‘ইফতার পার্টি’, না ফ্যাশেন শো!

- আপডেট : ৫ মে ২০২২, বৃহস্পতিবার
- / 22
আহমদ হাসান ইমরান: এবারের মতো শেষ হল প্রিয় মাহে রমযান। আমরা এখন একবার ফিরে তাকাতে পারি মাহে রমযানে আল্লাহ্তায়লা আমাদের কি সুযোগ দিয়েছিলেন এবং আমরা তার কতটা আত্মস্থ করতে পেরেছি। সকলেই জানেন, রমযান মাস হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার মাস। রমযান হচ্ছে শরীর ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার মাস। এই মাস হল ইবাদতের মাস। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা ভিক্ষার মাস। এই মাসে রোযাদাররা সবরকম মিথ্যা-অনাচার-অশ্লীলতা-ব্যাভিচার থেকে দূরে থাকার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কোনও ধরনের রিয়া বা প্রদর্শনকামিতা থাকলে রোযার চেতনা তার থেকে বহু দূরে। রিয়াকারী সেই রোযাদাররা রোযার সওয়াব ও পুরস্কার তো পাবেই না বরং তারা হবে বিপুল গুনাহের হকদার। রোযায় সাফল্যের শর্ত হচ্ছে খোদা-ভীরু বিশুদ্ধ অন্তর এবং আল্লাহ্তে নিবেদিত মন-মস্তিষ্ক-হৃদয়। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, রোযাকে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে এবং নিজেদের শান-শওকত ও সোহরতের মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহার করছেন। অবশ্য তাঁদের নামগুলি মুসলিম। আর এই নাম থেকেই তাঁরা ফায়দা নিচ্ছেন।
সম্প্রতি এমনই একটি ‘ইফতার পার্টি’ সারা দেশের মিডিয়াতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। এই ‘ইফতার পার্টি’ ইতিমধ্যে ‘বাবা সিদ্দিক ইফতার আসর’ বলে ‘খ্যাতি’ পেয়েছে। কারণ এই ‘ইফতার পার্টি’তে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল বলিউডের সমস্ত সেরা নায়িকা ও মডেলদের। এরা মালদ্বীপ, সুইৎজারল্যান্ড সমুদ্রে আগুন ধরিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের উত্তাপ বৃদ্ধি করে ‘খ্যাত’ হয়েছেন। এই ‘ইফতার পার্টিতে’ ছিলেন পুরুষ হিরোরাও। তবে তাঁরা খুব একটা লাইমলাইট পাননি।
এইসব নায়িকা ও মডেলদের অনেকেই তাঁদের লাস্যময়ী হ্রস্ব পোশাকে টিভি ক্যামেরাম্যান ও ফটোগ্রাফারদের যেসব পোজ দিয়েছেন, তা ফ্যাশন জগতে রীতিমতো ঝড় তুলেছে। এই পোজ দেওয়ার জন্য দাওয়াতকারী বাবা সিদ্দিক ছোট্ট একটি বিশেষ মঞ্চের ব্যবস্থাও করেছিলেন। এসেছিলেন শিল্পা শেঠী এবং রাজ কুন্দ্রাও। এই দু’জনের নামই ভারতীয় নায়িকা ও মডেলদের টাকার বিনিময়ে পর্ন সিনেমাতে অভিনয় করানোর দায়ে চিহ্নিত হয়েছিল। রাজ কুন্দ্রাকে তো জেলের ভাতও খেতে হয়। তবে হয়তো এদেরও একটু শরম আছে। পোজ দেওয়ার জন্য তাঁরা দু’জনে একসঙ্গে ওই ছোট্ট মঞ্চে আসেননি।
এখন প্রশ্ন, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন বিধায়ক বাবা সিদ্দিক সাহেব এই ‘পার্টির’ আয়োজনের উদ্দেশে রমযান মাসকেই কেন বেছে নিলেন! আর এই ‘রমরমা পার্টির’ সঙ্গে ‘ইফতার’কে কেন সংযুক্ত করলেন? বাবা সিদ্দিক ও তাঁর চ্যালা-চামুন্ডারা এই ধরনের উদ্দাম পার্টির আয়োজন করতেই পারেন। তাঁদের অঢেল অর্থ রয়েছে। নিজের বৈভব ও ক্ষমতা দেখানোর জন্য এই ধরনের মানব-মানবীদের নিয়ে পার্টিতো তাঁরা করবেনই। কেউ তাদের মানা করবে না। আর মানা করলেও তা শোনার কোনও দায় তাদের নেই। ভারতবর্ষে রয়েছে অবাধ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা।
কিন্তু পবিত্র রমযান মাসের চেতনা ও খোদা-ভীরুতাকে এভাবে লাঞ্ছিত করার অধিকার সিদ্দিক বাবাদের থাকতে পারে না। এই ধরনের টাকাওয়ালা মুসলমানদের ইসলামের নামে যা ইচ্ছে তা করার স্বাধীনতা কিন্তু নেই। তাদের কোনও অধিকার নেই, ইসলাম ও পবিত্র রমযান মাসকে এভাবে হেয় করার। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, ওই ‘পার্টি’তে হাজির হয়েছিলেন ‘বিগ বস’ খ্যাত অভিনেত্রী সানা খান এবং তাঁর স্বামী মুফতি আনাস।
সানা খান ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ইসলামকে ভালবেসে এবার থেকে বলিউড ও অবাধ উদ্দাম জীবন ত্যাগ করলেন। সানা খান পরিপূর্ণ হিজাব পরিধানও আরম্ভ করেছেন। ইদানিং তিনি আবার বিভিন্ন ইসলামী মাহফিলে বয়ানও রাখতে শুরু করেছেন। অবশ্য অনেকেরই বক্তব্য, অর্থের বিনিময়েই তাদের এই সুরাট-হায়দরাবাদ-মুম্বই-দুবাইতে ‘ইসলামী বক্তব্য’ রাখা। আর ইউটিউবে সানা খানতো রীতিমতো ইসলামী বক্তব্য রেখে কয়েক লক্ষ ফলোয়ার জোগাড় করে ফেলেছেন।
বাবা সিদ্দিক ‘ইফতার পার্টি’তে সানা খান এবং মুফতি আনাসও সবার সঙ্গে ভরপুর হিস্স্যা নেন। পরিচিত পুরনো নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে সানা মেতে ওঠেন, পোজ দেন। অবশ্য তাঁর অঙ্গে একটা হিজাব শোভা পাচ্ছিল। সানার সবথেকে বড় কৃতিত্ব তিনি তাঁর স্বামী মুফতি আনাসেরও ‘মুফতিপনা’র বারোটা বাজিয়ে একজন সহনায়ক বানিয়ে ফেলেছেন। ওই ধরনের বে-হায়া পার্টিতে ‘মুফতি কা ক্যায়া কাম হ্যায়’ এই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।
ইফতার হচ্ছে সারাদিন আল্লাহ্র উদ্দেশে রোযা রেখে প্রতিপালকের শুকরিয়া আদায় করে, মুখে খাবার তুলে রোযা ভঙ্গ করা। সেই ইফতারকে যারা এই ধরনের অশ্লীলতা ও অনাচারের সঙ্গে মিশ্রিত করে দেয়, আল্লাহ্র লানত হয়তো বরাদ্দ তাদেরই জন্য। তারা ইসলামের এক পবিত্র অনুসঙ্গকে অপমান করার চেষ্টা করছেন। এই দুনিয়া ও আখেরাতে তারা প্রকৃতই লানত পাওয়ার হকদার।