২৭ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জ্বালানির সুইচে ত্রুটি: সাত বছর আগেই সতর্ক করেছিল এফএএ, মানেনি এয়ার ইন্ডিয়া

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার
  • / 142

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হলে ১২ জুনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা এড়ানো যেত — এমনটাই মনে করছেন অনেকেই। কারণ, বোয়িং ৭৩৭ মডেলের বিমানের জ্বালানির সুইচে ত্রুটির বিষয়ে সাত বছর আগেই আমেরিকার ফেডেরাল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জারি করা সেই উপদেশাবলিতে (স্পেশ্যাল এয়ারওয়ার্দিনেস ইনফরমেশন বুলেটিন বা এসএআইবি) জানানো হয়েছিল, বোয়িং ৭৩৭ জেটের কিছু মডেলে জ্বালানির সুইচের ‘লকিং ফিচার’ সঠিকভাবে সংযুক্ত নয়। কিন্তু এটি কোনও আইনি নির্দেশিকা (এয়ারওয়ার্দিনেস ডিরেক্টিভ) ছিল না। ফলে বিমান সংস্থাগুলি — যেমন এয়ার ইন্ডিয়া — এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য আইনত বাধ্য ছিল না। কিন্তু উপদেশটিকে গুরুত্ব দেওয়া হলে, হয়তো ১২ জুনের ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটত না।

শনিবার, আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার এক মাস পূর্ণ হতেই এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, রানওয়ে ছাড়ার ঠিক পরেই বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের এআই-১৭১ বিমানের দু’টি ইঞ্জিনই আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, জ্বালানির সুইচ নিজে থেকেই ‘রান’ (চালু) অবস্থান থেকে ‘কাটঅফ’ (বন্ধ) অবস্থায় সরে গিয়েছিল। এই সুইচ দিয়েই ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছয় এবং মাঝ-আকাশে যেকোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণও করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনও রকম বাহ্যিক প্ররোণা ছাড়াই তা বন্ধ হয়ে যায়।

রিপোর্ট বলছে, বিমান ওড়ার কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই দু’টি ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে। তখন এক পাইলট অপর পাইলটকে প্রশ্ন করেন, “তুমি কেন জ্বালানি বন্ধ করলে?” জবাবে আরেকজন জানান, “আমি কিছু বন্ধ করিনি।” সঙ্গে সঙ্গে বিমানটির গতি ও উচ্চতা হু-হু করে কমতে থাকে। পাইলটেরা সঙ্গে সঙ্গে সুইচ দু’টি আবার চালু অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন এবং ইঞ্জিন চালু করার মরিয়া চেষ্টা চালান। ইঞ্জিন-২ সাময়িকভাবে প্রতিক্রিয়া দিলেও ইঞ্জিন-১ আর চালু করা যায়নি।

আরও পড়ুন: এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা: ভুল দেহ পাঠানোর অভিযোগ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া

এই দুর্ঘটনায় বিমানে ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি-সহ ২৪২ জন। 260 জনের মৃত্যু হয়, কেবলমাত্র এক জন যাত্রী প্রাণে বাঁচেন।

আরও পড়ুন: দিল্লিতে অবতরণের পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে আগুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান ওড়ার ঠিক পরেই পাইলটের ভুল করে জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। অতএব, বোয়িংয়ের ডিজাইন ত্রুটি এবং সময়মতো তার নিরীক্ষা না করাকেই দায়ী করা হচ্ছে এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য।

আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় চালককে আঙুল, আইনি পথে পাইলটরা

উল্লেখযোগ্যভাবে, বোয়িং ৭৩৭-এর যে ত্রুটিপূর্ণ সুইচ ডিজাইন নিয়ে এফএএ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, সেটিই ব্যবহার করা হয়েছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত ৭৮৭-৮ মডেলটিতেও। তখন এফএএ পরিদর্শনের পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের প্রশ্ন উঠছে— বিমান সংস্থাগুলির দায়িত্ববোধ কতটা সুরক্ষা-কেন্দ্রিক? শুধুমাত্র আইনি বাধ্যবাধকতার অভাব দেখিয়ে কি এড়িয়ে যাওয়া যায় এত জনের মৃত্যুর দায়? তদন্ত এগোচ্ছে, কিন্তু প্রশ্নগুলো আরও জোরাল হয়ে উঠছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

জ্বালানির সুইচে ত্রুটি: সাত বছর আগেই সতর্ক করেছিল এফএএ, মানেনি এয়ার ইন্ডিয়া

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করা হলে ১২ জুনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা এড়ানো যেত — এমনটাই মনে করছেন অনেকেই। কারণ, বোয়িং ৭৩৭ মডেলের বিমানের জ্বালানির সুইচে ত্রুটির বিষয়ে সাত বছর আগেই আমেরিকার ফেডেরাল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছিল। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জারি করা সেই উপদেশাবলিতে (স্পেশ্যাল এয়ারওয়ার্দিনেস ইনফরমেশন বুলেটিন বা এসএআইবি) জানানো হয়েছিল, বোয়িং ৭৩৭ জেটের কিছু মডেলে জ্বালানির সুইচের ‘লকিং ফিচার’ সঠিকভাবে সংযুক্ত নয়। কিন্তু এটি কোনও আইনি নির্দেশিকা (এয়ারওয়ার্দিনেস ডিরেক্টিভ) ছিল না। ফলে বিমান সংস্থাগুলি — যেমন এয়ার ইন্ডিয়া — এই ত্রুটি সংশোধনের জন্য আইনত বাধ্য ছিল না। কিন্তু উপদেশটিকে গুরুত্ব দেওয়া হলে, হয়তো ১২ জুনের ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটত না।

শনিবার, আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার এক মাস পূর্ণ হতেই এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, রানওয়ে ছাড়ার ঠিক পরেই বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেলের এআই-১৭১ বিমানের দু’টি ইঞ্জিনই আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, জ্বালানির সুইচ নিজে থেকেই ‘রান’ (চালু) অবস্থান থেকে ‘কাটঅফ’ (বন্ধ) অবস্থায় সরে গিয়েছিল। এই সুইচ দিয়েই ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছয় এবং মাঝ-আকাশে যেকোনও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণও করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনও রকম বাহ্যিক প্ররোণা ছাড়াই তা বন্ধ হয়ে যায়।

রিপোর্ট বলছে, বিমান ওড়ার কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই দু’টি ইঞ্জিন সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে। তখন এক পাইলট অপর পাইলটকে প্রশ্ন করেন, “তুমি কেন জ্বালানি বন্ধ করলে?” জবাবে আরেকজন জানান, “আমি কিছু বন্ধ করিনি।” সঙ্গে সঙ্গে বিমানটির গতি ও উচ্চতা হু-হু করে কমতে থাকে। পাইলটেরা সঙ্গে সঙ্গে সুইচ দু’টি আবার চালু অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন এবং ইঞ্জিন চালু করার মরিয়া চেষ্টা চালান। ইঞ্জিন-২ সাময়িকভাবে প্রতিক্রিয়া দিলেও ইঞ্জিন-১ আর চালু করা যায়নি।

আরও পড়ুন: এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা: ভুল দেহ পাঠানোর অভিযোগ নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া

এই দুর্ঘটনায় বিমানে ছিলেন গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি-সহ ২৪২ জন। 260 জনের মৃত্যু হয়, কেবলমাত্র এক জন যাত্রী প্রাণে বাঁচেন।

আরও পড়ুন: দিল্লিতে অবতরণের পরেই এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে আগুন

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান ওড়ার ঠিক পরেই পাইলটের ভুল করে জ্বালানির সুইচ বন্ধ করে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। অতএব, বোয়িংয়ের ডিজাইন ত্রুটি এবং সময়মতো তার নিরীক্ষা না করাকেই দায়ী করা হচ্ছে এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের জন্য।

আরও পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনায় চালককে আঙুল, আইনি পথে পাইলটরা

উল্লেখযোগ্যভাবে, বোয়িং ৭৩৭-এর যে ত্রুটিপূর্ণ সুইচ ডিজাইন নিয়ে এফএএ উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, সেটিই ব্যবহার করা হয়েছিল দুর্ঘটনাগ্রস্ত ৭৮৭-৮ মডেলটিতেও। তখন এফএএ পরিদর্শনের পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের প্রশ্ন উঠছে— বিমান সংস্থাগুলির দায়িত্ববোধ কতটা সুরক্ষা-কেন্দ্রিক? শুধুমাত্র আইনি বাধ্যবাধকতার অভাব দেখিয়ে কি এড়িয়ে যাওয়া যায় এত জনের মৃত্যুর দায়? তদন্ত এগোচ্ছে, কিন্তু প্রশ্নগুলো আরও জোরাল হয়ে উঠছে।