাত হাতে লাগিয়ে কাজ করেন তাপসবাবু।
তার পর ইন্দ্রাণীর মুখ নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। জামা-কাপড়ও রীতিমতো মাপ দিয়ে মূর্তির গায়ে বসানো হয়। বারাসতের যে দর্জির কাছ থেকে ব্লাউজ তৈরি করতেন সেখান থেকেই সেখান থেকেই তৈরি করা হয় ব্লাউজ।
মোমের মূর্তির থেকে সিলিকনের মূর্তি পরিচর্যা করা সহজ বলেই জানিয়েছেন ভাস্কররা।
তাপসবাবুর কথায়, করোনা হয়েছিল ইন্দ্রাণীদেবীর। হাসপাতালে ছিলেন স্ত্রী। কোয়ারেন্টাইনে নিভৃতে একা, এক অসহায় অবস্থায় ছিলেন তিনি। এর পর ইন্দ্রাণীদেবীর চলে যাওয়া। একরাশ কষ্ট বুকে নিয়ে কাটাচ্ছিলেন বৃদ্ধ। কিন্তু তার পরেই ইন্দ্রাণীদেবীর মূর্তি তৈরি করালেন তাপসবাবু। বৃদ্ধের কথায়, জানি নেই, তবু তো মূর্তির মাধ্যমে চোখের দেখা দেখতে পাব। মনে করব পাশেই আছে আমার ইন্দ্রাণী।