২৬ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিউ ইয়র্কে মুসলিম পরিচয় রক্ষার অঙ্গীকার: মসজিদের বাইরে জোহরান মামদানির আবেগঘন বক্তব্য

মোক্তার হোসেন মন্ডল
  • আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার
  • / 81

 

নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি সাম্প্রতিক ইসলামোফোবিক আক্রমণের মুখে নিজের মুসলিম পরিচয় রক্ষার শপথ নিয়েছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ব্রঙ্কসের একটি মসজিদের বাইরে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তব্যে মামদানি বলেন, “আমি আর ছায়ার আড়ালে আমার পরিচয় খুঁজব না, আমি নিজেকে আলোতেই খুঁজে পাব।”

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রাক্তন গভর্নর ও রিপাবলিকান মেয়রপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমোসহ একাধিক বিরোধী নেতা মামদানির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ইসলামফোবিক মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ এমনও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি নাকি আরেকটি ‘৯/১১ হামলা’ ঘটলে উল্লাস করবেন। এই মন্তব্যে কুওমো প্রকাশ্যে হাসতেও দেখা যায়। এমনকি পরে সামাজিক মাধ্যমে কুওমো মামদানিকে ‘নিজ হাতে ভাত খাওয়ার’ জন্য কটাক্ষ করেন, যদিও তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি পোস্টটি মুছে ফেলেন।

এই প্রেক্ষাপটে মসজিদের বাইরে বক্তব্য দিতে গিয়ে মামদানি বলেন, “আমরা মুসলিমরা বহুদিন ধরে শিখেছি—আমাদের বিশ্বাস নিজের মধ্যে রাখো, মাথা নিচু করে থাকো, বেশি কথা বলো না। কিন্তু আমি আজ ঘোষণা করছি—আমি আর চুপ থাকব না। আমি আমার ইসলামী পরিচয়কে আরও গভীরভাবে গ্রহণ করব।”

তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, যদি আমি ভালো আচরণ করি, অথবা বর্ণবাদী আক্রমণের মুখে চুপ থাকি, তাহলে হয়তো মানুষ আমাকে আমার ধর্মের চেয়ে বেশি কিছু হিসেবে দেখবে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। যতই আমি পরিবর্তন আনি না কেন, তাদের জন্য তা কখনই যথেষ্ট হবে না।”

বক্তব্যে মামদানি তার পরিবারের অতীত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর তার খালা পাতাল রেলে বর্ণবাদী হামলার শিকার হন। সেই ঘটনার পর থেকে তিনি ধর্মীয় পোশাক পরে বের হতে ভয় পেতেন। মামদানি বলেন, “এই শহরে আমরা মুসলিমরা বারবার অন্যদের মতো আচরণের স্বপ্ন দেখি, কিন্তু আমাদের সবসময় বলা হয়—কম চাও, কম আশা করো, তাতেই খুশি থাকো।”

এপি জানায়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করায় মামদানি কট্টর ইহুদি ও রক্ষণশীল মহলের রোষের মুখে পড়েছেন। বিরোধীরা তাকে “ইসরায়েলবিরোধী” আখ্যা দিয়ে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

তবে মামদানি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমার বিশ্বাস, আমার খাদ্যাভ্যাস, কিংবা আমার নাম—আমি এগুলো বদলাব না। আমি মুসলিম, এবং আমি গর্বিত। আমি আমার বিশ্বাসের শক্তিতে নিউ ইয়র্ক সিটিকে আরও ন্যায়, সহানুভূতি ও সমতার শহর হিসেবে গড়ে তুলব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির এই বক্তব্য শুধু মুসলিম ভোটারদের নয়, বরং বৈষম্য ও ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করা নিউ ইয়র্কবাসীর এক বৃহৎ অংশের মন জয় করেছে। অনেকেই বলছেন, এই নির্বাচন শুধুমাত্র একজন মেয়রপ্রার্থীর প্রচারণা নয়—এটি আসলে ধর্মীয় সহাবস্থান ও মানবতার পক্ষে এক নৈতিক অবস্থান।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

নিউ ইয়র্কে মুসলিম পরিচয় রক্ষার অঙ্গীকার: মসজিদের বাইরে জোহরান মামদানির আবেগঘন বক্তব্য

আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার

 

নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি সাম্প্রতিক ইসলামোফোবিক আক্রমণের মুখে নিজের মুসলিম পরিচয় রক্ষার শপথ নিয়েছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ব্রঙ্কসের একটি মসজিদের বাইরে মুসলিম সম্প্রদায়ের উদ্দেশে আবেগঘন বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তব্যে মামদানি বলেন, “আমি আর ছায়ার আড়ালে আমার পরিচয় খুঁজব না, আমি নিজেকে আলোতেই খুঁজে পাব।”

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রাক্তন গভর্নর ও রিপাবলিকান মেয়রপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুওমোসহ একাধিক বিরোধী নেতা মামদানির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ইসলামফোবিক মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ এমনও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি নাকি আরেকটি ‘৯/১১ হামলা’ ঘটলে উল্লাস করবেন। এই মন্তব্যে কুওমো প্রকাশ্যে হাসতেও দেখা যায়। এমনকি পরে সামাজিক মাধ্যমে কুওমো মামদানিকে ‘নিজ হাতে ভাত খাওয়ার’ জন্য কটাক্ষ করেন, যদিও তীব্র সমালোচনার মুখে তিনি পোস্টটি মুছে ফেলেন।

এই প্রেক্ষাপটে মসজিদের বাইরে বক্তব্য দিতে গিয়ে মামদানি বলেন, “আমরা মুসলিমরা বহুদিন ধরে শিখেছি—আমাদের বিশ্বাস নিজের মধ্যে রাখো, মাথা নিচু করে থাকো, বেশি কথা বলো না। কিন্তু আমি আজ ঘোষণা করছি—আমি আর চুপ থাকব না। আমি আমার ইসলামী পরিচয়কে আরও গভীরভাবে গ্রহণ করব।”

তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম, যদি আমি ভালো আচরণ করি, অথবা বর্ণবাদী আক্রমণের মুখে চুপ থাকি, তাহলে হয়তো মানুষ আমাকে আমার ধর্মের চেয়ে বেশি কিছু হিসেবে দেখবে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। যতই আমি পরিবর্তন আনি না কেন, তাদের জন্য তা কখনই যথেষ্ট হবে না।”

বক্তব্যে মামদানি তার পরিবারের অতীত অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর তার খালা পাতাল রেলে বর্ণবাদী হামলার শিকার হন। সেই ঘটনার পর থেকে তিনি ধর্মীয় পোশাক পরে বের হতে ভয় পেতেন। মামদানি বলেন, “এই শহরে আমরা মুসলিমরা বারবার অন্যদের মতো আচরণের স্বপ্ন দেখি, কিন্তু আমাদের সবসময় বলা হয়—কম চাও, কম আশা করো, তাতেই খুশি থাকো।”

এপি জানায়, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করায় মামদানি কট্টর ইহুদি ও রক্ষণশীল মহলের রোষের মুখে পড়েছেন। বিরোধীরা তাকে “ইসরায়েলবিরোধী” আখ্যা দিয়ে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

তবে মামদানি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমার বিশ্বাস, আমার খাদ্যাভ্যাস, কিংবা আমার নাম—আমি এগুলো বদলাব না। আমি মুসলিম, এবং আমি গর্বিত। আমি আমার বিশ্বাসের শক্তিতে নিউ ইয়র্ক সিটিকে আরও ন্যায়, সহানুভূতি ও সমতার শহর হিসেবে গড়ে তুলব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির এই বক্তব্য শুধু মুসলিম ভোটারদের নয়, বরং বৈষম্য ও ঘৃণার বিরুদ্ধে লড়াই করা নিউ ইয়র্কবাসীর এক বৃহৎ অংশের মন জয় করেছে। অনেকেই বলছেন, এই নির্বাচন শুধুমাত্র একজন মেয়রপ্রার্থীর প্রচারণা নয়—এটি আসলে ধর্মীয় সহাবস্থান ও মানবতার পক্ষে এক নৈতিক অবস্থান।