০২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রক্ষণাবেক্ষণ হবে হাজি মহসিনের কবরস্থান

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার
  • / 6

হাজি মুহাম্মদ মহসিনের দোয়ার আগে পুস্পস্তবক দিচ্ছেন মাইনরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান

আহমদ হাসান ইমরান: হাজি মুহাম্মদ মহসিন। তাঁর নামের সঙ্গে ‘দানবীর’ শধটি সংযুক্ত হয়ে গেছে। তাঁর জন্ম ১৭৩২ খ্রিস্টাধে হুগলির চুঁচূড়া শহরে। চুঁচূড়া তখন ছিল একটি বড় বাণিজ্য কেন্দ্র। তখন বাংলায় চলছে নবাবী আমল। যার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। মুহাম্মদ মহসিন চুঁচূড়া ও মুর্শিদাবাদে শিক্ষা গ্রহণ করেন। কুরআন, হাদিস ও ফিকাহতে তাঁর ছিল অঢেল জ্ঞান। তিনি নিজ হাতে আরবি ভাষায় কুরআন লিখতেনও। হাজি মুহাম্মদ মহসিন সেই সময় তাঁর আরও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ইরান, ইরাক, তার্কি এবং আরব সফর করেন। তিনি মক্কা এবং মদীনাতে উপস্থিত হন এবং হজ সম্পন্ন করে হাজি উপাধি প্রাপ্ত হন।

হাজি মুহাম্মদ মহসিন উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর বোন মুন্নুজানের কাছ থেকে অকল্পনীয় সম্পত্তির মালিকানা পান। কিন্তু হাজি মুহাম্মদ মহসিন এই সময় এক যুগ-পুরুষের ভূমিকা পালন করেন, যার দান অখণ্ড বাংলার মুসলিমদের শিক্ষার প্রসারে এক বিরাট ভূমিকা রাখে। তাঁর দানে প্রতিষ্ঠিত হয় হুগলি মাদ্রাসা, হুগলি মহসিন কলেজ  এবং আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তাঁর নামে বাংলাদেশে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন চট্টগ্রামে গভর্নমেন্ট হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, হাইস্কুল, ঢাকায় মহসিনিয়া  মাদ্রাসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে হাজি মুহাম্মদ মহসিন হল ইত্যাদি।

এছাড়া তিনি তাঁর সম্পত্তি থেকে প্রচুর ছাত্রবৃত্তিরও ব্যবস্থা করেন। এ জন্য বহু টাকা ও সম্পত্তি তিনি দান করে গেছেন। যদিও তা বেশকিছুটা ইংরেজ আমলে নয়ছয় হয়ে গেছে। তাঁর দান করা অর্থ থেকে কলকাতার রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ‘মহসিন ফান্ড’ হিসেবে যে অর্থ গচ্ছিত ছিল, তা থেকে এখনও ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম পড়ুয়াদের বৃত্তি প্রদান করে।

যুগসন্ধিক্ষণে হাজি মুহাম্মদ মহসিন বাংলার মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষা এবং আধুনিক শিক্ষার জন্য যে বন্দোবস্ত করে গেছেন, তা  বাংলায় শিক্ষার প্রসারে এক অনন্য অবদান রেখেছে। শুধু মুসলিমরা নয়, হিন্দুরাও  উপকৃত হয়েছেন তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ এই হুগলি হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকেই শিক্ষা প্রাপ্ত হন।

হাজি মুহাম্মদ মহসিনের পর বাংলায় শিক্ষার প্রসারে একমাত্র জনাব মোস্তাক হোসেন ব্যতীত আর কেউ এতবেশি অর্থ ব্যয় করেননি। এতটা দূরদৃষ্টি নিয়ে সমাজের কথা চিন্তা করেননি। অথচ এই মহান ব্যক্তি ও তাঁর বোম মুন্নুজানের কবরস্থানটি খুবই অব্যবহৃত ছিল। এক ধারে প্রাচীর না থাকায়, সেটি রাত্রিবেলা হয়ে উঠত অসামাজিক ব্যক্তিদের আখড়া।

সম্প্রতি এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান ও কমিশনের সদস্যরা হুগলি জেলায় সংখ্যালঘু সিভিল সোসাইটি এবং জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। এরপর ইমরান ও সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যরা মহসিনের মাজার পরিদর্শনে গেলে কবরস্থানটির জীর্ণদশা ও অব্যবস্থা লক্ষ্য করেন।

আনন্দের কথা, মাইনোরিটি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড  মাদ্রাসা এডুকেশন দফতর এবং সেক্রেটারি  জনাব পিবি সালিম এই মহত মানুষটির মাজার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

