০১ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হিজাব শুনানি ৫ম দিন, হিজাব যদি প্রকৃত প্রথা (বোনাফাইড) হয়, তাহলে এটি অনুমোদনযোগ্য, বললেন আইনজীবী রাজীব ধবন

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার
  • / 51

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ কর্নাটক সরকারের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েরা হিজাব পরে যেতে পারবে না, এই নির্দেশ বহাল রেখেছিল কর্নাটক হাইকোর্ট। কর্নাটক হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ছাত্রীরা একাধিক মামলা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাগুলির শুনানি চলছে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে। বুধবার ছিল শুনানির পঞ্চম দিন।

 

আরও পড়ুন: জামার বোতাম খোলা রাখার অপরাধে ৬ মাসের কারাদণ্ড আইনজীবীর

কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মোট ২৩টি আর্জি জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এখন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা সওয়াল করছেন শীর্ষ আদালতে। এদিন বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী রাজীব ধবন বলেন, যদি মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরার প্রথা থেকে থাকে এবং এতে কোনও মিথ্যা নেই, এই প্রথা ‘বোনাফাইড’, তাহলে এটাকে নিষিদ্ধ করা যায় না।

আরও পড়ুন: Iran: নারীদের পোশাকবিধি নিশ্চিত করতে নয়া প্রযুক্তি

 

আরও পড়ুন: হিজাবে ঢাকল Eiffel Tower

এমনকী, ধর্মে এটা অত্যাবশকীয় কি নয়, সে প্রশ্নও উঠতে  পারে না। তিনি বলেন, কর্নাটক সরকারের সেই নির্দেশ (জিও) ভুল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। আইনজীবী ধবন সওয়াল করতে গিয়ে মোটামুটি চারটি বিষয় নিয়ে বলেছেন। (১) পোশাক পরার অধিকার মুক্ত মতামত প্রকাশ করার অঙ্গ এবং এটিকে নিয়ন্ত্রিত করা যায় ‘পাবলিক অর্ডার’-এর স্বার্থে অর্থাৎ শান্তি বজায় রাখার জন্য। (২) ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার, (৩) ধর্মে কোনটা অত্যাবশকীয় প্রথা, (৪) যারা হিজাব পরছে তাদের সঙ্গে ধর্ম কিংবা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যায় না।ধবন বলেন, এটি নিয়মানুবর্তিতা মতো সহজ সরল বিষয় নয়। এই মামলা গুরুত্বপূর্ণ। যখন হিজাবের বিরুদ্ধে আদালত রায় দেবে তখন সংবাদপত্রগুলিতে এটা লেখা হবে না যে, ইউনিফর্মকে বহাল রাখল আদালত।

 

সংবাদপত্রগুলিতে লেখা হবে হিজাবকে বাতিল করল আদালত। তখন বিচারপতি গুপ্তা বলেন, আমরা সংবাদপত্রে কী লিখল তার ধার ধারি না। তখন ধবন বলেন, সংবাদপত্রে সেটাই লেখা হয় যেটি গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ধবন বিজো ইম্যানুয়েল মামলার রায় উদ্ধৃত করে বলেন, যদি যদি কোনও প্রথা সত্যি মানা হয় অর্থাৎ প্রথাটি বোনাফাইড, তাহলে সেই প্রথাপালনের অনুমতি দেওয়া হবে।

 

হাইকোর্ট বলেছিল যেহেতু হিজাব না পরার জন্য কুরআনে কোনও শাস্তির বিধান নেই তাই এটা আবশ্যিক নয়। হাইকোর্টের এই যুক্তি বড় গোলমেলে। বিশ্বে কোটি কোটি মহিলা হিজাব পরছেন, এই সত্যটা হাইকোর্ট উপেক্ষা করে গেল। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ‘পাবলিক প্লেসে’ হিজাব পরার অনুমতি রয়েছে তাহলে ক্লাসরুমে পরা যাবে না কেন? আপনি বলতে পারেন ক্লাসরুমে বোরখা পরার অনুমতি দেওয়া যাবে না। সেটা ঠিক আছে। কারণ তখন আপনি মুখ দেখতে পাবেন না। কিন্তু হিজাব পরায় সমস্যা কী? এরপর ধবন উল্লেখ করেন রতিলাল গান্ধি মামলার।

 

সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যদি কোনও সম্প্রদায়ের কোনও বিষয়ে বিশ্বাস সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলে একজন ধর্মনিরপেক্ষ বিচারপতির দায়িত্ব হল সেই বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দেওয়া। সেই বিশ্বাসের কাটাছেঁড়া বিচারপতি করতে পারেন না। যদি দেখা যায় কর্নাটকে হিজাব পরা এক প্রতিষ্ঠিত প্রথা, তাহলে বাইরের কোনও লোক এটা বলতে পারে না যে এটা প্রথা নয়।

