১৯ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার
  • / 242

বিশেষ প্রতিবেদন: গোটা বিশ্বেই আবহাওয়া তার চিরন্তন চেনা ছন্দের বাইরে হাঁটছে। কোথাও ভয়াবহ বন্যা, আবার কোথাও বর্ষার ঋতুতে বৃষ্টির দেখা নেই, আবার কোথাও ভূমিকম্পের তাণ্ডবে প্রকৃতি এক ধবংসলীলা দেখাচ্ছে। প্রকৃতি খামখেয়ালিপনা নতুন কোনও বিপদের সংকেত দিচ্ছে! সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রাও বেড়েছে, মেরু প্রদেশে বরফ গলছে, কাজেই এর ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখা দিচ্ছে পরিবেশে।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেল আর কিনবে না ভারত, দাবি ট্রাম্পের

 

আরও পড়ুন: ১৩ দিনে ভারতে ১৪৫ টন ইলিশ পাঠাল বাংলাদেশ

গত ৫০ বছরে মেরুপ্রদেশের তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগে গরম ও শীতল হাওয়ার অদলবদল হত। গরম হাওয়া ওপরে উঠে গেলে তার জায়গা নিত শীতল হাওয়া। কিন্তু এখন, গরম হাওয়াই আটকে পড়ছে পরিবেশে। যে কারণে পরিবেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। বঙ্গোপসাগরের গর্ভে জন্ম নেওয়া ঝড়ের শক্তিও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আর তার পিছনে কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত বেড়ে চলা সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাকেই দায়ী করছেন। তথ্য বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রিতে পৌঁছলেই ঝড়ের জন্মের সম্ভাবনা তৈরি হতে থাকে। আর বিধ্বংসী ঝড়গুলোর পিছনে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের ক্রমাগত বাড়তে থাকা তাপমাত্রা। যা এখন গড়ে ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিবর্তনই ভাবিয়ে তুলছে বিজ্ঞানীদের। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ‘ধ্বংসের সবে শুরু!’ বিশ্ব উষ্ণায়ন, দূষণ, মানুষের অজ্ঞতা ক্রমশই ধ্বংসের ঘণ্টি বাজাচ্ছে।

আরও পড়ুন: Epicentre of global terror: একটা দেশ সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে: জয়শঙ্কর

 

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

বর্ষা আসতে উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলি বন্যার কবলে। একদিকে ধস, অপর দিকে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফুঁসছে পাহাড়ি নদী। প্রবল বৃষ্টিতে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে শহরের পর শহর। তবে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বেও প্রকৃতি তার ভয়ঙ্কর রুদ্ররূপ দেখাতে শুরু করেছে। গত বছর পাকিস্তানেও ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। প্রাণহানি হয় হাজার হাজার মানুষের। বন্যার করাল গ্রাসের সাক্ষী ছিল জাপান থেকে নিউইয়র্ক সহ একাধিক দেশ। ২০১১ সালে হারিকেনের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে যায় নিউ ইয়র্কের হাডসন ভ্যালি ও ভারমন্ট।

 

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

 

২০১৩ সালে ভারতের ইতিহাসে এক কালো দিন। অতিভারী বৃষ্টির জেরে হড়পা বান। এক মুহূর্তেই শেষ করে দেয় দেবভূমিকে। আচমকাই জলের তোড়ে ভেসে যায় হাজার হাজার মানুষ। কেদারনাথ তলিয়ে যায় পাথর আর কাদায়। প্রকৃতি তার ভয়ঙ্কর ধবংসলীলা দেখায়। মৃত্যু হয় কয়েক হাজার মানুষের। যার মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন তীর্থযাত্রী।  প্রায় ৬ হাজার মানুষের সলিলসমাধি ঘটে। ধবংস হয় উত্তরাখণ্ডের একটি বড় অংশের।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

 

