০২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহার্ঘ্য হচ্ছে চাল, কী বলছেন সংশ্লিষ্ট মহল

সুস্মিতা
  • আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, শনিবার
  • / 59

আবুল খায়েরঃ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই নাজেহাল আমজনতা। তার মধ্যেই আচমকা গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো চড়া হচ্ছে চালের দাম। কলকাতা থেকে জেলা সর্বত্র একই ছবি। আর এই দাম বৃদ্ধিতে মাসের বাজার হিসেব করে গুণতে হচ্ছে বেশ কিছুটা বাড়তি টাকা। যাতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। গত কয়েক দিনে কেজি প্রতি গড়ে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা। কী কারণে এই চালের দাম বৃদ্ধি তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। কম জোগানকেই কারণ হিসাবে মনে করছে কেউ কেউ। প্রশ্ন উঠছে টাস্কফোর্সের নজরদারি নিয়ে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত একমাস আগেও প্রতি কেজি বাঁশকাঠি চালের দাম ছিল ৬০ টাকা বর্তমানে তার দাম ৭৫ টাকা, মিনিকিট চালের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বর্তমানে তার দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, গোবিন্দভোগ চালের দাম ছিল ৮০ টাকা এখন তার দাম ১০০ টাকা, রত্না চালের দাম ছিল ৩৮ টাকা যা এখন কিনতে গেলে দিতে হচ্ছে ৪৫ টাকা। প্রতি কেজিতে ছত্রিশ প্রজাতি চালের দাম ছিল ২৭ থেকে ২৮ টাকা, যা এখন কিনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা দামে। স্বর্ণলঘু চালের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা যা কিনতে হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৮ কেজি দরে।আমজনতার অভিযোগ, রাজ্য সরকারের তৈরি করা টাস্কফোর্সের নজরদারি নেই। সেই সুযোগে ইচ্ছা মতো চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Heat wave পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায়, আবহাওয়া নিয়ে কী জানাল হাওয়া অফিস?

কলকাতার শিয়ালদহের কাছে বৈঠকখানা বাজারে চাল কিনছিলেন তপসিয়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা। চালের এই হঠাৎ দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এভাবে যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অসহায় হয়ে পড়বে। যে যার মতো লুটে নিয়ে নিচ্ছে।” মানিক নামে এক বিক্রেতা, বলেন, “আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেরকম দামে কিনছি সেই রকম বিক্রি করছি।” কেন চালের দাম বাড়ছে?- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তা নিয়ে আমার কোনও আইডিয়া নেই। খরিদ্দারও আমাদের জিজ্ঞেস করছে একই প্রশ্ন। আমি তাঁদের বলছি এই দামে কিনছি এই দামে বিক্রি করছি। কেন দাম বাড়ছে তা বলতে পারবো না।” অন্যদিকে শম্ভু সাউ নামে এক বিক্রেতা বলেন, “দাম বেড়েছে বলে আমাদের লাভ বেশি হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়।” আমদানি কম হওয়ার কারণেই এই দামবৃদ্ধি বলে মনে করেন শম্ভু। মনিগোপাল দে নামে এক পাইকারি চাল বিক্রেতা বলেন, মহাজনেরা দাম কম দিচ্ছে না আমরা কী করবো? পাশাপাশি তিনি বলেন, ধানের দাম বেড়ে যাচ্ছে সরকার বেশি দামে ধান কিনছে তাই হয়তো দাম বাড়ছে।

আরও পড়ুন: স্বস্তি দিতে আসছে বৃষ্টি, দিনক্ষণ জানিয়ে দিল আবহাওয়া দফতর।Weather Update

এ বিষয়ে টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “চালের দাম বেড়েছে এই বিষয়টি গত তিন চারদিনে আমাদের নজরে এসেছে। বিভাগীয় স্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মূলত বাঁশকাঠি, মিনিকেট, গোবিন্দভোগের মতো দামি চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চালগুলি পশ্চিমবঙ্গের দু’একটি জায়গা থেকে উৎপন্ন হয় এবং সারা দেশে রপ্তানি হয়। পাশাপাশি এই চালগুলি সাধারণত সম্পন্ন পরিবারে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাধারণ চালগুলির দাম তেমনভাবে বৃদ্ধি পায় নি।” রবীন্দ্রনাথ বাবু আরও বলেন, “মূলত ধান শেষ হয়ে গেছে। এপ্রিল মাসে নতুন ধান উঠবে। তারপরেই এই সমস্যার সমাধান হবে। এই রিপোর্টটা আমরা এগ্রি মার্কেটিং দফতর কে জানিয়েছি। তবে বিষয়টির দিকে নজর রেখেছি। তবে বাজার পরিদর্শনের যাওয়ার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের উপর নির্ভর করছে।” অন্যদিকে বেঙ্গল রাইস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালিক বলেন, “চালের দাম খুব বেশি বৃদ্ধি পায় নি। যে চালটা প্রতি কেজিতে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম সেটি ৫০ থেকে ৫২ টাকাতে বিক্রি করছি। এবার কলকাতার বাজারে গিয়ে হোলসেলার টু রিটেলার কত পার্সেন্ট বাড়িয়ে বিক্রি করবে তার জন্য তো আমাদের রাইস মিলের উপর প্রভাব পড়ার কথা নয়।” তবে ঘটনা যাইহোক চালের দাম কমাতে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ভুক্তভোগীরা।

আরও পড়ুন: মালদা ও মুর্শিদাবাদে নদীভাঙন রোধে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে রাজ্য সরকার

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মহার্ঘ্য হচ্ছে চাল, কী বলছেন সংশ্লিষ্ট মহল

আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, শনিবার

আবুল খায়েরঃ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই নাজেহাল আমজনতা। তার মধ্যেই আচমকা গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো চড়া হচ্ছে চালের দাম। কলকাতা থেকে জেলা সর্বত্র একই ছবি। আর এই দাম বৃদ্ধিতে মাসের বাজার হিসেব করে গুণতে হচ্ছে বেশ কিছুটা বাড়তি টাকা। যাতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। গত কয়েক দিনে কেজি প্রতি গড়ে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টাকা। কী কারণে এই চালের দাম বৃদ্ধি তা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। কম জোগানকেই কারণ হিসাবে মনে করছে কেউ কেউ। প্রশ্ন উঠছে টাস্কফোর্সের নজরদারি নিয়ে।

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত একমাস আগেও প্রতি কেজি বাঁশকাঠি চালের দাম ছিল ৬০ টাকা বর্তমানে তার দাম ৭৫ টাকা, মিনিকিট চালের দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে বর্তমানে তার দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, গোবিন্দভোগ চালের দাম ছিল ৮০ টাকা এখন তার দাম ১০০ টাকা, রত্না চালের দাম ছিল ৩৮ টাকা যা এখন কিনতে গেলে দিতে হচ্ছে ৪৫ টাকা। প্রতি কেজিতে ছত্রিশ প্রজাতি চালের দাম ছিল ২৭ থেকে ২৮ টাকা, যা এখন কিনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা দামে। স্বর্ণলঘু চালের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা যা কিনতে হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৮ কেজি দরে।আমজনতার অভিযোগ, রাজ্য সরকারের তৈরি করা টাস্কফোর্সের নজরদারি নেই। সেই সুযোগে ইচ্ছা মতো চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: Heat wave পশ্চিমাঞ্চলের ৬ জেলায়, আবহাওয়া নিয়ে কী জানাল হাওয়া অফিস?

কলকাতার শিয়ালদহের কাছে বৈঠকখানা বাজারে চাল কিনছিলেন তপসিয়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা। চালের এই হঠাৎ দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এভাবে যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ অসহায় হয়ে পড়বে। যে যার মতো লুটে নিয়ে নিচ্ছে।” মানিক নামে এক বিক্রেতা, বলেন, “আমরা পাইকারি বাজার থেকে যেরকম দামে কিনছি সেই রকম বিক্রি করছি।” কেন চালের দাম বাড়ছে?- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “তা নিয়ে আমার কোনও আইডিয়া নেই। খরিদ্দারও আমাদের জিজ্ঞেস করছে একই প্রশ্ন। আমি তাঁদের বলছি এই দামে কিনছি এই দামে বিক্রি করছি। কেন দাম বাড়ছে তা বলতে পারবো না।” অন্যদিকে শম্ভু সাউ নামে এক বিক্রেতা বলেন, “দাম বেড়েছে বলে আমাদের লাভ বেশি হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়।” আমদানি কম হওয়ার কারণেই এই দামবৃদ্ধি বলে মনে করেন শম্ভু। মনিগোপাল দে নামে এক পাইকারি চাল বিক্রেতা বলেন, মহাজনেরা দাম কম দিচ্ছে না আমরা কী করবো? পাশাপাশি তিনি বলেন, ধানের দাম বেড়ে যাচ্ছে সরকার বেশি দামে ধান কিনছে তাই হয়তো দাম বাড়ছে।

আরও পড়ুন: স্বস্তি দিতে আসছে বৃষ্টি, দিনক্ষণ জানিয়ে দিল আবহাওয়া দফতর।Weather Update

এ বিষয়ে টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “চালের দাম বেড়েছে এই বিষয়টি গত তিন চারদিনে আমাদের নজরে এসেছে। বিভাগীয় স্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মূলত বাঁশকাঠি, মিনিকেট, গোবিন্দভোগের মতো দামি চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এই চালগুলি পশ্চিমবঙ্গের দু’একটি জায়গা থেকে উৎপন্ন হয় এবং সারা দেশে রপ্তানি হয়। পাশাপাশি এই চালগুলি সাধারণত সম্পন্ন পরিবারে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাধারণ চালগুলির দাম তেমনভাবে বৃদ্ধি পায় নি।” রবীন্দ্রনাথ বাবু আরও বলেন, “মূলত ধান শেষ হয়ে গেছে। এপ্রিল মাসে নতুন ধান উঠবে। তারপরেই এই সমস্যার সমাধান হবে। এই রিপোর্টটা আমরা এগ্রি মার্কেটিং দফতর কে জানিয়েছি। তবে বিষয়টির দিকে নজর রেখেছি। তবে বাজার পরিদর্শনের যাওয়ার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের উপর নির্ভর করছে।” অন্যদিকে বেঙ্গল রাইস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালিক বলেন, “চালের দাম খুব বেশি বৃদ্ধি পায় নি। যে চালটা প্রতি কেজিতে ৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম সেটি ৫০ থেকে ৫২ টাকাতে বিক্রি করছি। এবার কলকাতার বাজারে গিয়ে হোলসেলার টু রিটেলার কত পার্সেন্ট বাড়িয়ে বিক্রি করবে তার জন্য তো আমাদের রাইস মিলের উপর প্রভাব পড়ার কথা নয়।” তবে ঘটনা যাইহোক চালের দাম কমাতে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে ভুক্তভোগীরা।

আরও পড়ুন: মালদা ও মুর্শিদাবাদে নদীভাঙন রোধে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে রাজ্য সরকার