০২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উৎসবের আনন্দে সেজে উঠেছে পার্কস্ট্রিট, ‘ভুললে চলবে না কোভিডবিধি’ জানালেন চিকিৎসকেরা

বিপাশা চক্রবর্তী
  • আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার
  • / 72

আলো ঝলমলে পার্ক স্ট্রিট...। ছবি পুবের কলম-এর চিত্র সাংবাদিক সন্দীপ সাহা

করোনা ও ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্দ্ধমান।  দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা  ৩৫৮।  বড়দিন ও নিউ ইয়ার্স-এর সময়ে সতর্ক না হলে বড়সড় বিপদের হাত থেকে নিস্তার নেই। ডেল্টা সংক্রমণের সেই ভয়ংকর দিনগুলোর কথা মাথায় রেখে এখনই সাবধান হতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। লিখছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

আরও পড়ুন: সুস্থভাবে বাঁচতে তামাক বর্জন করতেই হবে, নো-টোবাকো দিবসে বার্তা চিকিৎসকদের

চলছে বড়দিনের উৎসব। এই উৎসব চলবে পুরো শীতকাল জুড়ে। চিড়িয়াখানা– জাদুঘর– সায়েন্স সিটি– ইকোপার্ক– হস্তশিল্প মেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মল– পিকনিক স্পট সব জায়গায় লোকের ভিড় বাড়ছে। অনেকে বেরিয়ে পড়ছেন এদিক-ওদিক ছুটি কাটাতে। দিঘা– মন্দারমণি– সুন্দরবনের হোটেলে যেন ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই রব। আর এসব ছবিই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন: পার্ক স্ট্রিটের মিষ্টির দোকানে আগুন! পার্ক হোটেলের উল্টোদিকের দোকানে আগুন, ঘটনাস্থলে দমকলের ৪টি ইঞ্জিন

 

আরও পড়ুন: মেগা বৈঠক, চিকিৎসকদের ভাতা- বেতন বাড়ালেন মমতা

উৎসবের আনন্দে সেজে উঠেছে পার্কস্ট্রিট, 'ভুললে চলবে না কোভিডবিধি' জানালেন চিকিৎসকেরা
উৎসব মুখর কলকাতা…। পার্কস্ট্রিটের রাস্তায় মানুষের ঢল…।। ছবি-সন্দীপ সাহা

কারণ ওদিকে বাড়ছে করোনা ও তার নতুন রূপ ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকেও এর মধ্যে জনগনকে কোভিডবিধি মেনে চলার পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ শেষ করার। এছাড়া বাচ্চাদের ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বুস্টার ডোজের ব্যবস্থা করারও আবেদন জানিয়েছে।

 

দু বছর ধরে সারা বিশ্ব এক ক্ষুদে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। সেই লড়াইয়ে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মারণ ক্ষমতা থেকে বাঁচার জন্য ভ্যাকসিন এসেছে। তাছাড়া মাস্ক– স্যানিটাইজার– দূরত্ব মানার ব্যাপার তো আছেই। সেই শত্রুও মানুষকে বারবার নিজের রূপ বদলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কুণাল সরকার জানান– ‘এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে আগের ডেল্টা প্রজাতির ভাইরাসের তুলনায় এই ভাইরাস তুলনায় কম বিপজ্জনক। উপসর্গ বলতে গলা ব্যথা আর মাথার যন্ত্রণা ছাড়া প্রথম অবস্থায় কিছু প্রকাশ পায় না। কিন্তু সমস্যা হল এর সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। চিন্তা সেখানেই। কোভিড বিধি না মেনে ভিড়ে গেলে একবার যদি আবার এই সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে তাহলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আমরা নিশ্চয়ই কেউ সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। কাজেই সাবধান হতে হবে এখনই’।

কাজেই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পার্ক স্ট্রিটে যাওয়া নয়– বাড়ির মধ্যেই সেলিব্রেশন করতে হবে। আমরা কেউ চাই না ফের লকডাউন হোক। ঘরবন্দি হয়ে পড়ুক সবাই। তাই বড় জমায়েত যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। আর সুস্থ থাকলে পরের বছর ভালভাবে বড়দিন পালন করা যাবে। এবছর না হয় একটু কমই আনন্দ হল।

এর মধ্যে ভারতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৫৮।  দিল্লি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি বড়দিন ও নিউ ইয়ার্সের সমস্ত জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমাদের রাজ্যে এখনও তেমন নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও নিজেদের সাবধানতা মেনে চলতে হবে।

যদিও অনেকেরই বক্তব্য– আমরা তো ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই নিয়েছি। তাহলে আর ভয় কীসের?