 

তিনি বলেন, কোনও কোনও রাজ্যে যেমন কেরলে হিজাবকে ‘ফর্জ’ (অত্যাবশকীয় কাজ) বলা হয়েছে। এই সময় বিচারপতি গুপ্তা বলেন, ‘ফর্জ’ বলার পেছনে যুক্তি কী? ধবন উত্তরে বলেন, কেরল হাইকোর্ট তাদের একটি রায়ে বলেছিল, হিজাব হল অত্যাবশকীয় প্রথা কারণ এই বিষয়ে কুরআনের পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে এবং হাদিসেও হিজাবকে ‘ফর্জ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

আরও বলা হয়েছে যে, ঢোলা জামা পরতে হবে যাতে শরীরের সব অংশ শুধু চেহারা বাদে ঢাকা পড়ে। এটাই প্রথা তাই মহামান্য বিচারপতিরা এর অনুমতি দেবেন। কর্নাটক সরকারের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার)-তে লেখা ছিল প্রি-ইউনিভার্সিটি ক্লাসে কোনও ইউনিফর্ম নেই। তাই হিজাবের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বর মাসে কী হল যে ছাত্রীদের হেনস্থা করা শুরু হল। তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা শুরু হল। পরে আবার জিওতে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হল কেরল হাইকোর্টের একটি রায়ের ভিত্তিতে।

 

যেখানে কেরল হাইকোর্ট হিজাবের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, কিন্তু সরকার ভুলে গেল যে সেই মামলা ছিল এক কনভেন্ট স্কুলের।  কেন্দ্রীয় সরকারের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিতে হিজাব পরার অনুমতি রয়েছে। ধবন এরপর কেনিয়া এবং ইংল্যান্ডের হাইকোর্টের রায় তুলে ধরেন, যেখানে স্কার্ফ পরার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম দিনের শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন রাজীব ধবন ছাড়া বিবাদীর আইনজীবী আদিত্য সোন্ধি এবং হুজায়ফা আহমাদি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হিজাব শুনানি ৫ম দিন, হিজাব যদি প্রকৃত প্রথা (বোনাফাইড) হয়, তাহলে এটি অনুমোদনযোগ্য, বললেন আইনজীবী রাজীব ধবন

আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুধবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ কর্নাটক সরকারের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েরা হিজাব পরে যেতে পারবে না, এই নির্দেশ বহাল রেখেছিল কর্নাটক হাইকোর্ট। কর্নাটক হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ছাত্রীরা একাধিক মামলা করেছেন সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলাগুলির শুনানি চলছে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে। বুধবার ছিল শুনানির পঞ্চম দিন।

 

আরও পড়ুন: জামার বোতাম খোলা রাখার অপরাধে ৬ মাসের কারাদণ্ড আইনজীবীর

কর্নাটক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মোট ২৩টি আর্জি জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এখন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা সওয়াল করছেন শীর্ষ আদালতে। এদিন বাদীপক্ষের অন্যতম আইনজীবী রাজীব ধবন বলেন, যদি মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরার প্রথা থেকে থাকে এবং এতে কোনও মিথ্যা নেই, এই প্রথা ‘বোনাফাইড’, তাহলে এটাকে নিষিদ্ধ করা যায় না।

আরও পড়ুন: Iran: নারীদের পোশাকবিধি নিশ্চিত করতে নয়া প্রযুক্তি

 

আরও পড়ুন: হিজাবে ঢাকল Eiffel Tower

এমনকী, ধর্মে এটা অত্যাবশকীয় কি নয়, সে প্রশ্নও উঠতে  পারে না। তিনি বলেন, কর্নাটক সরকারের সেই নির্দেশ (জিও) ভুল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। আইনজীবী ধবন সওয়াল করতে গিয়ে মোটামুটি চারটি বিষয় নিয়ে বলেছেন। (১) পোশাক পরার অধিকার মুক্ত মতামত প্রকাশ করার অঙ্গ এবং এটিকে নিয়ন্ত্রিত করা যায় ‘পাবলিক অর্ডার’-এর স্বার্থে অর্থাৎ শান্তি বজায় রাখার জন্য। (২) ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার, (৩) ধর্মে কোনটা অত্যাবশকীয় প্রথা, (৪) যারা হিজাব পরছে তাদের সঙ্গে ধর্ম কিংবা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যায় না।ধবন বলেন, এটি নিয়মানুবর্তিতা মতো সহজ সরল বিষয় নয়। এই মামলা গুরুত্বপূর্ণ। যখন হিজাবের বিরুদ্ধে আদালত রায় দেবে তখন সংবাদপত্রগুলিতে এটা লেখা হবে না যে, ইউনিফর্মকে বহাল রাখল আদালত।

 

সংবাদপত্রগুলিতে লেখা হবে হিজাবকে বাতিল করল আদালত। তখন বিচারপতি গুপ্তা বলেন, আমরা সংবাদপত্রে কী লিখল তার ধার ধারি না। তখন ধবন বলেন, সংবাদপত্রে সেটাই লেখা হয় যেটি গুরুত্বপূর্ণ। এরপর ধবন বিজো ইম্যানুয়েল মামলার রায় উদ্ধৃত করে বলেন, যদি যদি কোনও প্রথা সত্যি মানা হয় অর্থাৎ প্রথাটি বোনাফাইড, তাহলে সেই প্রথাপালনের অনুমতি দেওয়া হবে।

 

হাইকোর্ট বলেছিল যেহেতু হিজাব না পরার জন্য কুরআনে কোনও শাস্তির বিধান নেই তাই এটা আবশ্যিক নয়। হাইকোর্টের এই যুক্তি বড় গোলমেলে। বিশ্বে কোটি কোটি মহিলা হিজাব পরছেন, এই সত্যটা হাইকোর্ট উপেক্ষা করে গেল। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ‘পাবলিক প্লেসে’ হিজাব পরার অনুমতি রয়েছে তাহলে ক্লাসরুমে পরা যাবে না কেন? আপনি বলতে পারেন ক্লাসরুমে বোরখা পরার অনুমতি দেওয়া যাবে না। সেটা ঠিক আছে। কারণ তখন আপনি মুখ দেখতে পাবেন না। কিন্তু হিজাব পরায় সমস্যা কী? এরপর ধবন উল্লেখ করেন রতিলাল গান্ধি মামলার।

 

সেই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল যদি কোনও সম্প্রদায়ের কোনও বিষয়ে বিশ্বাস সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, তাহলে একজন ধর্মনিরপেক্ষ বিচারপতির দায়িত্ব হল সেই বিশ্বাসকে স্বীকৃতি দেওয়া। সেই বিশ্বাসের কাটাছেঁড়া বিচারপতি করতে পারেন না। যদি দেখা যায় কর্নাটকে হিজাব পরা এক প্রতিষ্ঠিত প্রথা, তাহলে বাইরের কোনও লোক এটা বলতে পারে না যে এটা প্রথা নয়।

 

তিনি বলেন, কোনও কোনও রাজ্যে যেমন কেরলে হিজাবকে ‘ফর্জ’ (অত্যাবশকীয় কাজ) বলা হয়েছে। এই সময় বিচারপতি গুপ্তা বলেন, ‘ফর্জ’ বলার পেছনে যুক্তি কী? ধবন উত্তরে বলেন, কেরল হাইকোর্ট তাদের একটি রায়ে বলেছিল, হিজাব হল অত্যাবশকীয় প্রথা কারণ এই বিষয়ে কুরআনের পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে এবং হাদিসেও হিজাবকে ‘ফর্জ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

আরও বলা হয়েছে যে, ঢোলা জামা পরতে হবে যাতে শরীরের সব অংশ শুধু চেহারা বাদে ঢাকা পড়ে। এটাই প্রথা তাই মহামান্য বিচারপতিরা এর অনুমতি দেবেন। কর্নাটক সরকারের জিও (গভর্নমেন্ট অর্ডার)-তে লেখা ছিল প্রি-ইউনিভার্সিটি ক্লাসে কোনও ইউনিফর্ম নেই। তাই হিজাবের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বর মাসে কী হল যে ছাত্রীদের হেনস্থা করা শুরু হল। তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা শুরু হল। পরে আবার জিওতে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হল কেরল হাইকোর্টের একটি রায়ের ভিত্তিতে।

 

যেখানে কেরল হাইকোর্ট হিজাবের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, কিন্তু সরকার ভুলে গেল যে সেই মামলা ছিল এক কনভেন্ট স্কুলের।  কেন্দ্রীয় সরকারের কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলিতে হিজাব পরার অনুমতি রয়েছে। ধবন এরপর কেনিয়া এবং ইংল্যান্ডের হাইকোর্টের রায় তুলে ধরেন, যেখানে স্কার্ফ পরার অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম দিনের শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন রাজীব ধবন ছাড়া বিবাদীর আইনজীবী আদিত্য সোন্ধি এবং হুজায়ফা আহমাদি।