প্রথম পিপিপি মডেলে রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, শালবনিতে বরাত পেয়েছে জিন্দালরা

- আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, শনিবার
- / 64
পুবের কলম প্রতিবেদক : জেএসডব্লিউ তথা জিন্দাল গোষ্ঠী শালবনিতে ইস্পাত কারখানা করার উদ্যোগ নিয়েছিল ২০০৮ সালে। কিন্তু তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মাওবাদী হামলার আতঙ্কে সেই শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা থেকে পিছিয়ে আসে তারা। দশ বছর পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে ২০১৮ সালে শালবনিতে ইস্পাত কারখানার জন্য দেওয়া ৪০০০ একরের মধ্যে ৮৪৯ একর জমিতে সিমেন্ট উৎপাদনের কারখানা তৈরি করেছিল। এবার রাজ্য সরকারের দেওয়া শালবনির ওই জমিতেই দুটি ৮০০ মেগাওয়াত গ্রিনফিল্ড পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করতে চলেছে জিন্দাল গোষ্ঠী। ২০৩০ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে জিন্দাল গোষ্ঠী। এটাই হবে পিপিপি মডেলে স্থাপিত রাজ্য সরকারের প্রথম বিদ্যুৎ প্রকল্প। এর আগে পর্যন্ত রাজ্য সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম (পিডিসিএল) বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করত। ইকুইটি দিত রাজ্য
সরকার। গত নভেম্বর মাসে পিপিপি মডেলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার জন্য টেন্ডারডাকে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তর। সেই টেন্ডারে জেএসডব্লিউ গোষ্ঠী ছাড়া অংশ নিয়েছিল আদানি পাওয়ার ও টরেন্ট পাওয়ার। নবান্ন সূত্রে তিনটি সংস্থার মধ্যে সবচেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ প্রস্তাব দেওয়ার নিরিখে গত মাসেই শালবনির এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত দেওয়া হয়েছে জেএসডব্লিউ গোষ্ঠীকে।
৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের পঞ্চ থেকে মেদিনীপুরের শালবনীতে ১৬ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করে ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট করার ঘোষণা করেছিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দাল। সূত্রের খবর, তার এক মাস আগেই অবশ্য ওই প্রকল্পের বরাত পেয়ে গিয়েছিল জিন্দাল গোষ্ঠী। বুধবার বিধানসভায় বাজেট ভাষণেও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে রাজ্য মন্ত্রীসভা দুটি ৮০০ মেগাওয়াত গ্রিনফিল্ড পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে বিডিংও চূড়ান্ত। বিনিয়োগ হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। শালবনির এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য কয়লার যোগান পেতে কোল ইন্ডিয়ার সঙ্গে লিংকেজও করে দিয়েছে রাজ্য। চুক্তি অনুযায়ী শালবনি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ইউনিট প্রতি ৫.৪৫ টাকা দরে কিনবে রাজ্য। যদিও এখন বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য দাম পড়ে ৪.৫০ টাকা। আসলে গত কয়েক বছরে শিল্প, বাণিজ্য এমনকি বাড়িতেও বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েই চলেছে।
গত বছর গরমকালে বন্টন সংস্থা এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক ১০ হাজার মেগাওয়াত ছাড়িয়েছিল। যেখানে পিডিসিএল আর বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার নিজস্ব উৎপাদন ৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি নয়। ফলে ঘাটতি মেটাতের এনটিপিসি, ডিভিসি – এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছ থেকে খোলা বাজারে চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনতে হয়েছিল। সেই কারণেই বড়ো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে উদ্যোগী হয় রাজ্য। কিন্ত আর্থিক সংকটের কারণে আট বছর আগে মুর্শিদাবাদের সাগরদীঘিতে ৫০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চার নম্বর ইউনিটের পরে আর কোনও উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করতে পারেনি রাজ্য। তাই এবার পিপিপি মডেলে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য। শালবনিতে জিন্দালদের প্রকল্পের জন্য শুধুমাত্র জমি দিয়েছে রাজ্য। লগ্নি, প্রকল্প নির্মাণ, উৎপাদন পুরোটাই করবে জেএসডবলিউ সংস্থা। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালিয়ে তারপর তা রাজ্য সরকারকে হস্তান্তর করবে। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।