১৯ অগাস্ট ২০২৫, মঙ্গলবার, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলার নির্বাচনে বিজেপির এজেন্ডাও স্থির করে দিলেন মোদি

মারুফা খাতুন
  • আপডেট : ১৭ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার
  • / 45

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : লালকেল্লা। ভারতের সম্রাট শাহজাহান দিল্লিতে ভারত শাসনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে এই কেল্লা বা ফোর্ট নির্মাণ করেছিলেন। এখানে থাকত হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ে গঠিত মোগল সেনাবাহিনীও। লালকেল্লার গৌরব গাঁথার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের আজাদি সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস এবং তার মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তান্ত।

এখানেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনা-নায়কদের বিচার করেছিল সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা। আর তার বিরুদ্ধে সারা উপমহাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এই সেনা-নায়কদের মধ্যে একজন ছিলেন মুসলিম (শাহ নওয়াজ খান), দ্বিতীয় জন হিন্দু (প্রেম কুমার সহগাল) আর তৃতীয়জন ছিলেন শি’ (গুরবকশ সিং ধিলন)। একদিকে তাঁরা ছিলেন সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের আজাদি সংগ্রামের প্রতীক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতের ঐক্য ও অ’ণ্ডতার অসামান্য নিদর্শন।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের চাপেই গব্বর সিং ট্যাক্স কমাচ্ছেন মোদি: জয়রাম

আর ভারতের স্বাধীনতার ঝান্ডা প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল প্রথম উত্তোলন করেছিলেন এই লালকেল্লা থেকেই। তারপর প্রত্যেক স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে থাকেন। দেশকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিবসের এই ভাষণ বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন: দু কেন্দ্রে তালিকায় নাম, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রীর নাম বাদ নয় কেন? তেজস্বী

আরএসএস-এর স্বয়ংসেবক ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি এই ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী রেড ফোর্ট থেকেই বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এবারের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে আসীন নরেন্দ্র মোদি যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে পুরো দেশ স্তম্ভিত। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে লালকেল্লা থেকে বিভাজনের বাণী বিতরণ করেছেন। প্রচার করেছেন জাতি ও ধর্মগত ঘৃণা এবং বিদ্বেষ।

আরও পড়ুন: বিজেপি ছেড়ে দেড় হাজার কর্মী সমর্থক তৃনমূলে যোগ দিলেন কুলতলিতে

অবশ্য মোদিজি নির্বাচনের সময় একই ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারে করে ভোট হাসিল করতে চেয়েছিলেন। মুসলিমরা আপনাদের মহিলাদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে, ছিনিয়ে নিচ্ছে আপনাদের গরু ও মোষ। তারা অনুপ্রবেশকারী ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কি। কিন্তু তাখুব বেশি ফলদায়ক হয়নি। বরং মোদি অযোধ্যা-সহ সারা ভারতের আরও কম ভোট পেয়েছেন, কম আসনে জিতে নীতিশ ও চন্দ্রবাবু নাইডুর সমর্থন নিয়ে তিনি সরকার গড়তে পেরেছেন।

তবে মোদি এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সামনে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে যে প্রাদেশিক নির্বাচনগুলি রয়েছে, তাতে তিনি মুসলিম বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার করেই বৈতরণী পার হওয়ার আশা রা’ছেন। এটাই হবে আগামীদিনে বিজেপির স্ট্র্যাটেজি। তিনি আদিবাসী-সহ বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার পলিসি নিয়েছেন। স্বাধীনতার পুণ্য দিবসে মোদিজি কী বলেছেন, তার দিকে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোদি যে ভারতের মতো এক মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী তা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে তিনি যে আরএসএস-এর একজন স্বয়ংসেবক এবং আরএসএস-এর নীতি-আদর্শকেই তিনি রূপায়িত করে ভারতকে এক হিন্দুরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চান, তার স্পষ্ট বার্তা তিনি লালকেল্লা থেকে প্রচার করেছেন। আরএসএস-এর আর একজন স্বয়ংসেবক অটল বিহারি বাজপেয়ী কিন্তু এই বিষয়ে মোদিজির কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারতেন। তিনি কখনই এত কট্টর সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করেননি।

