২১ জুলাই মিছিল: যান নিয়ন্ত্রণে কড়া নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের, সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়সীমা

- আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
- / 36
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: ২১ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেসের বার্ষিক কর্মসূচি ঘিরে শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে কলকাতা হাই কোর্ট কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা পুলিশকে। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, ২১ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত মিছিল চলতে পারবে। তবে সকাল ৯টার মধ্যে মিছিলকে নির্দিষ্ট জায়গায় থামিয়ে (settle down) দিতে হবে।
হাই কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহরে কোনও যানজট যেন না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে কলকাতা পুলিশকে। বিশেষ নজর রাখতে হবে হাই কোর্ট চত্বর, মধ্য কলকাতা এবং তার আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকার উপর। কলকাতা পুলিশের অধীনস্ত এলাকাগুলির জন্য এই নির্দেশ কার্যকর হবে।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, সকাল ১১টার পর মিছিল আগের মতোই চলতে পারবে। তবে যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে আদালত।
এই মামলাটি করেছে অল ইন্ডিয়া লয়্যার্স ইউনিয়ন। তাঁদের আইনজীবীরা— শামিম আহমেদ, সিদ্ধার্থশঙ্কর মন্ডল এবং সৌম্য দাশগুপ্ত— আদালতে সওয়াল করে জানান, তাঁরা ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচির বিরোধিতা করছেন না। কিন্তু প্রতি বছর ওই দিন শহরে ব্যাপক যানজট হয়, যা নাগরিক স্বার্থে বিপদ ডেকে আনে।
তাঁরা আরও বলেন, ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে অন্যান্য সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে, যেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হয় না। অথচ তৃণমূলের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হয়।
২১ জুলাই রাজ্যে ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফেরি পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছে, স্কুলে না-আসলেও চলবে। সিধো-কানহু বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষাও পিছিয়ে দিয়েছে। কলকাতা হাই কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন রেজোলিউশন নিয়েছে— “নো অ্যাডভার্স অর্ডার”। অর্থাৎ, দু’পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত না-থাকলে কোনও নির্দেশ দেওয়া যাবে না।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। কলকাতা পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কোনও রাস্তা বন্ধ থাকলেও সমান্তরাল রাস্তা খোলা রাখা হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ট্রাম এবং মালগাড়ির চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
এজি বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থা অত্যন্ত দক্ষ। নবান্ন অভিযান বা প্রধানমন্ত্রীর সভার সময়ও শহরে যান চলাচল মসৃণ থাকে।’’
বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘কত মানুষ জমায়েত হবেন, তা প্রশাসনের জানা থাকা উচিত।’’ এজি জানান, প্রায় ১০ লক্ষ লোকের জমায়েতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বক্তব্য শুনে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আপনার বক্তব্য কি রেকর্ড করব?’’
আদালত কলকাতা পুলিশের ভূমিকায় আস্থা প্রকাশ করে জানায়, ‘‘পুজোর সময় যদি এত ভাল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট হয়, ২১ জুলাই কেন হবে না?’’ পুলিশকে মুচলেকা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে যে, যানজট হবে না।
তৃণমূলের আইনজীবী জানান, এটি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এক স্মরণ সমাবেশ। শহিদদের পরিবারের সদস্যরাও এতে অংশ নেন। তাঁর দাবি, ২১ জুলাই তিনি কখনও হাই কোর্টে আসতে বাধার সম্মুখীন হননি।
বিচারপতি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে মামলার নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না। সমস্ত পক্ষকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী শুনানিতে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।