০২ ডিসেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুসলিমদের তুলনায় কন্যাভ্রূণ হত্যায় এগিয়ে হিন্দুরা : পিউ রিসার্চ

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার
  • / 106

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ মুসলিমদের মধ্যে কন্যা ভ্রণ হত্যা কম। তুলনায় হিন্দুদের মধ্যে এই ভ্রণ হত্যা  অনেকটাই বেশি। মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এই তথ্য সামনে এনেছে। গবেষকরা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনফইচস) থেকে এই তথ্য পেয়েছেন। ২০১৯-২০২০ সালের এনফইচস- এর তৃতীয় রাউন্ডের কেন্দ্রীয় সার্ভেতে এই তথ্য সামনে এসেছে। মার্কিন সংস্থা পিউ তথ্য সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে থেকে।

 

আরও পড়ুন: ‘মুসলমানরা শুধু তাদের ভোটব্যাঙ্ক’: মহাজোটকে আক্রমণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ানের

পিউ সেন্টার ওয়াশিংটনের একটি খ্যাতনামা অলাভজনক সমীক্ষা সংস্থা। জনসংখ্যা, জনঘনত্ব সহ নানা সামাজিক ও আর্থসামাজিক ইস্যু নিয়ে গবেষণা করে সংস্থাটি। পিউয়ের বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০০০ থেকে ২০১৯  সাল পর্যন্ত কন্যা শিশুহত্যার ফলে ভারত অন্তত ৯০ লক্ষ ভবিষ্যত কন্যাকে হারিয়েছে। সংখ্যার বিচারের যা উত্তরাখণ্ডের সমগ্র জনসংখ্যার তুলনায় সামান্য কম। যদিও জন্মের আগে লিঙ্গনির্ধারণ দেশে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। দেশের সংবিধানে তা নিয়ে কঠোর আইনও রয়েছে। তা সত্ত্বেও আইনের ফাঁক গলে এ দেশে হামেশাই চলে সেই কাজ। প্রশাসন কার্যত নির্বিকার।

আরও পড়ুন: আমেরিকায় ইসরাইল-বিরোধী জনমত বাড়ছে: পিউ রিসার্চ

 

আরও পড়ুন: Gaza hospital-এ বোমা মেরে ৫ সাংবাদিককে খুন ইসরাইলের

তাহলে কি বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও আসলে কেবলই নীতিমূলক স্লোগান। প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেন্দ্রের সমীক্ষা বুঝিয়ে দিল এই স্লোগানের কোনো প্র্রভাব জনমনে পড়েনি। এমনিতেই মুসলিমদের অশিক্ষা ও তাদের অপরাধ প্রবণতার ‘দাস্তান’ শোনানো গেরুয়া শিবিরের বিশেষ পছন্দের বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষা দেখে তেমন গপ্পো শোনানোরও মুখ নেই তাদের। কেন্দ্রের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কন্যাভ্রণ হত্যার নিরিখে এদেশে এগিয়ে হিন্দুরা।

 

ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭৯.৮ শতাংশ হিন্দু। তার মধ্যে ৮৬.৭ শতাংশ কন্যাসন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না। সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৭৮ লক্ষ কন্যাভ্রুনের মৃত্যু হয় হিন্দু পরিবার থেকে। শিখ পরিবার থেকে মৃত্যু হয় অন্তত ৪.৪ লক্ষ কন্যা ভ্রুনের। মুসলিম সমাজে ভ্রণহত্যার ঘটনা ৫.৯ লক্ষের কাছাকাছি।

 

কিছুদিন আগেই নিজের রাজ্যে নারী-পুরুষ জন্মের অনুপাতে ভারসাম্য আনতে শিবের সঙ্গে সেলফি তোলার নিদান দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের এক মন্ত্রী। সে নিয়ে বিস্তর হইচইও হয়েছিল। সরকারি তরফে কন্যা বাঁচাতে হাজার রকম প্রকল্প ও উদ্যোগ সত্ত্বেও যে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আদতে চাই তৃণমূল স্তর থেকে  সচেতনতা। তা না হলে কেবল বাতাসে মিলিয়ে যাবে বেটি বাঁচাও স্লোগান। কাজের কাজ কিছু হবে না।

 

কন্যাসন্তান হত্যা ইসলাম বিরুদ্ধ। পবিত্র কুরআনে এর উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হল, কন্যাসন্তান জন্ম নিলে আনন্দ প্রকাশ করা। কেননা কন্যা জন্মের সংবাদকে পবিত্র কুরআনে  ‘সুসংবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।কন্যাসন্তান জন্মানোয় নিজেকে ছোট, অপমানিত মনে করা আসলে জাহেলিয়াত অর্থাৎ অজ্ঞতা যুগের মানসিকতা। কন্যাসন্তানকে অপছন্দ করা খাঁটি মুমিনের পরিচয় নয়। কন্যাসন্তান অশুভ বা অকল্যাণকর নয়, বরং কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়া সৌভাগ্যের নিদর্শন। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে জাহেলিয়াত যুগে যার বিরুদ্ধে ইসলাম লড়াই করেছে আজ সেই সমস্যা নতুন করে চিন্তায় ফেলছে গোটা দেশকে। কেন্দ্রীয় শাসক দলের কাছে অস্বস্তির কথা হল, শিখ, খিস্টান কিংবা মুসলিম নয়, এই ভ্রূণ হত্যায় এগিয়ে দেশের সংখ্যাগুরুরা।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মুসলিমদের তুলনায় কন্যাভ্রূণ হত্যায় এগিয়ে হিন্দুরা : পিউ রিসার্চ

আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার

পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ মুসলিমদের মধ্যে কন্যা ভ্রণ হত্যা কম। তুলনায় হিন্দুদের মধ্যে এই ভ্রণ হত্যা  অনেকটাই বেশি। মার্কিন গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার এই তথ্য সামনে এনেছে। গবেষকরা ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনফইচস) থেকে এই তথ্য পেয়েছেন। ২০১৯-২০২০ সালের এনফইচস- এর তৃতীয় রাউন্ডের কেন্দ্রীয় সার্ভেতে এই তথ্য সামনে এসেছে। মার্কিন সংস্থা পিউ তথ্য সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে থেকে।

 

আরও পড়ুন: ‘মুসলমানরা শুধু তাদের ভোটব্যাঙ্ক’: মহাজোটকে আক্রমণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ানের

পিউ সেন্টার ওয়াশিংটনের একটি খ্যাতনামা অলাভজনক সমীক্ষা সংস্থা। জনসংখ্যা, জনঘনত্ব সহ নানা সামাজিক ও আর্থসামাজিক ইস্যু নিয়ে গবেষণা করে সংস্থাটি। পিউয়ের বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০০০ থেকে ২০১৯  সাল পর্যন্ত কন্যা শিশুহত্যার ফলে ভারত অন্তত ৯০ লক্ষ ভবিষ্যত কন্যাকে হারিয়েছে। সংখ্যার বিচারের যা উত্তরাখণ্ডের সমগ্র জনসংখ্যার তুলনায় সামান্য কম। যদিও জন্মের আগে লিঙ্গনির্ধারণ দেশে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। দেশের সংবিধানে তা নিয়ে কঠোর আইনও রয়েছে। তা সত্ত্বেও আইনের ফাঁক গলে এ দেশে হামেশাই চলে সেই কাজ। প্রশাসন কার্যত নির্বিকার।

আরও পড়ুন: আমেরিকায় ইসরাইল-বিরোধী জনমত বাড়ছে: পিউ রিসার্চ

 

আরও পড়ুন: Gaza hospital-এ বোমা মেরে ৫ সাংবাদিককে খুন ইসরাইলের

তাহলে কি বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও আসলে কেবলই নীতিমূলক স্লোগান। প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেন্দ্রের সমীক্ষা বুঝিয়ে দিল এই স্লোগানের কোনো প্র্রভাব জনমনে পড়েনি। এমনিতেই মুসলিমদের অশিক্ষা ও তাদের অপরাধ প্রবণতার ‘দাস্তান’ শোনানো গেরুয়া শিবিরের বিশেষ পছন্দের বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সমীক্ষা দেখে তেমন গপ্পো শোনানোরও মুখ নেই তাদের। কেন্দ্রের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কন্যাভ্রণ হত্যার নিরিখে এদেশে এগিয়ে হিন্দুরা।

 

ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭৯.৮ শতাংশ হিন্দু। তার মধ্যে ৮৬.৭ শতাংশ কন্যাসন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায় না। সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৭৮ লক্ষ কন্যাভ্রুনের মৃত্যু হয় হিন্দু পরিবার থেকে। শিখ পরিবার থেকে মৃত্যু হয় অন্তত ৪.৪ লক্ষ কন্যা ভ্রুনের। মুসলিম সমাজে ভ্রণহত্যার ঘটনা ৫.৯ লক্ষের কাছাকাছি।

 

কিছুদিন আগেই নিজের রাজ্যে নারী-পুরুষ জন্মের অনুপাতে ভারসাম্য আনতে শিবের সঙ্গে সেলফি তোলার নিদান দিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের এক মন্ত্রী। সে নিয়ে বিস্তর হইচইও হয়েছিল। সরকারি তরফে কন্যা বাঁচাতে হাজার রকম প্রকল্প ও উদ্যোগ সত্ত্বেও যে দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ, তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আদতে চাই তৃণমূল স্তর থেকে  সচেতনতা। তা না হলে কেবল বাতাসে মিলিয়ে যাবে বেটি বাঁচাও স্লোগান। কাজের কাজ কিছু হবে না।

 

কন্যাসন্তান হত্যা ইসলাম বিরুদ্ধ। পবিত্র কুরআনে এর উল্লেখ রয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হল, কন্যাসন্তান জন্ম নিলে আনন্দ প্রকাশ করা। কেননা কন্যা জন্মের সংবাদকে পবিত্র কুরআনে  ‘সুসংবাদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।কন্যাসন্তান জন্মানোয় নিজেকে ছোট, অপমানিত মনে করা আসলে জাহেলিয়াত অর্থাৎ অজ্ঞতা যুগের মানসিকতা। কন্যাসন্তানকে অপছন্দ করা খাঁটি মুমিনের পরিচয় নয়। কন্যাসন্তান অশুভ বা অকল্যাণকর নয়, বরং কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়া সৌভাগ্যের নিদর্শন। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে জাহেলিয়াত যুগে যার বিরুদ্ধে ইসলাম লড়াই করেছে আজ সেই সমস্যা নতুন করে চিন্তায় ফেলছে গোটা দেশকে। কেন্দ্রীয় শাসক দলের কাছে অস্বস্তির কথা হল, শিখ, খিস্টান কিংবা মুসলিম নয়, এই ভ্রূণ হত্যায় এগিয়ে দেশের সংখ্যাগুরুরা।