মোদিজি বলেন, আরএসএস-এর (যে সংগঠনটি স্বাধীন ভারতে তিন তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছিল) ১০০ বছর পূর্তিকে শুধু প্রশংসা নয়, মোদি ‘সার্ভিস টু দা ন্যাশন’ বা ‘দেশ-সেবা’ বলে আখ্যায়িত করেন। মোদিজি এরপরই একটি হাই পাওয়ারড মিশন বা উচ্চ পর্যায়ের মিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেন যা ভারতের জনবিন্যাসকে পরিবর্তিত করার ষড়যন্ত্রকে রুখে দেবে। মোদিজির ১০৩ মিনিটের রেকর্ড ভঙ্গকারী ভাষণে তিনি আরএসএস-এর ব্যাপক প্রশংসা করেন।

এর আগে দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লা থেকে এই ধরনের ভাষণ দেননি। তিনি বিশেষ জোর দিয়ে ঘুসপেটিয়া অর্থাৎ অনুপ্রদেশকারীদের কথা তুলে ধরেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিহারে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যে ভোটার লিস্টে ব্যাপক সংশোধনী করা হচ্ছে (এসআইআর), তার প্রেক্ষাপটে মোদি এই কথাগুলি বলেছেন। অর্থাৎ বিজেপির লক্ষ্য হচ্ছে, শুধু বিহার নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই এসআইআর করা যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।

বিহারে দেখা গেছে, মূলত দলিত, তপশিলি, আদিবাসী এবং বিশেষ করে মুসলিমদের এসআইআর-এর কবজায় ফেলা হয়েছে। বিহার এসআইআর-কে বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধি ‘ভোট চুরি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মোদি বলেন, আর আমি দেশকে একটা বিশেষ উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে দেশের জনবিন্যাসকে বদল করে দেওয়ার উদ্দেশে। এক নতুন সংকটের বীজ ইতিমধ্যেই বপন করা হয়েছে।

‘ঘুসপেটিয়া এবং অবৈধ মাইগ্রান্ট বা পরিযায়ীরা আমার দেশের তরুণদের জীবন-জীবিকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এটা কোনও মতেই সহ্য করব না। এই অনুপ্রবেশকারীরা সরল আদিবাসী মানুষজনকে ভুল বোঝাচ্ছে এবং তাদের জমি দ’ল করে নিচ্ছে। দেশ এই বিষয়টি কোনোক্রমেই বরদাশ্ত করবে না।’

মোদি আরও বলেন, সীমান্ত অঞ্চলে জনবিন্যাসের পরিবর্তন দেশের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি ও বিপদ স্বরূপ এবং তা সংকট তৈরি করছে দেশের ঐক্য এবং বিকাশের জন্য। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোদি সম্ভবত এই ঘোষণাটি করেছেন আরএসএস-কে তোয়াজ ও খুশি করার জন্য। আর পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও বিহারে যে নির্বাচন হতে চলেছে, তাতে এই গেরুয়া দলের এজেন্ডা কী হবে তাও মোদিজির ভাষণ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি অনুপ্রদেশকারী’দের যে ধুয়া তোলা হয়েছে, তার মূল লক্ষ্য সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলিতে নির্বাচনে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে জয় হাসিল করা।

ভারতের বিরোধী দলগুলি লালকেল্লায় এই ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে মোদিকে ভারত নয় বরং আরএসএস-এর প্রধানমন্ত্রী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর বিশেষ করে সংখ্যালঘুরা এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির ভারতীয় নাগরিক মুসলিমদের এসআইআর-এর নামে যে প্রবল হয়রানি ও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগের মধ্যে পড়তে হবে, তা মোদির ভাষণ থেকে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলার নির্বাচনে বিজেপির এজেন্ডাও স্থির করে দিলেন মোদি

