পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ প্রায় ৬ দশক আগের স্লোগান উঠে এল মোদির কণ্ঠে। শনিবার কেন্দ্র-রাজ্য বিজ্ঞান কনক্লেভের উদ্বোধন করতে গিয়ে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ’ স্লোগানের সুরে প্রধানমন্ত্রী বললেন, জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান ও জয় অনুসন্ধান। ১৯৬৫ সালে কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রী ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে এই স্লোগান তুলেছিলেন।
এত বছর পর তাকে কেন ফের টেনে আনলেন বিজেপিশাসিত দেশের প্রধানমন্ত্রী, সেটাই প্রশ্ন। তার স্লোগান ধার করে নিছকই জনমোহিনী রাজনীতির চেষ্টা নাকি শাস্ত্রীকে ‘আপন’ করে নেওয়ার চেষ্টা রয়েছে বিজেপির, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। দেশের সেনা ও কৃষকরাও নানা কারণে বিজেপি সরকারের উপর বিরক্ত। ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন অনেক প্রাক্তন সেনাকর্তা। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি থেকে নানা ধরনের কৃষক বিরোধী পদক্ষেপের কোনও অন্ত নেই দেশে। এই প্রেক্ষিতে লালবাহাদুর শাস্ত্রীর শরণাপন্ন হলেন মোদি।
এদিন আহমেদাবাদে ভিডিয়ো মাধ্যমে কেন্দ্র-রাজ্য বিজ্ঞান কনক্লেভের সূচনা করেন মোদি। দেশের বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা উঠে আসে তার ভাষণে। দেশকে গবেষণা ও আবিষ্কারের ক্ষেত্রে এক বিশ্বজনীন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে বলে তিনি আহ্বান জানান।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ময়দানে সব সময় নতুনকে গ্রহণ করতে হয়। তবেই ঘটে উন্নতি। রাজ্যগুলিকে মোদি আর্জি জানিয়েছেন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আপনারা আধুনিক নীতি প্রণয়ন করুন। তার এই মন্তব্য নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে অবশ্য ছাড়েননি। অনেকের তির্যক মন্তব্য, দেশের বিজ্ঞানকে মোদি সরকার ‘প্রাচীনপন্থী’ বানিয়ে দিচ্ছে। এখন ভাষণ দিতে এসে অগ্রগতির কথা বলাটা বোধহয় সমীচিন হচ্ছে না তার! এতে সংঘ পরিবারের রোষে পড়তে পারেন তিনি।
দেশে সাধারণ মানুষের কাছে বিজ্ঞান যে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি, তা এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, পশ্চিমা দেশগুলির মতো ভারত বিজ্ঞানীদের কাজকর্মকে উদযাপন করতে পারেনি। তারা কাজ করে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে। ফলে বিজ্ঞান নিয়ে জনগণের বড় অংশের কোনও কৌতূহল নেই। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অর্জনকে আরও বেশি করে মানুষের সামনে তুলে ধরে তার উদযাপন করতে হবে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।
এদিন মোদি দাবি করেছেন, ২০১৪ সালে বিজেপি দেশে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজ্ঞানে বিনিয়োগ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ভারত ‘জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান ও জয় অনুসন্ধান’ -এর মন্ত্র নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। স্থানীয় স্তরে বিজ্ঞানচর্চায় জোর দিতে হবে বলে জানান তিনি। মহাকাশ মিশন, গভীর সমুদ্র মিশন, জাতীয় সুপারকম্পিউটিং মিশন, সেমিকনডাকটর মিশন, হাইড্রোজেন মিশন, ড্রোন প্রযুক্তি, সবক্ষেত্রেই ভারত খুব দ্রুত কাজ করছে বলে তিনি প্রশংসা করেন। এদিনের কনক্লেভে সব রাজ্যের প্রতিনিধিরা অংশ নিলেও বিহার ও ঝাড়খণ্ডের কোনও প্রতিনিধি হাজির ছিলেন না। রাজনৈতিক কারণেই এটা ঘটেছে কি না তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর কানাঘুঁষো।