অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়া কিভাবে নিয়োগ? শিক্ষকদের তলব হাইকোর্টের

- আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, সোমবার
- / 17
পারিজাত মোল্লাঃ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে উঠে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বিষয়ক মামলা। অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়া নিয়োগ কীভাবে?
গত ২০১৬ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি মামলায় প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের। মামলায় অভিযোগ -‘ গত ২০১৬ সালে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে’। এর আগে এই বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য চেয়ে পাঠিয়েছিল কলকাতার হাইকোর্ট।
সোমবার পর্ষদের দেওয়া হলফনামা দেখে বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় এজলাসে জানান, ‘ গত ২০১৬ সালের প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি তা স্পষ্ট!
প্রসঙ্গত , নিয়োগের আগে ইন্টারভিউতে অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তার জন্য আলাদা নম্বর রয়েছে। তবে গত ২০১৬ সালের প্রাথমিকে নিয়োগের আগে সেই পরীক্ষা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী। সোমবার এই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের কয়েকটি জেলা থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষক কে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই তালিকায় রয়েছে হুগলি, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ।
এদিনকার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, অ্যাপটিটিউড পরীক্ষা কী? সেই সম্পর্কে পর্ষদের তরফে একাধিক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের অ্যাপটিটিউড পরীক্ষার নামে তিন-চারটে প্রশ্ন করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড পরীক্ষাকে এক করে দেখানো হয়েছে। অথচ দু’টো পরীক্ষায় আলাদা নম্বর রয়েছে’।
২০১৬ সালের যাঁরা অ্যাপটিটিউড পরীক্ষা নিয়েছেন, প্রতি জেলা থেকে এমন ১০ জন শিক্ষককে আদালতে ডেকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। তাঁরা যাতে আদালতে আসেন, তা নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট জেলার স্কুল পরিদর্শকেরা।
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের কলকাতা হাইকোর্টে আসতে হবে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রাথমিকে ৪২ হাজার ৫০০ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছে।
অভিযোগ, অনেক জেলাতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়নি’। এই নিয়োগের প্যানেল নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছিল। পাশাপাশি, গোটা প্যানেল বাতিল করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
কয়েক জন পরীক্ষার্থী জানুয়ারি মাসে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সেই মামলার শুনানি ছিল সোমবার। এদিন বিচারপতি পর্ষদ সভাপতিকে জানাতে বলেছিল, আদৌ অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়েছিল কি না?
পর্ষদের কাছে হলফনামা তলব করা হয়েছিল। সোমবার আদালতে হলফনামা জমা দেয় পর্ষদ। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, -‘ অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়া কীভাবে নিয়োগ? খুব অল্প সময়ে কীভাবে একসঙ্গে ইন্টারভিউ এবং অ্যাপটিটিউড টেস্ট হয়?
বিচারপতির পর্ষবেক্ষণ, -‘ পর্ষদের হলফনামাতেও অ্যাপটিটিউড টেস্টের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও ইন্টারভিউ নেওয়াই হয়নি’।
সোমবার পর্ষদ ২০১৬ সালে প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ইন্টারভিউ নেওয়া শিক্ষকদের নামের তালিকা পেশ করেছে।সেই তালিকা থেকে প্রথম পর্যায়ে, হুগলি, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ ইন্টারভিউ নেওয়া শিক্ষকদের তলব করেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর দুটোর মধ্যে তাঁদের আদালতে হাজিরা দিতে হবে। প্রত্যেককে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্ট নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় আদালত।বিচারপতি এও জানিয়ে দেন, দূরের জেলার ওই শিক্ষকদের যাতায়াত খরচ বাবদ দু’হাজার টাকা করে দেবে পর্ষদ। কাছের জেলার জন্য যাতায়াত খরচ হবে ৫০০ টাকা।প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে ইন্টারভিউয়ের অংশ হিসেবে অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়ে থাকে। এর জন্য আলাদা নম্বরও রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এটি নেওয়া বাধ্যতামূলক। শিক্ষকরা বাচ্চাদের কীভাবে পড়াবেন, সেটাই পরীক্ষকরা আসলে দেখে নিতে চান। সেক্ষেত্রে ইন্টারভিউ হলেই রাখা থাকে চক, পেন্সিল, ব্ল্যাকবোর্ড। অভিযোগ, ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অ্যাপটিটিউড টেস্ট ছাড়াই নিয়োগ হয়েছে।