২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আস্ফালন: “খামেনেইয়ের পরিণতি সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে”

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
  • / 208

AI দ্বারা নির্মিত চিত্র

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজের এক বিতর্কিত মন্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্য প্রাচ্যের পরিস্থিতি। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে সতর্ক করে বলেন, “ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখলে খামেনেইয়ের পরিণতি ইরাকের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনের মতো হবে।” এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য যে, কাটজ নিজেই আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।

কাটজ তার বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেনের উদাহরণ টেনেছে, যাকে ২০০৩ সালে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর একটি বিচারবহির্ভূত প্রক্রিয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ফাঁসিকে “রাজনৈতিক প্রতিশোধ” হিসাবে নথিভুক্ত করেছে। অথচ এই একই ইসরাইলি নেতৃত্ব গত ৮ মাসে গাজায় লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি হত্যা, ৮৫% বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুতকরণ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মোকাবিলা করছে।

গত সপ্তাহে ইসরাইল আচমকা ইরানের অভ্যন্তরে একের পর এক বিমান হামলা চালায়। যার ফলে, তেহরানের সাহারান অঞ্চলে দুটি জ্বালানি ডিপো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্থাপনায় মিসাইল হামলা করেছে। ইরানের দাবি অনুযায়ী, ৬০ জনেরও বেশি ইরানি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।

আরও পড়ুন: ইরানের ওপর ফের রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই, কাটজের মন্তব্যকে “ঘৃণ্য ভণ্ডামি” আখ্যা দিয়ে বলেন, “যারা নিজেরাই আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযুক্ত, তারাই এখন আমাদের নৈতিকতা শেখাতে চায়? সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করা হয়েছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রক্তপিপাসা মেটাতে।” তিনি ইসরাইলি হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” হিসাবে চিহ্নিত করে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য আমেরিকা ও ইসরাইলকে জবাবদিহি করতে হবে: ইরান 

আন্তর্জাতিক মহলের একটি বড় অংশ ইসরাইলের হামলা ও হুঁশিয়ারিকে “আত্মরক্ষার অধিকার” বলে প্রচার করলেও, মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলছে, গাজার ধ্বংসযজ্ঞে আইসিজে কেন অন্তর্বর্তী আদেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি? ইসরাইল কেন আইসিসি-র তদন্ত এড়াতে মার্কিন সমর্থনের ওপর নির্ভর করছে?
ইরানের সার্বভৌমত্ব ইসরাইল যে ভাবে লঙ্ঘন করলো তাকে কীভাবে “আইনসম্মত” বলা যায়?

আরও পড়ুন: মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুক: খামেনি

” ইতিহাস সাক্ষী, সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করেছিল তারা, আজ যারা গাজার শিশুদের গণকবর দিচ্ছে, তারাই খামেনেইয়ের ‘নৈতিকতা’ নিয়েও বক্তৃতা দিচ্ছে। এই ভণ্ডামির জবাব দেবে ইরানের জনগণ,” — তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলি রেজার মন্তব্য।

ইসরাইলি মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি মধ্য প্রাচ্যের উত্তেজনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির মতোই যেকোনো একপাক্ষিক হামলা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। গাজার রক্তপাতের দায়ে অভিযুক্ত নেতৃত্ব যখন অন্য রাষ্ট্রপ্রধানের “পরিণতি” নির্ধারণের হুমকি দেয়, তখন তা বিশ্বব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক নজির তৈরি করে। এই সংকটে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ এবং সকল পক্ষের সংযত হওয়া এখন সময়ের দাবি।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে “সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির উদাহরণ” ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞাকেই প্রতিফলিত করে, যেখানে গাজার চলমান গণহত্যার প্রমাণ সত্ত্বেও ইসরাইলি নেতৃত্ব জবাবদিহির মুখোমুখি হয়নি।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আস্ফালন: “খামেনেইয়ের পরিণতি সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে”

আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজের এক বিতর্কিত মন্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্য প্রাচ্যের পরিস্থিতি। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেইকে সতর্ক করে বলেন, “ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা অব্যাহত রাখলে খামেনেইয়ের পরিণতি ইরাকের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনের মতো হবে।” এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য যে, কাটজ নিজেই আন্তর্জাতিক আদালতে গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত।

কাটজ তার বক্তব্যে সাদ্দাম হোসেনের উদাহরণ টেনেছে, যাকে ২০০৩ সালে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর একটি বিচারবহির্ভূত প্রক্রিয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ফাঁসিকে “রাজনৈতিক প্রতিশোধ” হিসাবে নথিভুক্ত করেছে। অথচ এই একই ইসরাইলি নেতৃত্ব গত ৮ মাসে গাজায় লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি হত্যা, ৮৫% বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচ্যুতকরণ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ মোকাবিলা করছে।

গত সপ্তাহে ইসরাইল আচমকা ইরানের অভ্যন্তরে একের পর এক বিমান হামলা চালায়। যার ফলে, তেহরানের সাহারান অঞ্চলে দুটি জ্বালানি ডিপো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের স্থাপনায় মিসাইল হামলা করেছে। ইরানের দাবি অনুযায়ী, ৬০ জনেরও বেশি ইরানি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।

আরও পড়ুন: ইরানের ওপর ফের রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই, কাটজের মন্তব্যকে “ঘৃণ্য ভণ্ডামি” আখ্যা দিয়ে বলেন, “যারা নিজেরাই আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার অভিযুক্ত, তারাই এখন আমাদের নৈতিকতা শেখাতে চায়? সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করা হয়েছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রক্তপিপাসা মেটাতে।” তিনি ইসরাইলি হামলাকে “যুদ্ধাপরাধ” হিসাবে চিহ্নিত করে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য আমেরিকা ও ইসরাইলকে জবাবদিহি করতে হবে: ইরান 

আন্তর্জাতিক মহলের একটি বড় অংশ ইসরাইলের হামলা ও হুঁশিয়ারিকে “আত্মরক্ষার অধিকার” বলে প্রচার করলেও, মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলছে, গাজার ধ্বংসযজ্ঞে আইসিজে কেন অন্তর্বর্তী আদেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি? ইসরাইল কেন আইসিসি-র তদন্ত এড়াতে মার্কিন সমর্থনের ওপর নির্ভর করছে?
ইরানের সার্বভৌমত্ব ইসরাইল যে ভাবে লঙ্ঘন করলো তাকে কীভাবে “আইনসম্মত” বলা যায়?

আরও পড়ুন: মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুক: খামেনি

” ইতিহাস সাক্ষী, সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করেছিল তারা, আজ যারা গাজার শিশুদের গণকবর দিচ্ছে, তারাই খামেনেইয়ের ‘নৈতিকতা’ নিয়েও বক্তৃতা দিচ্ছে। এই ভণ্ডামির জবাব দেবে ইরানের জনগণ,” — তেহরানভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আলি রেজার মন্তব্য।

ইসরাইলি মন্ত্রীর হুঁশিয়ারি মধ্য প্রাচ্যের উত্তেজনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির মতোই যেকোনো একপাক্ষিক হামলা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। গাজার রক্তপাতের দায়ে অভিযুক্ত নেতৃত্ব যখন অন্য রাষ্ট্রপ্রধানের “পরিণতি” নির্ধারণের হুমকি দেয়, তখন তা বিশ্বব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক নজির তৈরি করে। এই সংকটে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ এবং সকল পক্ষের সংযত হওয়া এখন সময়ের দাবি।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে “সাদ্দাম হোসেনের ফাঁসির উদাহরণ” ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞাকেই প্রতিফলিত করে, যেখানে গাজার চলমান গণহত্যার প্রমাণ সত্ত্বেও ইসরাইলি নেতৃত্ব জবাবদিহির মুখোমুখি হয়নি।