এর উত্তরে ডা. ইন্দ্রনীল সাহা জানান– ‘ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে প্রায় বছর খানেক হল। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার মেয়াদ খুব বেশি হলে দশ মাস থাকে। সেদিক থেকে যারা প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের অ্যান্টিবডির ক্ষমতা কমতে শুরু হওয়ার কথা। আর এখনও বুস্টার ডোজের কোনও কথা শোনা যাচ্ছে না। তার ওপর ওই ভ্যাকসিন কার্যকরী ছিল করোনার ডেল্টা প্রজাতির বিরুদ্ধে। তা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কাজ করবে কি করবে না সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নয়। কাজেই ভ্যাকসিন নেওয়া আছে বলে নিশ্চিন্ত থাকার কোনও কারণ নেই। তাছাড়া অনেকেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাননি। তাদের দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া দরকার’।

তাহলে এই উৎসবের আবহে নিজেদের রক্ষা করব কীভাবে?

ডা. সাহার মতে– প্রথম কথা হল ভিড় এড়িয়ে চলা। বড়দিনে বা নিউ ইয়ার্সে যেখানে অনেক লোক একত্রিত হন সেই জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরের বাইরে বেরনোর সময় ঠিকমতো মাস্ক পরতে হবে। কোনও বাহানায় তার অন্যথা করা চলবে না। বারবার স্যানিটাইজার ব্যবহার ও বাইরে থেকে ফিরে অবশ্যই সাবান জল দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাইরে থাকাকালীন চোখ– নাক– মুখে হাত দেওয়া চলবে না। আর এ সময়ে বাচ্চাদের দিকেও বাড়তি নজর দিতে হবে।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

উৎসবের আনন্দে সেজে উঠেছে পার্কস্ট্রিট, ‘ভুললে চলবে না কোভিডবিধি’ জানালেন চিকিৎসকেরা

আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, শুক্রবার

করোনা ও ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্দ্ধমান।  দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা  ৩৫৮।  বড়দিন ও নিউ ইয়ার্স-এর সময়ে সতর্ক না হলে বড়সড় বিপদের হাত থেকে নিস্তার নেই। ডেল্টা সংক্রমণের সেই ভয়ংকর দিনগুলোর কথা মাথায় রেখে এখনই সাবধান হতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। লিখছেন শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

আরও পড়ুন: সুস্থভাবে বাঁচতে তামাক বর্জন করতেই হবে, নো-টোবাকো দিবসে বার্তা চিকিৎসকদের

চলছে বড়দিনের উৎসব। এই উৎসব চলবে পুরো শীতকাল জুড়ে। চিড়িয়াখানা– জাদুঘর– সায়েন্স সিটি– ইকোপার্ক– হস্তশিল্প মেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মল– পিকনিক স্পট সব জায়গায় লোকের ভিড় বাড়ছে। অনেকে বেরিয়ে পড়ছেন এদিক-ওদিক ছুটি কাটাতে। দিঘা– মন্দারমণি– সুন্দরবনের হোটেলে যেন ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই রব। আর এসব ছবিই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন: পার্ক স্ট্রিটের মিষ্টির দোকানে আগুন! পার্ক হোটেলের উল্টোদিকের দোকানে আগুন, ঘটনাস্থলে দমকলের ৪টি ইঞ্জিন

 

আরও পড়ুন: মেগা বৈঠক, চিকিৎসকদের ভাতা- বেতন বাড়ালেন মমতা

উৎসবের আনন্দে সেজে উঠেছে পার্কস্ট্রিট, 'ভুললে চলবে না কোভিডবিধি' জানালেন চিকিৎসকেরা
উৎসব মুখর কলকাতা…। পার্কস্ট্রিটের রাস্তায় মানুষের ঢল…।। ছবি-সন্দীপ সাহা