প্রকৃতির ধবংসলীলা থেকে পরিত্রাণ পায়নি ২০২৩। একটানা ভারী বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের। বানভাসি একাধিক এলাকা, জায়গায় জায়গায় নেমেছে ধস। হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর, রাস্তা। রাস্তাঘাট সব বন্ধ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হড়পা বানে ভেসে গিয়ে, ধসে চাপা পড়ে, সব মিলিয়ে গত কয়েক দিনে ১০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এত বন্যা ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। ধবংসের অন্যতম কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন! মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ এর জন্য দায়ী।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

 

যেমন— নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, জ্বালানি পোড়ানো, কৃষিকাজে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে চলেছে। ফলস্বরূপ নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। একদিনে গোটা বিশ্বকে এর ফল ভুগতে হবে, এমনই বলছেন বিজ্ঞানীরা।

২০৫০ সাল ভারতের পক্ষে উষ্ণায়নের প্রেক্ষিতে একটি মাইলফলক হতে চলেছে। কারণ সমীক্ষা বলছে উষ্ণায়নের কারণে ওই বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ৫০টি দেশ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের মধ্যে ক্ষতির অঙ্কে ভারত থাকবে তৃতীয় স্থানে। এই ক্ষতি কতটা এড়ানো সম্ভব তা এখনই বলা যাচ্ছে না। উষ্ণায়নের পাশাপাশি রয়েছে দূষণ। যা মারাত্মক আকারে বেড়ে চলেছে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের কথায়, এই হারে যদি কার্বন গ্যাস নির্গমন চলতে থাকে, তা হলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের জলস্তর তিন ফুটেরও বেশি বেড়ে যাবে। ফলে উপকূলবর্তী এলাকায়, যেখানে আগে একশো বছরে এক বার বন্যা হত, সেখানে প্রতি বছরেই বন্যা হবে। যা সত্যিই ভয়ঙ্কর।

যেভাবে জলবায়ু তার চেহারা বদলাচ্ছে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

উষ্ণায়নের খুব বড় প্রভাব পড়েছে হিন্দুকুশ হিমালয়ে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের (২ হাজার ১৭৫ মাইল) ওই সুবিশাল পার্বত্য এলাকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে মোট ৮টি দেশ। ভারত, পাকিস্তান, চিন, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মায়ানমারের বড় একটি অংশ। যেখানে গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, আমু দরিয়া, তারিম, ইরাওয়াড়ি, সালউইন, ইয়েলো ও ইয়াংঝের মতো রয়েছে ১০টি প্রধান নদী। গবেষকরা বলছেন, এই দশকেই হিমালয় পর্বতমালার একটি বড় অংশে হতে চলেছে ভয়াল বন্যা। যাকে ভূতত্ত্ববিদ্যার পরিভাষায় বলা হয়, গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (জিএলওএফ বা গ্লফ)। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কায়রো, লাগোস, মাপুটো, ঢাকা, জাকার্তা, মুম্বই, সাংঘাই, কোপেনহেগেন, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক, সান্তিয়াগো এইসব শহরগুলোও বিপদের মুখে।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সমুদ্রের জলস্তর এক মিটার বাড়লে তলিয়ে যাবে ভারতীয় উপমহাদেশের ১৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা৷ আর ৬ মিটার বাড়লে বিলীন হয়ে যাবে সাড়ে ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার উপকূলবর্তী এলাকা। ভারতের ৪৮টি ইকো-অঞ্চলের মধ্যে বিপন্ন হবে ১৮টি৷ যার মধ্যে থাকছে কৃষ্ণা-গোদাবরী বাদাবনের এক-চতুর্থাংশ৷

হারিয়ে যাবে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এলাকা সুন্দরবনের অর্ধেক এবং গুজরাটের নোনা জলের কচ্ছের রণের অর্ধেক৷ জলস্তর যদি ছয় মিটার বাড়ে তবে ডুবে যাবার আশঙ্কা থাকবে ২৭টি ইকো-অঞ্চলের৷ আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু বদলের এই ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত। এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার

বিশেষ প্রতিবেদন: গোটা বিশ্বেই আবহাওয়া তার চিরন্তন চেনা ছন্দের বাইরে হাঁটছে। কোথাও ভয়াবহ বন্যা, আবার কোথাও বর্ষার ঋতুতে বৃষ্টির দেখা নেই, আবার কোথাও ভূমিকম্পের তাণ্ডবে প্রকৃতি এক ধবংসলীলা দেখাচ্ছে। প্রকৃতি খামখেয়ালিপনা নতুন কোনও বিপদের সংকেত দিচ্ছে! সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রাও বেড়েছে, মেরু প্রদেশে বরফ গলছে, কাজেই এর ভয়ঙ্কর প্রভাব দেখা দিচ্ছে পরিবেশে।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

আরও পড়ুন: রাশিয়ার তেল আর কিনবে না ভারত, দাবি ট্রাম্পের

 

আরও পড়ুন: ১৩ দিনে ভারতে ১৪৫ টন ইলিশ পাঠাল বাংলাদেশ

গত ৫০ বছরে মেরুপ্রদেশের তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগে গরম ও শীতল হাওয়ার অদলবদল হত। গরম হাওয়া ওপরে উঠে গেলে তার জায়গা নিত শীতল হাওয়া। কিন্তু এখন, গরম হাওয়াই আটকে পড়ছে পরিবেশে। যে কারণে পরিবেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। বঙ্গোপসাগরের গর্ভে জন্ম নেওয়া ঝড়ের শক্তিও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। আর তার পিছনে কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত বেড়ে চলা সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাকেই দায়ী করছেন। তথ্য বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রিতে পৌঁছলেই ঝড়ের জন্মের সম্ভাবনা তৈরি হতে থাকে। আর বিধ্বংসী ঝড়গুলোর পিছনে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের ক্রমাগত বাড়তে থাকা তাপমাত্রা। যা এখন গড়ে ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিবর্তনই ভাবিয়ে তুলছে বিজ্ঞানীদের। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ‘ধ্বংসের সবে শুরু!’ বিশ্ব উষ্ণায়ন, দূষণ, মানুষের অজ্ঞতা ক্রমশই ধ্বংসের ঘণ্টি বাজাচ্ছে।

আরও পড়ুন: Epicentre of global terror: একটা দেশ সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে: জয়শঙ্কর

 

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

বর্ষা আসতে উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চলগুলি বন্যার কবলে। একদিকে ধস, অপর দিকে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফুঁসছে পাহাড়ি নদী। প্রবল বৃষ্টিতে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে শহরের পর শহর। তবে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বেও প্রকৃতি তার ভয়ঙ্কর রুদ্ররূপ দেখাতে শুরু করেছে। গত বছর পাকিস্তানেও ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। প্রাণহানি হয় হাজার হাজার মানুষের। বন্যার করাল গ্রাসের সাক্ষী ছিল জাপান থেকে নিউইয়র্ক সহ একাধিক দেশ। ২০১১ সালে হারিকেনের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে যায় নিউ ইয়র্কের হাডসন ভ্যালি ও ভারমন্ট।

 

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

 

২০১৩ সালে ভারতের ইতিহাসে এক কালো দিন। অতিভারী বৃষ্টির জেরে হড়পা বান। এক মুহূর্তেই শেষ করে দেয় দেবভূমিকে। আচমকাই জলের তোড়ে ভেসে যায় হাজার হাজার মানুষ। কেদারনাথ তলিয়ে যায় পাথর আর কাদায়। প্রকৃতি তার ভয়ঙ্কর ধবংসলীলা দেখায়। মৃত্যু হয় কয়েক হাজার মানুষের। যার মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন তীর্থযাত্রী।  প্রায় ৬ হাজার মানুষের সলিলসমাধি ঘটে। ধবংস হয় উত্তরাখণ্ডের একটি বড় অংশের।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

 

প্রকৃতির ধবংসলীলা থেকে পরিত্রাণ পায়নি ২০২৩। একটানা ভারী বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের। বানভাসি একাধিক এলাকা, জায়গায় জায়গায় নেমেছে ধস। হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে বাড়িঘর, রাস্তা। রাস্তাঘাট সব বন্ধ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। হড়পা বানে ভেসে গিয়ে, ধসে চাপা পড়ে, সব মিলিয়ে গত কয়েক দিনে ১০০-র বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এত বন্যা ভাবিয়ে তুলেছে বিশেষজ্ঞদের। ধবংসের অন্যতম কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন! মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ এর জন্য দায়ী।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

 

যেমন— নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, জ্বালানি পোড়ানো, কৃষিকাজে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে চলেছে। ফলস্বরূপ নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। একদিনে গোটা বিশ্বকে এর ফল ভুগতে হবে, এমনই বলছেন বিজ্ঞানীরা।

২০৫০ সাল ভারতের পক্ষে উষ্ণায়নের প্রেক্ষিতে একটি মাইলফলক হতে চলেছে। কারণ সমীক্ষা বলছে উষ্ণায়নের কারণে ওই বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ৫০টি দেশ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের মধ্যে ক্ষতির অঙ্কে ভারত থাকবে তৃতীয় স্থানে। এই ক্ষতি কতটা এড়ানো সম্ভব তা এখনই বলা যাচ্ছে না। উষ্ণায়নের পাশাপাশি রয়েছে দূষণ। যা মারাত্মক আকারে বেড়ে চলেছে। পরিবেশবিজ্ঞানীদের কথায়, এই হারে যদি কার্বন গ্যাস নির্গমন চলতে থাকে, তা হলে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রের জলস্তর তিন ফুটেরও বেশি বেড়ে যাবে। ফলে উপকূলবর্তী এলাকায়, যেখানে আগে একশো বছরে এক বার বন্যা হত, সেখানে প্রতি বছরেই বন্যা হবে। যা সত্যিই ভয়ঙ্কর।

যেভাবে জলবায়ু তার চেহারা বদলাচ্ছে সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

উষ্ণায়নের খুব বড় প্রভাব পড়েছে হিন্দুকুশ হিমালয়ে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটারের (২ হাজার ১৭৫ মাইল) ওই সুবিশাল পার্বত্য এলাকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে মোট ৮টি দেশ। ভারত, পাকিস্তান, চিন, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও মায়ানমারের বড় একটি অংশ। যেখানে গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র, মেকং, আমু দরিয়া, তারিম, ইরাওয়াড়ি, সালউইন, ইয়েলো ও ইয়াংঝের মতো রয়েছে ১০টি প্রধান নদী। গবেষকরা বলছেন, এই দশকেই হিমালয় পর্বতমালার একটি বড় অংশে হতে চলেছে ভয়াল বন্যা। যাকে ভূতত্ত্ববিদ্যার পরিভাষায় বলা হয়, গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড (জিএলওএফ বা গ্লফ)। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কায়রো, লাগোস, মাপুটো, ঢাকা, জাকার্তা, মুম্বই, সাংঘাই, কোপেনহেগেন, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক, সান্তিয়াগো এইসব শহরগুলোও বিপদের মুখে।

আগামী কয়েক বছরেই জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত, পূর্বাভাস বিজ্ঞানীদের

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সমুদ্রের জলস্তর এক মিটার বাড়লে তলিয়ে যাবে ভারতীয় উপমহাদেশের ১৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা৷ আর ৬ মিটার বাড়লে বিলীন হয়ে যাবে সাড়ে ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার উপকূলবর্তী এলাকা। ভারতের ৪৮টি ইকো-অঞ্চলের মধ্যে বিপন্ন হবে ১৮টি৷ যার মধ্যে থাকছে কৃষ্ণা-গোদাবরী বাদাবনের এক-চতুর্থাংশ৷

হারিয়ে যাবে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ এলাকা সুন্দরবনের অর্ধেক এবং গুজরাটের নোনা জলের কচ্ছের রণের অর্ধেক৷ জলস্তর যদি ছয় মিটার বাড়ে তবে ডুবে যাবার আশঙ্কা থাকবে ২৭টি ইকো-অঞ্চলের৷ আগামী কয়েক বছরে জলবায়ু বদলের এই ভয়ঙ্কর পরিণাম টের পাবে ভারত। এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।