১৪ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউরেনিয়াম মজুতের কোনো প্রমাণ নেই, তবু ফের ইরানে হামলার হুমকি ইসরাইলের

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
  • / 318

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইউরেনিয়াম গোপনে সরানোর কোনো নিশ্চিত প্রমাণ না থাকলেও ইরানকে কেন্দ্র করে ফের হামলার হুমকি দিল ইসরাইল। তাদের দাবি, গত মাসের ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন বোমাবর্ষণের মধ্যেও ইরানের অস্ত্রোপযোগী মাত্রার কাছাকাছি উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের একটি অংশ নাকি বেঁচে গেছে। যদি তেহরান সেই ইউরেনিয়াম পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে, তাহলে ফের হামলা চালানো হবে; এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তেল আবিব।

এই সুরেই বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমানবাহিনীর স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেন, ক্ষ্মতেহরানের দিক থেকে কোনো হুমকি এলে, আমরা আবারও জবাব দেব।

ইসরাইলি দাবি অনুযায়ী, ইরান বোমাবর্ষণের আগেই গোপনে ৪০৮.৬ কেজি ইউরেনিয়াম তার সবচেয়ে সংবেদনশীল কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে ফেলেছে। এই ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ, যা নাগরিক ব্যবহারের জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং অস্ত্র তৈরির মাত্রার নিচে হলেও, ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধন করলে তা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।

আরও পড়ুন: ইরানের ওপর ফের রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরাইলি কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলার পরও কিছু ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে এবং ইরান তা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করতেই পারে। স্যাটেলাইট চিত্রে ফার্দো থেকে ট্রাক চলাচলের ছবি থাকায় ইরানের ইউরেনিয়াম সরানোর আশঙ্কাও তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: Palestinian state: এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে france

তবে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব দাবি খারিজ করে দিয়ে বলেন, তকিছুই সরানো হয়নি। ইউরেনিয়াম অত্যন্ত ভারী, সরানো কঠিন। ট্রাকগুলো আসলে কংক্রিট দিয়ে স্থান ঢাকার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তাঁর দাবি, ফার্দো প্ল্যান্ট সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা কার্যত বিলুপ্ত।

আরও পড়ুন: ইসরাইলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের 

যদিও মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ট্রাম্প এই মূল্যায়নকেও গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

এদিকে ইরান স্বীকার করেছে, মার্কিন বি-২ স্পিরিট বোমার বিমানের চালানো ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ তাদের পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। তবে তেহরানের দাবি, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, তআমরা নিশ্চিত নই ইউরেনিয়াম কোথায় রয়েছে। কিছু ধ্বংস হয়েছে, আবার কিছু সরানো হয়ে থাকতে পারে। পুরো বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ইসরাইলের দাবি ও বাস্তবতার মাঝে বড় ফারাক রয়েছে।

সর্বশেষ স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ফার্দোতে বিস্ফোরণের গর্তগুলো ভরাটের কাজ চলছে। সেখানে চলছে নির্মাণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম। পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অ্যালব্রাইট বলেছেন, ইরান সম্ভবত ক্ষয়ক্ষতি সামলে ফের স্থাপনাগুলো সচল করার চেষ্টা করছে এবং ভবিষ্যতের হামলা ঠেকাতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার করছে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইউরেনিয়াম মজুতের কোনো প্রমাণ নেই, তবু ফের ইরানে হামলার হুমকি ইসরাইলের

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইউরেনিয়াম গোপনে সরানোর কোনো নিশ্চিত প্রমাণ না থাকলেও ইরানকে কেন্দ্র করে ফের হামলার হুমকি দিল ইসরাইল। তাদের দাবি, গত মাসের ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন বোমাবর্ষণের মধ্যেও ইরানের অস্ত্রোপযোগী মাত্রার কাছাকাছি উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়ামের একটি অংশ নাকি বেঁচে গেছে। যদি তেহরান সেই ইউরেনিয়াম পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে, তাহলে ফের হামলা চালানো হবে; এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তেল আবিব।

এই সুরেই বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমানবাহিনীর স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেন, ক্ষ্মতেহরানের দিক থেকে কোনো হুমকি এলে, আমরা আবারও জবাব দেব।

ইসরাইলি দাবি অনুযায়ী, ইরান বোমাবর্ষণের আগেই গোপনে ৪০৮.৬ কেজি ইউরেনিয়াম তার সবচেয়ে সংবেদনশীল কেন্দ্রগুলো থেকে সরিয়ে ফেলেছে। এই ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ, যা নাগরিক ব্যবহারের জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং অস্ত্র তৈরির মাত্রার নিচে হলেও, ৯০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধন করলে তা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি সম্ভব।

আরও পড়ুন: ইরানের ওপর ফের রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরাইলি কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমস-কে জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হামলার পরও কিছু ইউরেনিয়াম রয়ে গেছে এবং ইরান তা ব্যবহার করার পরিকল্পনা করতেই পারে। স্যাটেলাইট চিত্রে ফার্দো থেকে ট্রাক চলাচলের ছবি থাকায় ইরানের ইউরেনিয়াম সরানোর আশঙ্কাও তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন: Palestinian state: এবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিচ্ছে france

তবে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব দাবি খারিজ করে দিয়ে বলেন, তকিছুই সরানো হয়নি। ইউরেনিয়াম অত্যন্ত ভারী, সরানো কঠিন। ট্রাকগুলো আসলে কংক্রিট দিয়ে স্থান ঢাকার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তাঁর দাবি, ফার্দো প্ল্যান্ট সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা কার্যত বিলুপ্ত।

আরও পড়ুন: ইসরাইলের হুমকিতে ভীত না হওয়ার আহ্বান রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের 

যদিও মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ট্রাম্প এই মূল্যায়নকেও গুরুত্ব দিতে রাজি নন।

এদিকে ইরান স্বীকার করেছে, মার্কিন বি-২ স্পিরিট বোমার বিমানের চালানো ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ তাদের পরমাণু স্থাপনায় বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। তবে তেহরানের দাবি, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, তআমরা নিশ্চিত নই ইউরেনিয়াম কোথায় রয়েছে। কিছু ধ্বংস হয়েছে, আবার কিছু সরানো হয়ে থাকতে পারে। পুরো বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। এই মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ইসরাইলের দাবি ও বাস্তবতার মাঝে বড় ফারাক রয়েছে।

সর্বশেষ স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ফার্দোতে বিস্ফোরণের গর্তগুলো ভরাটের কাজ চলছে। সেখানে চলছে নির্মাণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রম। পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অ্যালব্রাইট বলেছেন, ইরান সম্ভবত ক্ষয়ক্ষতি সামলে ফের স্থাপনাগুলো সচল করার চেষ্টা করছে এবং ভবিষ্যতের হামলা ঠেকাতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও জোরদার করছে।