১৩ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘আমি মুহাম্মদ সা. কে ভালোবাসি’ ক্যাম্পেন: ৪ হাজারের বেশি মুসলমানের নামে মামলা

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার
  • / 165

গ্রেফতার ২০০ জন, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টে বিস্ফোরক দাবি

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ‘আই লাভ মুহাম্মদ সা.’ ক্যাম্পেনে “ভারতজুড়ে মোট ৪,৫০৫ জন মুসলমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৯ জনই উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে,”— শুক্রবার (১০ অক্টোবর) প্রকাশিত এপিসিআর অর্থাৎ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস-এর এক প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

এই ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, বেরিলিতে মুসলিম আলেম মাওলানা তৌকির রাজা খান নেতৃত্বাধীন “আই লাভ মুহাম্মদ” শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পর পুলিশ ও প্রশাসন অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং একপাক্ষিকভাবে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত APCR-এর দল জানায়, শান্তিপূর্ণ ওই বিক্ষোভে লাঠিচার্জ, গণগ্রেফতার ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, যা ছিল সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই সমাবেশে কোনও স্লোগান, ভাঙচুর বা সহিংসতা হয়নি। এর আগেও অনুরূপ বিক্ষোভে কোনো সমস্যা হয়নি, কিন্তু এবার পুলিশ হঠাৎই লাঠিচার্জ শুরু করে এবং বহুজনকে আটক করে।ঘটনার পর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় প্যারামিলিটারি ও অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় প্রভাব পড়ে ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভের দু’দিন পর, ২৯ সেপ্টেম্বর, প্রশাসন মাজার পেহলওয়ান মার্কেটের ৩২টি দোকান সিল করে দেয়, যা একটি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি (নং ৩৮৩)। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় কোনও নোটিশ বা নথিপত্র ছাড়াই, এমনকি ওয়াক্‌ফ ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করেই।বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা নিয়মিতভাবে ভাড়া প্রদান করেন, অথচ প্রশাসনের এই অভিযান ছিল প্রতিশোধমূলক ও ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে।

আইনজীবীরা জানান, ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বেরিলিতে অন্তত ৮৯ জন মুসলমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং আরও অনেককে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরকে কোনও নোটিশ বা এফআইআর কপি দেওয়া হয়নি, এমনকি অনেকের অবস্থানও অজানা।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, আটক হওয়া কয়েকজনের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্করাও থাকতে পারে, কিন্তু তাঁদের অবস্থান বা আইনি সহায়তা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম বলেছে, আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। প্রশাসন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জবাবে আগ্রাসী ও অপ্রয়োজনীয় শক্তি ব্যবহার করেছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়, সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল “সমষ্টিগত শাস্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতিত্বের নিদর্শন”, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের বৈষম্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে।

রিপোর্টে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (NHRC)-এর কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত দাবি করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বেআইনি গ্রেপ্তারে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।এছাড়া রিপোর্টে গ্রেপ্তার সকল ব্যক্তির মুক্তি, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান, এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে মুসলমানদের ধর্মীয় অভিব্যক্তিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা বন্ধ হয়।

উল্লেখ্য, “আই লাভ মুহাম্মদ” কর্মসূচিটি ছিল মাওলানা তৌকির রাজা খানের নেতৃত্বে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের একটি অংশ। এর পরই ১০টি এফআইআর দায়ের করা হয় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কয়েকজন, যেমন ড. নাফিস খান (স্থানীয় ওয়াক্‌ফ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য) গ্রেপ্তার হন।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘আমি মুহাম্মদ সা. কে ভালোবাসি’ ক্যাম্পেন: ৪ হাজারের বেশি মুসলমানের নামে মামলা

আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার

গ্রেফতার ২০০ জন, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টে বিস্ফোরক দাবি

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ‘আই লাভ মুহাম্মদ সা.’ ক্যাম্পেনে “ভারতজুড়ে মোট ৪,৫০৫ জন মুসলমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৯ জনই উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে,”— শুক্রবার (১০ অক্টোবর) প্রকাশিত এপিসিআর অর্থাৎ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস-এর এক প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

এই ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, বেরিলিতে মুসলিম আলেম মাওলানা তৌকির রাজা খান নেতৃত্বাধীন “আই লাভ মুহাম্মদ” শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পর পুলিশ ও প্রশাসন অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং একপাক্ষিকভাবে মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত APCR-এর দল জানায়, শান্তিপূর্ণ ওই বিক্ষোভে লাঠিচার্জ, গণগ্রেফতার ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, যা ছিল সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত ও স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এই সমাবেশে কোনও স্লোগান, ভাঙচুর বা সহিংসতা হয়নি। এর আগেও অনুরূপ বিক্ষোভে কোনো সমস্যা হয়নি, কিন্তু এবার পুলিশ হঠাৎই লাঠিচার্জ শুরু করে এবং বহুজনকে আটক করে।ঘটনার পর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় প্যারামিলিটারি ও অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ রাখায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় প্রভাব পড়ে ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভের দু’দিন পর, ২৯ সেপ্টেম্বর, প্রশাসন মাজার পেহলওয়ান মার্কেটের ৩২টি দোকান সিল করে দেয়, যা একটি ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি (নং ৩৮৩)। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় কোনও নোটিশ বা নথিপত্র ছাড়াই, এমনকি ওয়াক্‌ফ ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করেই।বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা নিয়মিতভাবে ভাড়া প্রদান করেন, অথচ প্রশাসনের এই অভিযান ছিল প্রতিশোধমূলক ও ভয় প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে।

আইনজীবীরা জানান, ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বেরিলিতে অন্তত ৮৯ জন মুসলমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এবং আরও অনেককে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরকে কোনও নোটিশ বা এফআইআর কপি দেওয়া হয়নি, এমনকি অনেকের অবস্থানও অজানা।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, আটক হওয়া কয়েকজনের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্করাও থাকতে পারে, কিন্তু তাঁদের অবস্থান বা আইনি সহায়তা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম বলেছে, আইন ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। প্রশাসন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জবাবে আগ্রাসী ও অপ্রয়োজনীয় শক্তি ব্যবহার করেছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়, সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল “সমষ্টিগত শাস্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পক্ষপাতিত্বের নিদর্শন”, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের বৈষম্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে।

রিপোর্টে ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন (NHRC)-এর কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত দাবি করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও বেআইনি গ্রেপ্তারে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।এছাড়া রিপোর্টে গ্রেপ্তার সকল ব্যক্তির মুক্তি, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান, এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে মুসলমানদের ধর্মীয় অভিব্যক্তিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা বন্ধ হয়।

উল্লেখ্য, “আই লাভ মুহাম্মদ” কর্মসূচিটি ছিল মাওলানা তৌকির রাজা খানের নেতৃত্বে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের একটি অংশ। এর পরই ১০টি এফআইআর দায়ের করা হয় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কয়েকজন, যেমন ড. নাফিস খান (স্থানীয় ওয়াক্‌ফ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য) গ্রেপ্তার হন।