১৭ নভেম্বর ২০২৫, সোমবার, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রত্যেক খুন ও ধর্ষণের অপরাধীরা এবার ক্ষমাভিক্ষা চাইবে, প্রশ্ন তুললেন বিলকিসের আইনজীবী  

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৯ অগাস্ট ২০২২, শুক্রবার
  • / 112

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের ৯ সদস্যকে হত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে গুজরাত সরকার। তা নিয়ে বিলকিস রীতিমতো আতঙ্কিত। জানালেন, নৃশংস অপরাধীরা ছাড়া পেয়েছেন এটা শোনার পর ভয়ে, আতঙ্কে তাঁর হাত, পা অসাড় হয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে মোক্ষম প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিয়েছেন বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্তা। শোভা বলেন, যেভাবে বানুর অপরাধীর গুজরাত সরকার মুক্তি দিয়েছে এরপর থেকে প্রত্যেক খুন ও ধর্ষণের সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা ছাড়া পাওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে। আইনজীবী আরও বলেন, গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্ত অপরাধের ভয়াবহতা সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা না করেই নেওয়া।

আরও পড়ুন: ‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী পুলিশ’, সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী মহারাষ্ট্রের তরুণী চিকিৎসক

 

আরও পড়ুন: বৌদির মুন্ডু কেটে ধারাল অস্ত্র-সহ হাঁটতে হাঁটতে সোজা থানায় হাজির দেওর!

আইনজীবীর কথায়, ‘আমার মনে হয়, এবার থেকে প্রত্যেক খুন ও ধর্ষণের আসামী ১৪ বছর জেল খাটার পর ক্ষমাভিক্ষা চেয়ে আবেদন জানাবে। এই ধরনের একটি গুরুতর মামলায় যদি ক্ষমাভিক্ষা মঞ্জুর  করা হয়, তাহলে কেন ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামী ক্ষমাভিক্ষা চাইবে না?’ আইনজীবী সাফ জানান, আইনে ক্ষমাভিক্ষা অত্যন্ত খারাপ একটি বিষয় এবং এটি কোনওভাবেই মৌলিক অধিকারের বিষয় হতে পারে না। নিজের এই বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি ১৯৯২ সালরে একটি নীতির কথা উল্লেখ করেন। বলেন, সেই নীতির অধীনে অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তার এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই।

আরও পড়ুন: ক্রেতার হাতে ‘খুন’ বিক্রেতা! ৫০ টাকার জেরে খুন বলে অভিযোগ

 

দোষীদের এভাবে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিলকিস আক্ষেপপ্রকাশ করে বলেছিলেন, গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিলকিসের কথায়, ‘দু’দিন আগে, ২০২২ সালের ১৫ অগাস্টের ঘটনা আমার গত ২০ বছরের ট্রমাকে আবার নতুন করে জাগিয়ে দিল। আমি শুনলাম ১১ জন দোষী ব্যক্তি, যারা আমার পরিবার, আমার জীবন ধ্বংস করেছে, আমার ৩ বছরের মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, তারা মুক্তি পেয়ে গেল। আমি হতবাক। আমি। আমি শুধু এইটুকুই বলতে পারি, কোনও নারীর বিচার এভাবে শেষ হয় কী করে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে বিশ্বাস করতাম। আমি রাষ্ট্রের ওপর আস্থা রেখেছিলাম। ধীরে ধীরে আমার ট্রমা নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম। এই আসামীদের মুক্তি আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

 

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিসের বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করেছিল দাঙ্গাবাজরা। তাদের হাতেই চোখের সামনে বিলকিস তার পরিবারের সদস্যদের খুন হতে দেখেছে। তার তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছার মেরে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছে। সীমাহীন অত্যাচারে, যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল বিলকিস। চেতনা ফেরার পর সে স্থানীয় এক আদিবাসী মহিলার থেকে পরার কাপড় ধার করে দাহোদ জেলার লিমখেদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

 

অভিযোগ, থানার হেড কনস্টেবল ঘটনাটি চাপা দিয়ে অভিযোগের একটি ছোট সংস্করণ এফআইআর-এ লিখেছিলেন। পুলিশে অভিযোগ জানানোয় বিলকিসকে ২০০৪ সালে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। যার ফলে সুপ্রিম কোর্ট মামলা গুজরাত থেকে মুম্বইয়ে সরানোর নির্দেশ দেয়। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ২০ অভিযুক্তের মধ্যে ১১ জনকে গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণ, হত্যা, বে-আইনি সমাবেশ এবং অন্যান্য অভিযোগে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। অভিযুক্তদের আড়াল করার জন্য হেড কনস্টেবলকে ‘ভুল রেকর্ড তৈরি করার’ জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সেই মামলায় প্রমাণের অভাবে ৭জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বিচার চলাকালীন একজনের মৃত্যু হয়।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

প্রত্যেক খুন ও ধর্ষণের অপরাধীরা এবার ক্ষমাভিক্ষা চাইবে, প্রশ্ন তুললেন বিলকিসের আইনজীবী  