রক্ষণাবেক্ষণ হবে হাজি মহসিনের কবরস্থান

আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার

আহমদ হাসান ইমরান: হাজি মুহাম্মদ মহসিন। তাঁর নামের সঙ্গে ‘দানবীর’ শধটি সংযুক্ত হয়ে গেছে। তাঁর জন্ম ১৭৩২ খ্রিস্টাধে হুগলির চুঁচূড়া শহরে। চুঁচূড়া তখন ছিল একটি বড় বাণিজ্য কেন্দ্র। তখন বাংলায় চলছে নবাবী আমল। যার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। মুহাম্মদ মহসিন চুঁচূড়া ও মুর্শিদাবাদে শিক্ষা গ্রহণ করেন। কুরআন, হাদিস ও ফিকাহতে তাঁর ছিল অঢেল জ্ঞান। তিনি নিজ হাতে আরবি ভাষায় কুরআন লিখতেনও। হাজি মুহাম্মদ মহসিন সেই সময় তাঁর আরও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য ইরান, ইরাক, তার্কি এবং আরব সফর করেন। তিনি মক্কা এবং মদীনাতে উপস্থিত হন এবং হজ সম্পন্ন করে হাজি উপাধি প্রাপ্ত হন।

হাজি মুহাম্মদ মহসিন উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর বোন মুন্নুজানের কাছ থেকে অকল্পনীয় সম্পত্তির মালিকানা পান। কিন্তু হাজি মুহাম্মদ মহসিন এই সময় এক যুগ-পুরুষের ভূমিকা পালন করেন, যার দান অখণ্ড বাংলার মুসলিমদের শিক্ষার প্রসারে এক বিরাট ভূমিকা রাখে। তাঁর দানে প্রতিষ্ঠিত হয় হুগলি মাদ্রাসা, হুগলি মহসিন কলেজ  এবং আরও অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। তাঁর নামে বাংলাদেশে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন চট্টগ্রামে গভর্নমেন্ট হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, হাইস্কুল, ঢাকায় মহসিনিয়া  মাদ্রাসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে হাজি মুহাম্মদ মহসিন হল ইত্যাদি।

এছাড়া তিনি তাঁর সম্পত্তি থেকে প্রচুর ছাত্রবৃত্তিরও ব্যবস্থা করেন। এ জন্য বহু টাকা ও সম্পত্তি তিনি দান করে গেছেন। যদিও তা বেশকিছুটা ইংরেজ আমলে নয়ছয় হয়ে গেছে। তাঁর দান করা অর্থ থেকে কলকাতার রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ‘মহসিন ফান্ড’ হিসেবে যে অর্থ গচ্ছিত ছিল, তা থেকে এখনও ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম পড়ুয়াদের বৃত্তি প্রদান করে।

যুগসন্ধিক্ষণে হাজি মুহাম্মদ মহসিন বাংলার মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষা এবং আধুনিক শিক্ষার জন্য যে বন্দোবস্ত করে গেছেন, তা  বাংলায় শিক্ষার প্রসারে এক অনন্য অবদান রেখেছে। শুধু মুসলিমরা নয়, হিন্দুরাও  উপকৃত হয়েছেন তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ এই হুগলি হাজি মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকেই শিক্ষা প্রাপ্ত হন।

হাজি মুহাম্মদ মহসিনের পর বাংলায় শিক্ষার প্রসারে একমাত্র জনাব মোস্তাক হোসেন ব্যতীত আর কেউ এতবেশি অর্থ ব্যয় করেননি। এতটা দূরদৃষ্টি নিয়ে সমাজের কথা চিন্তা করেননি। অথচ এই মহান ব্যক্তি ও তাঁর বোম মুন্নুজানের কবরস্থানটি খুবই অব্যবহৃত ছিল। এক ধারে প্রাচীর না থাকায়, সেটি রাত্রিবেলা হয়ে উঠত অসামাজিক ব্যক্তিদের আখড়া।

সম্প্রতি এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান ও কমিশনের সদস্যরা হুগলি জেলায় সংখ্যালঘু সিভিল সোসাইটি এবং জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন। এরপর ইমরান ও সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যরা মহসিনের মাজার পরিদর্শনে গেলে কবরস্থানটির জীর্ণদশা ও অব্যবস্থা লক্ষ্য করেন।

আনন্দের কথা, মাইনোরিটি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড  মাদ্রাসা এডুকেশন দফতর এবং সেক্রেটারি  জনাব পিবি সালিম এই মহত মানুষটির মাজার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।