ওয়াকফকে বিলিয়ে দিলেন ১৬০০ কোটি ডলারের সম্পত্তি
সব কিছুই আল্লাহ্র নামে দান করেছি, বিশ্বের ইতিহাসে নজির গড়লেন শেখ সুলায়মান আল রাযি

- আপডেট : ৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 858
পুবের কলম,ওয়েবডেস্কঃ ধনকুবের থেকে সাধারণ মানুষ! কথা হচ্ছে শেখ সুলায়মান আল রাযির। একসময় সউদি আরবের ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। তবে আজ সব অতীত। জীবনের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজের সমস্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ ওয়াকফ করে দিয়ে গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছেন তিনি। প্রায় ১৬০০ কোটি ডলারের সম্পত্তি দান করে দিয়েছেন আল রাযি। বলা বাহুল্য, ‘ওয়াকফ’ একটি আরবি শব্দ। কোন মুসলমান কর্তৃক তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ধর্মীয়, দাতব্য বা জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে স্থায়ীভাবে দান করাকে ওয়াকফ বলা হয়। এটি একটি চিরস্থায়ী দান, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয় এবং এর থেকে প্রাপ্ত আয় জনকল্যাণে ব্যয় করা হয়।
এক সময়ের শতকোটিটাকার মালিক শেখ সুলায়মান আল রাযি জীবনকাহিনী শুনলে চোখে জল আসা বাধ্যতামূলক। ছোটবেলায় জীবন কেটেছে বহু কষ্টে। মাত্র নয় বছর বয়সে আল খাদরা বাজারে কুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। বারো বছর বয়সে খেজুর সংগ্রহের কাজ করতেন। বিনিময়ে মাসে ৬ রিয়াল পেতেন। ছিল না কোনও ছাঁদ দেওয়া বাড়ি।
সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে উত্তপ্ত শক্ত মাঠেই ঘুমিয়ে পড়তেন তিনি। মূলত সেখানেই কোনও এক খেজুর বাগানে কাজ করতেন আল রাযি। পোশাক ছিল একটাই। জীবনের অনেক সময় খেজুর সংগ্রহ করে আতিবাহিত করেছেন তিনি। তারপর রিয়াদের এক হোটেলে ওয়েটারের কাজ করেন কিছুদিন। এরপর আমদানিকৃত কেরোসিন তেল পাইকারিতে বিক্রি করার কাজ করেন। এরপর নিজস্ব এক মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু বিয়ের জন্য তাকে তার দোকান বিক্রি করে দিতে হয়। তার জমানো সকল সঞ্চয় বিয়েতে ব্যয় হয়ে যায়। বিয়ের পর তিনি ভাই সালেহ আল আল রাযির অধীনে কাজ করতে শুরু করেন ।
১৯৭০ সালে ভাইয়ের থেকে আলাদা হয়ে মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি চালু করেন। এখান থেকে তার ভাগ্য পাল্টে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিকে সম্প্রসারণ করতে শুরু করেন তিনি। মিশর লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার ব্যবসা বাড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের তালিকাভুক্ত হন তিনি। ফোর্বসের শীর্ষ ধনকুবেরদের তালিকাতেও তাঁর নাম ছিল। তবে শুধু ১৬০০ কোটির টাকা দান করে যাননি তাঁর সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম লাভজনক ব্যাংক, ‘আল রাজি ব্যাংক’-এর শেয়ার থেকে শুরু করে নিজের রিয়েল এস্টেট, ব্যবসা, পোল্ট্রি ফার্ম সবই দান করে দিয়েছেন নবতিপর ধনকুবের। তাঁর সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ একটি ‘ওয়াকফ’ (ইসলামিক দাতব্য তহবিল)-এর অধীনে রাখা হয়েছে, যা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য সুরক্ষা এবং ধর্মের মতো দীর্ঘমেয়াদী জনহিতকর কাজে সহায়তা করবে। বাকি অংশ তিনি তাঁর সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এ সাফল্যের জন্য আমরা আমাদের দেশ, সমাজ ও মানুষের কাছে ঋণী। তাই দেশের জন্য, মানুষের জন্যও কিছু করতে হবে।’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি অর্ধেক সম্পত্তি স্ত্রী-সন্তানদের দিলেন, বাকি অর্ধেক দান করলেন। নিজের জন্য কী রাখলেন? মৃদু হেসে সোলায়মান আল-রাযি জবাব দিলেন, ‘কিছুই না।’ তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৯৫ বছর। এ জীবনে কী আর প্রয়োজন আছে? ওয়াকফ থেকে আমার থাকা-খাওয়া, যাতায়াত ও চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয়। সেটাও যত কম করা যায় আমি চেষ্টা করি।’ আমি যা কিছু দিয়েছি, আল্লহর নামে দান করে দিয়েছি।