আপডেট : ১৯ অগাস্ট ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের ৯ সদস্যকে হত্যার অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীকে জেল থেকে ছেড়ে দিয়েছে গুজরাত সরকার। তা নিয়ে বিলকিস রীতিমতো আতঙ্কিত। জানালেন, নৃশংস অপরাধীরা ছাড়া পেয়েছেন এটা শোনার পর ভয়ে, আতঙ্কে তাঁর হাত, পা অসাড় হয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে মোক্ষম প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিয়েছেন বিলকিসের আইনজীবী শোভা গুপ্তা। শোভা বলেন, যেভাবে বানুর অপরাধীর গুজরাত সরকার মুক্তি দিয়েছে এরপর থেকে প্রত্যেক খুন ও ধর্ষণের সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা ছাড়া পাওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবে। আইনজীবী আরও বলেন, গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্ত অপরাধের ভয়াবহতা সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা না করেই নেওয়া।

আরও পড়ুন: ‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী পুলিশ’, সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী মহারাষ্ট্রের তরুণী চিকিৎসক

 

আরও পড়ুন: বৌদির মুন্ডু কেটে ধারাল অস্ত্র-সহ হাঁটতে হাঁটতে সোজা থানায় হাজির দেওর!

আইনজীবীর কথায়, ‘আমার মনে হয়, এবার থেকে প্রত্যেক খুন ও ধর্ষণের আসামী ১৪ বছর জেল খাটার পর ক্ষমাভিক্ষা চেয়ে আবেদন জানাবে। এই ধরনের একটি গুরুতর মামলায় যদি ক্ষমাভিক্ষা মঞ্জুর  করা হয়, তাহলে কেন ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামী ক্ষমাভিক্ষা চাইবে না?’ আইনজীবী সাফ জানান, আইনে ক্ষমাভিক্ষা অত্যন্ত খারাপ একটি বিষয় এবং এটি কোনওভাবেই মৌলিক অধিকারের বিষয় হতে পারে না। নিজের এই বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি ১৯৯২ সালরে একটি নীতির কথা উল্লেখ করেন। বলেন, সেই নীতির অধীনে অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তার এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই।

আরও পড়ুন: ক্রেতার হাতে ‘খুন’ বিক্রেতা! ৫০ টাকার জেরে খুন বলে অভিযোগ

 

দোষীদের এভাবে ছেড়ে দেওয়া নিয়ে বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিলকিস আক্ষেপপ্রকাশ করে বলেছিলেন, গুজরাত সরকারের এই সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিলকিসের কথায়, ‘দু’দিন আগে, ২০২২ সালের ১৫ অগাস্টের ঘটনা আমার গত ২০ বছরের ট্রমাকে আবার নতুন করে জাগিয়ে দিল। আমি শুনলাম ১১ জন দোষী ব্যক্তি, যারা আমার পরিবার, আমার জীবন ধ্বংস করেছে, আমার ৩ বছরের মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে, তারা মুক্তি পেয়ে গেল। আমি হতবাক। আমি। আমি শুধু এইটুকুই বলতে পারি, কোনও নারীর বিচার এভাবে শেষ হয় কী করে? আমি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে বিশ্বাস করতাম। আমি রাষ্ট্রের ওপর আস্থা রেখেছিলাম। ধীরে ধীরে আমার ট্রমা নিয়ে বাঁচতে শিখছিলাম। এই আসামীদের মুক্তি আমার শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ন্যায়বিচারের প্রতি আমার বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

 

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের গুজরাত দাঙ্গার সময় বিলকিসের বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করেছিল দাঙ্গাবাজরা। তাদের হাতেই চোখের সামনে বিলকিস তার পরিবারের সদস্যদের খুন হতে দেখেছে। তার তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছার মেরে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছে। সীমাহীন অত্যাচারে, যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল বিলকিস। চেতনা ফেরার পর সে স্থানীয় এক আদিবাসী মহিলার থেকে পরার কাপড় ধার করে দাহোদ জেলার লিমখেদা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

 

অভিযোগ, থানার হেড কনস্টেবল ঘটনাটি চাপা দিয়ে অভিযোগের একটি ছোট সংস্করণ এফআইআর-এ লিখেছিলেন। পুলিশে অভিযোগ জানানোয় বিলকিসকে ২০০৪ সালে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। যার ফলে সুপ্রিম কোর্ট মামলা গুজরাত থেকে মুম্বইয়ে সরানোর নির্দেশ দেয়। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত ২০ অভিযুক্তের মধ্যে ১১ জনকে গর্ভবতী মহিলাকে ধর্ষণ, হত্যা, বে-আইনি সমাবেশ এবং অন্যান্য অভিযোগে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। অভিযুক্তদের আড়াল করার জন্য হেড কনস্টেবলকে ‘ভুল রেকর্ড তৈরি করার’ জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। সেই মামলায় প্রমাণের অভাবে ৭জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বিচার চলাকালীন একজনের মৃত্যু হয়।