১৫ অক্টোবর ২০২৫, বুধবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশে পুশ ব্যাক? হাই কোর্টে উঠল বড় প্রশ্ন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তলব রিপোর্ট

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার
  • / 245

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দিল্লি থেকে আটক বাংলার শ্রমিকদের কি বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে? এই গুরুতর অভিযোগে নড়ে বসেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বাংলার ছয়জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে দিল্লিতে আটক করে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে পৃথক রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী বুধবার।

ঘটনার সূত্রপাত বীরভূমের পাইকর এলাকার। গত ১৮ জুন দিল্লির রোহিনী জেলার কে. এন কাটজু থানা এলাকায় ছয়জন শ্রমিককে আটক করে দিল্লি পুলিশ। পরিবারের দাবি, কাজের সূত্রে দিল্লিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ করেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর পুলিশের তরফে জানানো হয়, ওই শ্রমিকদের বিএসএফ-এর হাতে তুলে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করানো হয়েছে। তবে, তাঁদের কোথা থেকে সীমান্তে পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। রাজ্যের শ্রম দফতরের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু কোনও তথ্য পাননি।

পরিবারের তরফে হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের করা হয় হাই কোর্টে। মামলাকারীর আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী আদালতে জানান, একটি পরিবারের আট বছরের শিশুসহ বাবা-মাকেও বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনা শুধুমাত্র বেআইনি নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান।

আরও পড়ুন: বাংলায় SSC পরীক্ষা দিতে এলেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা, রাজনৈতিক মহলে তীব্র চর্চা, নির্বিঘ্নে শেষ হওয়ায় খুশি শিক্ষামন্ত্রী

বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে আদালত প্রশ্ন তোলে—এই ঘটনার সঙ্গে ওড়িশায় আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের মামলার পার্থক্য কী? ওড়িশার ক্ষেত্রে কাউকে দেশের বাইরে পাঠানো হয়নি, অথচ দিল্লির ঘটনায় এমন গুরুতর অভিযোগ কেন উঠছে?

আরও পড়ুন: নির্বাচন আসলেই এজেন্সির দাপাদাপি বাড়ে: Mamata Banerjee

ওড়িশার ঘটনার পরও আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওড়িশার মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকে রাখার কারণ জানতে হবে—কোনও এফআইআর হয়েছে কি না, আটক করে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এখন কোথায় রয়েছেন, ইত্যাদি। এবার একই ধরনের প্রশ্ন ছুড়েছে দিল্লির দিকেও।

আরও পড়ুন: পুজোর খরচের হিসাব না দেওয়া কমিটিগুলো অনুদান পাবে না

কেন্দ্রের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদীর মাধ্যমে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিল্লির সঙ্গে যুক্ত সমন্বয় করে তদন্ত চালিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ‘‘যদি কেউ প্রকৃত বাংলাদেশি হয়, তবে নিয়ম মেনে তাঁকে ফেরত পাঠানো হোক। কিন্তু যাঁরা নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক, তাঁদের বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বিজেপির এক শীর্ষ নেতা যিনি সব বিষয়ে মন্তব্য করেন, তিনি বাংলার গরিব শ্রমিকদের প্রসঙ্গে একবারও মুখ খোলেননি। আসলে এটাই প্রমাণ করে, তাঁরা বাংলার মানুষের শত্রু।’’

পরিবারের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, তাঁরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও তাঁদের প্রিয়জনদের ফেরানোর জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

এই মামলার শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং রিপোর্ট তলব গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে রইল। এটি স্পষ্ট করেছে যে, কোনও ভারতীয় নাগরিককে নথি থাকা সত্ত্বেও বিদেশি সন্দেহে দেশ থেকে বের করে দেওয়া একান্তই অসাংবিধানিক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশের দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশে পুশ ব্যাক? হাই কোর্টে উঠল বড় প্রশ্ন, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তলব রিপোর্ট

আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দিল্লি থেকে আটক বাংলার শ্রমিকদের কি বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে? এই গুরুতর অভিযোগে নড়ে বসেছে কলকাতা হাই কোর্ট। বাংলার ছয়জন পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে দিল্লিতে আটক করে সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাই কোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিল্লির মুখ্যসচিবের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে পৃথক রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী বুধবার।

ঘটনার সূত্রপাত বীরভূমের পাইকর এলাকার। গত ১৮ জুন দিল্লির রোহিনী জেলার কে. এন কাটজু থানা এলাকায় ছয়জন শ্রমিককে আটক করে দিল্লি পুলিশ। পরিবারের দাবি, কাজের সূত্রে দিল্লিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ করেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর পুলিশের তরফে জানানো হয়, ওই শ্রমিকদের বিএসএফ-এর হাতে তুলে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করানো হয়েছে। তবে, তাঁদের কোথা থেকে সীমান্তে পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি বলে অভিযোগ পরিবারের। রাজ্যের শ্রম দফতরের সঙ্গেও তাঁরা যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু কোনও তথ্য পাননি।

পরিবারের তরফে হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের করা হয় হাই কোর্টে। মামলাকারীর আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী আদালতে জানান, একটি পরিবারের আট বছরের শিশুসহ বাবা-মাকেও বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনা শুধুমাত্র বেআইনি নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমান।

আরও পড়ুন: বাংলায় SSC পরীক্ষা দিতে এলেন বিজেপি শাসিত রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা, রাজনৈতিক মহলে তীব্র চর্চা, নির্বিঘ্নে শেষ হওয়ায় খুশি শিক্ষামন্ত্রী

বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি ঋতব্রতকুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানিতে আদালত প্রশ্ন তোলে—এই ঘটনার সঙ্গে ওড়িশায় আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের মামলার পার্থক্য কী? ওড়িশার ক্ষেত্রে কাউকে দেশের বাইরে পাঠানো হয়নি, অথচ দিল্লির ঘটনায় এমন গুরুতর অভিযোগ কেন উঠছে?

আরও পড়ুন: নির্বাচন আসলেই এজেন্সির দাপাদাপি বাড়ে: Mamata Banerjee

ওড়িশার ঘটনার পরও আদালত সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে ওড়িশার মুখ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের আটকে রাখার কারণ জানতে হবে—কোনও এফআইআর হয়েছে কি না, আটক করে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এখন কোথায় রয়েছেন, ইত্যাদি। এবার একই ধরনের প্রশ্ন ছুড়েছে দিল্লির দিকেও।

আরও পড়ুন: পুজোর খরচের হিসাব না দেওয়া কমিটিগুলো অনুদান পাবে না

কেন্দ্রের আইনজীবী ধীরাজ ত্রিবেদীর মাধ্যমে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিল্লির সঙ্গে যুক্ত সমন্বয় করে তদন্ত চালিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম। তাঁর দাবি, ‘‘যদি কেউ প্রকৃত বাংলাদেশি হয়, তবে নিয়ম মেনে তাঁকে ফেরত পাঠানো হোক। কিন্তু যাঁরা নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের নাগরিক, তাঁদের বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বিজেপির এক শীর্ষ নেতা যিনি সব বিষয়ে মন্তব্য করেন, তিনি বাংলার গরিব শ্রমিকদের প্রসঙ্গে একবারও মুখ খোলেননি। আসলে এটাই প্রমাণ করে, তাঁরা বাংলার মানুষের শত্রু।’’

পরিবারের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, তাঁরা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও তাঁদের প্রিয়জনদের ফেরানোর জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

এই মামলার শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং রিপোর্ট তলব গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে রইল। এটি স্পষ্ট করেছে যে, কোনও ভারতীয় নাগরিককে নথি থাকা সত্ত্বেও বিদেশি সন্দেহে দেশ থেকে বের করে দেওয়া একান্তই অসাংবিধানিক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশের দিকে নজর থাকবে গোটা দেশের।