সিভিল সার্ভিসে Rank ১৫, নজির মুর্শিদাবাদের বিড়ি শ্রমিকের ছেলে নবিরুলের

- আপডেট : ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, শনিবার
- / 10
মুহাম্মদ মুস্তাক আলি, জঙ্গিপুর: রাজ্যের মধ্যে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদ। এই জেলারই সুতি ব্লক আরও পিছিয়ে বলে দাবি করা হয়। আর এই সুতি ব্লকেরই মহেন্দ্রপুর গ্রামের নবিরুল ইসলাম রাজ্য সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতে ১৫তম স্থান দখল করে নজির গড়েছেন।
নবিরুল ইসলাম আর্থিকভাবে অত্যন্ত পশ্চাদপদ পরিবার থেকে কঠোর সংগ্রাম করে এই জায়গাতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। বৃহস্পতিবার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই কার্যত অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন নবিরুল ইসলাম এবং তাঁর পরিবার।
হতদরিদ্র পরিবারের এরফান আলি এবং ফিরোজা বিবি দম্পত্তির চার ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে মেজো সন্তান নবিরুল ইসলাম। ছেলের সাফল্যে গর্বিত মা ফিরোজা বিবি শোনালেন নবিরুলের দীর্ঘ সংগ্রামের বহু কথা। মায়ের কথায়, একটা সময় বাড়ির আর্থিক অবস্থা ছিল নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো। বিড়ি বেঁধে কোনওরকমে দিন গুজরান হতো সকলের। তিনি আরও জানান, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে নাবিরুল নিজেও বিড়ি বাঁধতে বসে পড়ত।
২০০৫ সালে চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেই অরাঙ্গাবাদ হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন লড়াকু এই কৃতী। ২০০৭ সালে একই স্কুল থেকে সাফল্যের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ন হন। এরপরে ফিজিক্স অনার্স নিয়ে কলকাতার সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারনে মাঝপথেই সিটি কলেজের পাট চুকিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয়। তবে হাল ছাড়েননি। ২০১৩ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটেক কমপ্লিট করে একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে তিন বছরের চাকরি নেন নবিরুল ইসলাম। এই চাকরি কিছুটা হলেও পরিবারের আর্থিক স্বাচ্ছ¨ এনে দেয়। কোম্পানির চাকরি ছেড়ে যোগ দেন ধুলিয়ান পুরসভার হেল্থ সেন্টারে। ২০১৯ সালে কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক হিসেবে কাজে যোগ দেন।
নবিরুল ইসলাম জানান, এইসব কাজের মধ্যেই চলতে থাকে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতিতে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। সেই পরীক্ষা হয় ২০২১ সালে। যার ফল বের হয় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি।
প্রত্যন্ত এলাকার, আর্থিক দিক থেকে অত্যন্ত পশ্চাদপদ পরিবারের সন্তানের এই সাফল্যে খুশির হাওয়া এলাকায়। মুর্শিদাবাদের অন্যতম কৃতি সন্তান নবিরুল ইসলামের বক্তব্য, লেখাপড়ায় অদম্য আগ্রহ এবং স্থির লক্ষ্য থাকলে সাফল্যকে যে ছোঁয়া যায় সেটা ছোট বয়স থেকেই অনুধাবন করতাম। তাঁর আরও বক্তব্য, কোনও সময় হতাশাকে প্রশ্রয় দিতে নেই। এই সাফল্যের পেছনে নবিরুল ইসলাম সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মহান আল্লাহর প্রতি। এরপরেই তিনি সাফল্যের কারিগর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মা ফিরোজা বিবিকে। রত্নগর্ভা মা ফিরোজা বিবির প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা ফুটে উঠেছে কৃতী সন্তানের বক্তব্যে।
নবিরুলের এই সাফল্যের প্রশংসা করেছেন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান, বিধায়ক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ আলি, জেলার অন্যতম বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ সোহরাব, মুর্শিদাবাদ জনবিকাশ সমিতির সভাপতি সাবিনা ইয়াসমিন-সহ সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষজন। সাংসদ ‘লিলুর রহমান বলেন, লক্ষ্য যদি স্থির থাকে এবং পরিশ্রম যদি কঠোর হয় তবে যে কোনও বাধাকে যে অতিক্রম করা যায়, নবিরুল তার অনন্য উদাহরণ। আমি তাঁর সাফল্য কামনা করছি।