আপডেট : ১৭ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : লালকেল্লা। ভারতের সম্রাট শাহজাহান দিল্লিতে ভারত শাসনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে এই কেল্লা বা ফোর্ট নির্মাণ করেছিলেন। এখানে থাকত হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়ে গঠিত মোগল সেনাবাহিনীও। লালকেল্লার গৌরব গাঁথার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের আজাদি সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস এবং তার মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তান্ত।

এখানেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনা-নায়কদের বিচার করেছিল সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা। আর তার বিরুদ্ধে সারা উপমহাদেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এই সেনা-নায়কদের মধ্যে একজন ছিলেন মুসলিম (শাহ নওয়াজ খান), দ্বিতীয় জন হিন্দু (প্রেম কুমার সহগাল) আর তৃতীয়জন ছিলেন শি’ (গুরবকশ সিং ধিলন)। একদিকে তাঁরা ছিলেন সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের আজাদি সংগ্রামের প্রতীক, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতের ঐক্য ও অ’ণ্ডতার অসামান্য নিদর্শন।

আরও পড়ুন: কংগ্রেসের চাপেই গব্বর সিং ট্যাক্স কমাচ্ছেন মোদি: জয়রাম

আর ভারতের স্বাধীনতার ঝান্ডা প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল প্রথম উত্তোলন করেছিলেন এই লালকেল্লা থেকেই। তারপর প্রত্যেক স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে থাকেন। দেশকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিবসের এই ভাষণ বিশেষ ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুন: দু কেন্দ্রে তালিকায় নাম, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রীর নাম বাদ নয় কেন? তেজস্বী

আরএসএস-এর স্বয়ংসেবক ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি এই ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী রেড ফোর্ট থেকেই বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এবারের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে আসীন নরেন্দ্র মোদি যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে পুরো দেশ স্তম্ভিত। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার পরিবর্তে লালকেল্লা থেকে বিভাজনের বাণী বিতরণ করেছেন। প্রচার করেছেন জাতি ও ধর্মগত ঘৃণা এবং বিদ্বেষ।

আরও পড়ুন: বিজেপি ছেড়ে দেড় হাজার কর্মী সমর্থক তৃনমূলে যোগ দিলেন কুলতলিতে

অবশ্য মোদিজি নির্বাচনের সময় একই ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষ প্রচারে করে ভোট হাসিল করতে চেয়েছিলেন। মুসলিমরা আপনাদের মহিলাদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে, ছিনিয়ে নিচ্ছে আপনাদের গরু ও মোষ। তারা অনুপ্রবেশকারী ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কত কি। কিন্তু তাখুব বেশি ফলদায়ক হয়নি। বরং মোদি অযোধ্যা-সহ সারা ভারতের আরও কম ভোট পেয়েছেন, কম আসনে জিতে নীতিশ ও চন্দ্রবাবু নাইডুর সমর্থন নিয়ে তিনি সরকার গড়তে পেরেছেন।

তবে মোদি এবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সামনে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে যে প্রাদেশিক নির্বাচনগুলি রয়েছে, তাতে তিনি মুসলিম বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িকতাকে হাতিয়ার করেই বৈতরণী পার হওয়ার আশা রা’ছেন। এটাই হবে আগামীদিনে বিজেপির স্ট্র্যাটেজি। তিনি আদিবাসী-সহ বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার পলিসি নিয়েছেন। স্বাধীনতার পুণ্য দিবসে মোদিজি কী বলেছেন, তার দিকে একবার নজর দেওয়া যেতে পারে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোদি যে ভারতের মতো এক মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী তা সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে তিনি যে আরএসএস-এর একজন স্বয়ংসেবক এবং আরএসএস-এর নীতি-আদর্শকেই তিনি রূপায়িত করে ভারতকে এক হিন্দুরাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চান, তার স্পষ্ট বার্তা তিনি লালকেল্লা থেকে প্রচার করেছেন। আরএসএস-এর আর একজন স্বয়ংসেবক অটল বিহারি বাজপেয়ী কিন্তু এই বিষয়ে মোদিজির কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারতেন। তিনি কখনই এত কট্টর সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করেননি।