কারণ ওদিকে বাড়ছে করোনা ও তার নতুন রূপ ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের পক্ষ থেকেও এর মধ্যে জনগনকে কোভিডবিধি মেনে চলার পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ শেষ করার। এছাড়া বাচ্চাদের ভ্যাকসিন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বুস্টার ডোজের ব্যবস্থা করারও আবেদন জানিয়েছে।

 

দু বছর ধরে সারা বিশ্ব এক ক্ষুদে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। সেই লড়াইয়ে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মারণ ক্ষমতা থেকে বাঁচার জন্য ভ্যাকসিন এসেছে। তাছাড়া মাস্ক– স্যানিটাইজার– দূরত্ব মানার ব্যাপার তো আছেই। সেই শত্রুও মানুষকে বারবার নিজের রূপ বদলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কুণাল সরকার জানান– ‘এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে আগের ডেল্টা প্রজাতির ভাইরাসের তুলনায় এই ভাইরাস তুলনায় কম বিপজ্জনক। উপসর্গ বলতে গলা ব্যথা আর মাথার যন্ত্রণা ছাড়া প্রথম অবস্থায় কিছু প্রকাশ পায় না। কিন্তু সমস্যা হল এর সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেশি। চিন্তা সেখানেই। কোভিড বিধি না মেনে ভিড়ে গেলে একবার যদি আবার এই সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে তাহলে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে। আমরা নিশ্চয়ই কেউ সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। কাজেই সাবধান হতে হবে এখনই’।

কাজেই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পার্ক স্ট্রিটে যাওয়া নয়– বাড়ির মধ্যেই সেলিব্রেশন করতে হবে। আমরা কেউ চাই না ফের লকডাউন হোক। ঘরবন্দি হয়ে পড়ুক সবাই। তাই বড় জমায়েত যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। আর সুস্থ থাকলে পরের বছর ভালভাবে বড়দিন পালন করা যাবে। এবছর না হয় একটু কমই আনন্দ হল।

এর মধ্যে ভারতে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৫৮।  দিল্লি ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি বড়দিন ও নিউ ইয়ার্সের সমস্ত জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমাদের রাজ্যে এখনও তেমন নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও নিজেদের সাবধানতা মেনে চলতে হবে।

যদিও অনেকেরই বক্তব্য– আমরা তো ভ্যাকসিনের দুটো ডোজই নিয়েছি। তাহলে আর ভয় কীসের?

এর উত্তরে ডা. ইন্দ্রনীল সাহা জানান– ‘ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে প্রায় বছর খানেক হল। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার মেয়াদ খুব বেশি হলে দশ মাস থাকে। সেদিক থেকে যারা প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের অ্যান্টিবডির ক্ষমতা কমতে শুরু হওয়ার কথা। আর এখনও বুস্টার ডোজের কোনও কথা শোনা যাচ্ছে না। তার ওপর ওই ভ্যাকসিন কার্যকরী ছিল করোনার ডেল্টা প্রজাতির বিরুদ্ধে। তা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কাজ করবে কি করবে না সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নয়। কাজেই ভ্যাকসিন নেওয়া আছে বলে নিশ্চিন্ত থাকার কোনও কারণ নেই। তাছাড়া অনেকেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ পাননি। তাদের দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া দরকার’।

তাহলে এই উৎসবের আবহে নিজেদের রক্ষা করব কীভাবে?

ডা. সাহার মতে– প্রথম কথা হল ভিড় এড়িয়ে চলা। বড়দিনে বা নিউ ইয়ার্সে যেখানে অনেক লোক একত্রিত হন সেই জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। ঘরের বাইরে বেরনোর সময় ঠিকমতো মাস্ক পরতে হবে। কোনও বাহানায় তার অন্যথা করা চলবে না। বারবার স্যানিটাইজার ব্যবহার ও বাইরে থেকে ফিরে অবশ্যই সাবান জল দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাইরে থাকাকালীন চোখ– নাক– মুখে হাত দেওয়া চলবে না। আর এ সময়ে বাচ্চাদের দিকেও বাড়তি নজর দিতে হবে।