০৪ অগাস্ট ২০২৫, সোমবার, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হিজাব বিতর্কঃ সঠিক সময়েই হস্তক্ষেপ করবে আদালতঃ জানাল সুপ্রিম কোর্ট

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শুক্রবার
  • / 100

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কর্ণাটক থেকে শুরু হওয়া হিজাব বিতর্ক ক্রমশই উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের তরফে মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। এর পরেই কর্ণাটকের ছাত্র সংগঠনের তরফে এই মামলার জরুরি শুনানির আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করা হয়। তবে সুপ্রিম কোর্টের তরফে এই আর্জি খারিজ করে জানানো হয়, সঠিক সময়েই আদালতের তরফে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে।

প্রসঙ্গত, হিজাব বিতর্ক মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়েছিল কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিতের একক বেঞ্চে মঙ্গলবার। এই মামলার ফের শুনানি শুরু হয় বুধবার বেলা আড়াইটের সময়। কিন্তু শুনানির এক ঘণ্টার মধ্যেই বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিত মন্তব্য করেন যে, তিনি এই মামলা শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো মনস্থির করেছেন।

আরও পড়ুন: মাহমুদাবাদ মামলা: তদন্তে দেরি নিয়ে সিটকে ভর্ৎসনায় করল সুপ্রিম কোর্ট

কারণ তিনি মনে করেন হিজাব বিতর্কে জড়িত বিভিন্ন প্রশ্ন এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য হাইকোর্টের রায়ের বিশদ বিবেচনা প্রয়োজন, যা করতে পারে বৃহত্তর বেঞ্চ। তাই এই মামলা আমি বৃহত্তর বেঞ্চকে পাঠানোর সুপারিশ করছি। এই সময় অন্যতম আবেদনকারীর আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে বেঞ্চকে অনুরোধ করেন যে, ছাত্রীরা হিজাব পরে কলেজে ঢুকতে পারছে না, তাদের কলেজে ঢোকার অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করা হোক। কারণ তাদের পরীক্ষার আর মাত্র দু’মাস বাকি। তাই এই সময়টুকু তারা হিজাব পরে কলেজে এলে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়বে না। কিন্তু একক বেঞ্চ কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করেনি। বিচারপতি বলেন, অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করার আবেদনও বিবেচনা করবে বৃহত্তর বেঞ্চ, যেখানে মূল মামলার শুনানি হবে।

আরও পড়ুন: ‘উদয়পুর ফাইলস’ মামলা: কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় শীর্ষ আদালত

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রভুলিং নাভাদগি অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করার বিরোধিতা করেন। গতকাল বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী দেবদত্ত কামাত আদালতে তার সওয়াল শেষ করেছিলেন। বুধবার বলতে উঠেছিলেন রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন হাইকোর্ট হিজাব মামলায় বিভিন্ন ধরনের রায় দিয়েছে। কেউ হাদিসের কথা তুলেছেন কেউ কুরআনের। হাদিস হল ইসলাম জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস। মূল উৎস হল কুরআন। আমাদের দেখতে হবে হিজাব সম্পর্কে কুরআনে কী বলা হয়েছে। সেখানে যদি কিছু না বলা থাকে, তাহলে বিষয়টি মিটে গেল। ধর্মীয় পুস্তকে বহু কাজ করার নির্দেশ দেওয়া থাকে। তাই বলে সেগুলি ধর্মের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। তিনজন ছাত্রীর দায়ের করা আবেদনের শুনানি চলছিল কর্নাটক হাইকোর্টের একক বেঞ্চে।

আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনের এসআইআর বন্ধের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা

সেই আবেদনে বলা হয়েছে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের কলেজে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। বুধবার আইনজীবী হেগড়ে বলেন, সরকার কোনও কিছু পরা নিষিদ্ধ করেনি। এটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর। অ্যাডভোকেট জেনারেলের মারফত দায়ের করা সরকারের বয়ানে বলা হয়েছে, তারা কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করছে না, তবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ধর্ম পালনের জায়গা নয়। এই সময় বিচারপতি দীক্ষিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি মামলাটি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর সুপারিশ করছি। তিনি তাঁর রায়ে লেখেন, রেজিস্টারকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এই মামলার সব ফাইল অবিলম্বে পাঠানো হোক প্রধান বিচারপতিকে।

এই মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে আশা করি প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানির জন্য অবিলম্বে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করবেন। বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেন, আবেদনকারীরা চাইলে অন্তর্বর্তী নির্দেশের জন্য আবেদন করতে পারেন প্রস্তাবিত বৃহত্তর বেঞ্চে। এ দিন পুনরায় বিচারপতি দীক্ষিত সাধারণ মানুষ এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানান। বিচারপতি বলেন, যেহেতু এই মামলায় সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ধর্মের দেওয়ানি বিধির প্রশ্ন, তাই এই মামলার শুনানি হওয়া উচিত বৃহত্তর বেঞ্চে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হিজাব বিতর্কঃ সঠিক সময়েই হস্তক্ষেপ করবে আদালতঃ জানাল সুপ্রিম কোর্ট

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২, শুক্রবার

পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ কর্ণাটক থেকে শুরু হওয়া হিজাব বিতর্ক ক্রমশই উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার কর্ণাটকের তরফে মামলাটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। এর পরেই কর্ণাটকের ছাত্র সংগঠনের তরফে এই মামলার জরুরি শুনানির আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করা হয়। তবে সুপ্রিম কোর্টের তরফে এই আর্জি খারিজ করে জানানো হয়, সঠিক সময়েই আদালতের তরফে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হবে।

প্রসঙ্গত, হিজাব বিতর্ক মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়েছিল কর্নাটক হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিতের একক বেঞ্চে মঙ্গলবার। এই মামলার ফের শুনানি শুরু হয় বুধবার বেলা আড়াইটের সময়। কিন্তু শুনানির এক ঘণ্টার মধ্যেই বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিত মন্তব্য করেন যে, তিনি এই মামলা শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানো মনস্থির করেছেন।

আরও পড়ুন: মাহমুদাবাদ মামলা: তদন্তে দেরি নিয়ে সিটকে ভর্ৎসনায় করল সুপ্রিম কোর্ট

কারণ তিনি মনে করেন হিজাব বিতর্কে জড়িত বিভিন্ন প্রশ্ন এবং এই সংক্রান্ত অন্যান্য হাইকোর্টের রায়ের বিশদ বিবেচনা প্রয়োজন, যা করতে পারে বৃহত্তর বেঞ্চ। তাই এই মামলা আমি বৃহত্তর বেঞ্চকে পাঠানোর সুপারিশ করছি। এই সময় অন্যতম আবেদনকারীর আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে বেঞ্চকে অনুরোধ করেন যে, ছাত্রীরা হিজাব পরে কলেজে ঢুকতে পারছে না, তাদের কলেজে ঢোকার অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করা হোক। কারণ তাদের পরীক্ষার আর মাত্র দু’মাস বাকি। তাই এই সময়টুকু তারা হিজাব পরে কলেজে এলে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়বে না। কিন্তু একক বেঞ্চ কোনও অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করেনি। বিচারপতি বলেন, অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করার আবেদনও বিবেচনা করবে বৃহত্তর বেঞ্চ, যেখানে মূল মামলার শুনানি হবে।

আরও পড়ুন: ‘উদয়পুর ফাইলস’ মামলা: কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় শীর্ষ আদালত

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল প্রভুলিং নাভাদগি অন্তর্বর্তী নির্দেশ জারি করার বিরোধিতা করেন। গতকাল বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী দেবদত্ত কামাত আদালতে তার সওয়াল শেষ করেছিলেন। বুধবার বলতে উঠেছিলেন রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল।
তিনি বলেন, বিভিন্ন হাইকোর্ট হিজাব মামলায় বিভিন্ন ধরনের রায় দিয়েছে। কেউ হাদিসের কথা তুলেছেন কেউ কুরআনের। হাদিস হল ইসলাম জ্ঞানের দ্বিতীয় উৎস। মূল উৎস হল কুরআন। আমাদের দেখতে হবে হিজাব সম্পর্কে কুরআনে কী বলা হয়েছে। সেখানে যদি কিছু না বলা থাকে, তাহলে বিষয়টি মিটে গেল। ধর্মীয় পুস্তকে বহু কাজ করার নির্দেশ দেওয়া থাকে। তাই বলে সেগুলি ধর্মের অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। তিনজন ছাত্রীর দায়ের করা আবেদনের শুনানি চলছিল কর্নাটক হাইকোর্টের একক বেঞ্চে।

আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশনের এসআইআর বন্ধের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা

সেই আবেদনে বলা হয়েছে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের কলেজে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ। বুধবার আইনজীবী হেগড়ে বলেন, সরকার কোনও কিছু পরা নিষিদ্ধ করেনি। এটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবেচনার ওপর। অ্যাডভোকেট জেনারেলের মারফত দায়ের করা সরকারের বয়ানে বলা হয়েছে, তারা কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করছে না, তবে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ধর্ম পালনের জায়গা নয়। এই সময় বিচারপতি দীক্ষিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি মামলাটি শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর সুপারিশ করছি। তিনি তাঁর রায়ে লেখেন, রেজিস্টারকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এই মামলার সব ফাইল অবিলম্বে পাঠানো হোক প্রধান বিচারপতিকে।

এই মামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে আশা করি প্রধান বিচারপতি মামলার শুনানির জন্য অবিলম্বে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করবেন। বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেন, আবেদনকারীরা চাইলে অন্তর্বর্তী নির্দেশের জন্য আবেদন করতে পারেন প্রস্তাবিত বৃহত্তর বেঞ্চে। এ দিন পুনরায় বিচারপতি দীক্ষিত সাধারণ মানুষ এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানান। বিচারপতি বলেন, যেহেতু এই মামলায় সাংবিধানিক প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে এবং এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ধর্মের দেওয়ানি বিধির প্রশ্ন, তাই এই মামলার শুনানি হওয়া উচিত বৃহত্তর বেঞ্চে।