মোদিজি বলেন, আরএসএস-এর (যে সংগঠনটি স্বাধীন ভারতে তিন তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছিল) ১০০ বছর পূর্তিকে শুধু প্রশংসা নয়, মোদি ‘সার্ভিস টু দা ন্যাশন’ বা ‘দেশ-সেবা’ বলে আখ্যায়িত করেন। মোদিজি এরপরই একটি হাই পাওয়ারড মিশন বা উচ্চ পর্যায়ের মিশন গঠনের কথা ঘোষণা করেন যা ভারতের জনবিন্যাসকে পরিবর্তিত করার ষড়যন্ত্রকে রুখে দেবে। মোদিজির ১০৩ মিনিটের রেকর্ড ভঙ্গকারী ভাষণে তিনি আরএসএস-এর ব্যাপক প্রশংসা করেন।

এর আগে দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লা থেকে এই ধরনের ভাষণ দেননি। তিনি বিশেষ জোর দিয়ে ঘুসপেটিয়া অর্থাৎ অনুপ্রদেশকারীদের কথা তুলে ধরেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিহারে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যে ভোটার লিস্টে ব্যাপক সংশোধনী করা হচ্ছে (এসআইআর), তার প্রেক্ষাপটে মোদি এই কথাগুলি বলেছেন। অর্থাৎ বিজেপির লক্ষ্য হচ্ছে, শুধু বিহার নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই এসআইআর করা যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হবে।

বিহারে দেখা গেছে, মূলত দলিত, তপশিলি, আদিবাসী এবং বিশেষ করে মুসলিমদের এসআইআর-এর কবজায় ফেলা হয়েছে। বিহার এসআইআর-কে বিরোধী দলের নেতা রাহুল গান্ধি ‘ভোট চুরি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মোদি বলেন, আর আমি দেশকে একটা বিশেষ উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে দেশের জনবিন্যাসকে বদল করে দেওয়ার উদ্দেশে। এক নতুন সংকটের বীজ ইতিমধ্যেই বপন করা হয়েছে।

‘ঘুসপেটিয়া এবং অবৈধ মাইগ্রান্ট বা পরিযায়ীরা আমার দেশের তরুণদের জীবন-জীবিকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। এটা কোনও মতেই সহ্য করব না। এই অনুপ্রবেশকারীরা সরল আদিবাসী মানুষজনকে ভুল বোঝাচ্ছে এবং তাদের জমি দ’ল করে নিচ্ছে। দেশ এই বিষয়টি কোনোক্রমেই বরদাশ্ত করবে না।’

মোদি আরও বলেন, সীমান্ত অঞ্চলে জনবিন্যাসের পরিবর্তন দেশের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি ও বিপদ স্বরূপ এবং তা সংকট তৈরি করছে দেশের ঐক্য এবং বিকাশের জন্য। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মোদি সম্ভবত এই ঘোষণাটি করেছেন আরএসএস-কে তোয়াজ ও খুশি করার জন্য। আর পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও বিহারে যে নির্বাচন হতে চলেছে, তাতে এই গেরুয়া দলের এজেন্ডা কী হবে তাও মোদিজির ভাষণ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, সম্প্রতি ‘বাংলাদেশি অনুপ্রদেশকারী’দের যে ধুয়া তোলা হয়েছে, তার মূল লক্ষ্য সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলিতে নির্বাচনে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে জয় হাসিল করা।

ভারতের বিরোধী দলগুলি লালকেল্লায় এই ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে মোদিকে ভারত নয় বরং আরএসএস-এর প্রধানমন্ত্রী বলে আখ্যায়িত করেছেন। আর বিশেষ করে সংখ্যালঘুরা এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির ভারতীয় নাগরিক মুসলিমদের এসআইআর-এর নামে যে প্রবল হয়রানি ও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগের মধ্যে পড়তে হবে, তা মোদির ভাষণ থেকে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন।