খড়গপুরের আইআইটি পড়ুয়া ফাইজান মৃত্যুতে ৩০২ ধারা যুক্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিল হাইকোর্ট

- আপডেট : ৬ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার
- / 6
পারিজাত মোল্লা: খড়গপুরের আইআইটি পড়ুয়া ফাইজান আহমেদের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য উঠে এলো বিশেষজ্ঞ কমিটির দাখিল রিপোর্টে। এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্র চলছিল বলে অভিযোগ অসমবাসী নিহত পরিবারের। তবে সত্য তো গোপন থাকেনা! খড়্গপুর আইআইটির ছাত্রের রহস্য মৃত্যুর তদন্তে নতুন মোড় কলকাতা হাইকোর্টে।
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে রিপোর্ট জমা দিয়েছে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ অজয় গুপ্তার নেতৃত্বাধীন কমিটি। দাখিল রিপোর্টে কমিটি উল্লেখ করছে, খড়্গপুরের আইআইটির ওই ছাত্রের রহস্য মৃত্যু আসলে খুন। এর পাশাপাশি বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারও এদিন সন্দেহ প্রকাশ করেন, আইআইটি ময়না তদন্তের প্রথম রিপোর্ট প্রভাবিত করে থাকতে পারে।
বিচারপতি এদিন এজলাসে জানান, যেভাবে মাথায় আঘাতের চিহ্ন থাকার পরেও সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, তাতে সন্দেহের অবকাশ তৈরি হয়েছে’।
প্রসঙ্গত , খড়্গপুর আইআইটির পড়ুয়া ফাইজ়ান আহমেদের প্রবল রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে মৃত্যু হয়েছে। ওই ছাত্রের মাথায় ও বুকে ক্ষত রয়েছে।সেই বিষয়গুলির কথা উল্লেখ করে আজ অর্থাৎ বুধবার এর মধ্যে তদন্তকারী অফিসারকে রিপোর্ট সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী শুক্রবার এই সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে ।মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারের সিঙ্গেল বেঞ্চ আরও জানিয়েছে, -‘ প্রয়োজনে তদন্তকারী অফিসার এই মামলায় নতুন ধারা যুক্ত করতে পারবেন’।
সিঙ্গেল বেঞ্চ জানায় , -‘ এবার ৩০২ ধারা (খুনের মামলা) যুক্ত করার সময় এসে গিয়েছে। এবার অভিযুক্তদেরও চিহ্নিত করার সময় এসে গেছে’।খড়্গপুর আইআইটির ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ফরেন্সিক রিপোর্ট আদালতে জমা পরার পরই আরও কড়া হাইকোর্ট। সিএফএসএল অধিকর্তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে ভিসেরা পরীক্ষা করে সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
পরবর্তী শুনানিতে এই বিষয়ে কেস ডায়েরি জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এর পাশাপাশি ওই মৃত্যু পড়ুয়ার দেহ যাতে দ্রুত ডিব্রুগড়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করে রাজ্য, সেই নির্দেশও দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ।
এদিন খড়্গপুর আইআইটির আইনজীবী কে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, -‘ আইআইটি যেখানে আংশিক অভিযুক্ত, সেখানে ময়না তদন্তের রিপোর্ট কি এখনই তারা পেতে পারে?’ প্রতুত্তরে আইআইটির আইনজীবী আদালত কে জানান, -‘ চার্জশিট জমা দেওয়ার আগে তা পেতে পারে না’। বিচারপতি এরপর তাঁর মৌখিক পর্যবেক্ষণে জানান, ‘আইআইটি আংশিক অভিযুক্ত। আপনাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’ আগামী দিনে রাজ্য পুলিশের দক্ষ অফিসারদের নিয়ে এই তদন্তে সিট গঠন করা হতে পারে বলেও এদিন ইঙ্গিত দিয়েছে হাইকোর্ট ।ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ধারায় দোষী প্রমাণিত হলে অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে আইআইটি খড়্গপুরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ফায়জন আহমেদ নামে এক ছাত্রের। হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্নও ছিল। ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। বিষয়টিকে কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দিতে চাইছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। হাইকোর্টে মামলা হয় এনিয়ে। মঙ্গলবার হাইকোর্টও জানিয়েছেন , -‘ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় আইআইটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কাজ করেছে’।
আইআইটি ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাটি আত্মহত্যা না খুন, তা খতিয়ে দেখতে এর আগে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মান্থা। পরে সেই কমিটিও তাদের রিপোর্টে জানায় ফায়জনের মাথার পিছনে ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওই রিপোর্ট পেয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ফায়জনের দেহ আরও এক বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। মঙ্গলবার সেই দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হয় আদালতে। তা দেখেই বিচারপতি মান্থার পুলিশের উদ্দেশে বলেছেন, ”অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার সময় এসে গিয়েছে। এ বার ৩০২ ধারা যুক্ত করার বিষয়ে ভাবতে হবে।” এ বিষয়ে তদন্তকারীদের কয়েক দফা নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার।