২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুসলিমদের দানের জমিতে মন্দির

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার
  • / 992

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী

পুবের কলম, প্রতিবেদক: পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন থেকে  শুরু করে দুয়ারে সরকার প্রকল্প সম্মান পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। বাংলার দুর্গাপুজো পেয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। সদ্য শান্তিনিকতন,কে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। তারই মধ্যে দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম বিবেচিত হল মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের তরফ থেকে ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে কিরীটেশ্বরীকে। দুবাইতে বসেই বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যন্ডেলের মাধ্যমে এই খবর জানান। তিনি লেখেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কিরীটেশ্বরীকে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করেছে। দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ৭৯৫টি আবেদনের মধ্যে ২০২৩ সালের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম প্রতিযোগিতা’ হয়েছিল। সেখানেই এই নির্বাচন হয়েছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে হবে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। আমি ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানাই। জয় বাংলা!’

ভাগীরথীর পশ্চিম পারে জঙ্গলাকীর্ণ নানা মন্দির অধ্যুষিত গ্রাম কিরীটকণা। বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মনে করিয়ে দেয় পূর্ব গৌরবের স্মৃতিকথা। ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ৭৯৫টি গ্রাম আবেদন করে। তার মধ্যে থেকে সেরা গ্রাম হিসেবে মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরীকে নির্বাচিত করা হয় । কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের তরফ থেকে ২৭ শে সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাসিন্দাদের সাহচর্যে রক্ষিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মের শক্তিপীঠ। এর পরিচালন কমিটিতেও রয়েছেন একাধিক মুসলিম সদস্য। আর সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গ্রামের মুকুটে এসেছে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দির ভেঙে যায়। কথিত আছে, এই গ্রামে সতীর মুকুট বা কিরীট পড়েছিল। তাই দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হতো। কিন্তু উনবিংশ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন করে মন্দির নির্মাণ করেন।  এই মন্দিরের জন্য জমি দান করেছিলেন স্থানীয় মুসলিমরা । প্রত্যেক পৌষ মাসে মহামায়ার পুজো হয়। মন্দির চত্বরের এই জমিতে মেলা বসে। মুর্শিদাবাদের দহপাড়া রেল স্টেশন থেকে পাঁচ কিমি দূরে কিরীটেশ্বরী গ্রাম। সেখানে রয়েছে প্রাচীন মন্দির। কথিত আছে, এই গ্রামে সতীর মুকুট বা কিরীট পড়েছিল। তাই দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হতো। ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দির ভেঙে যায়। কিন্তু উনবিংশ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন করে মন্দির নির্মাণ করেন। তারপর মন্দিরের জন্য জমি দান করেছিলেন স্থানীয় মুসলিম ধর্মাবলম্বীর মানুষজন বলে জানা যায়। প্রত্যেক পৌষ মাসে মহামায়ার পুজো হয়। তার জন্য মন্দির চত্বরের এই জমিতে মেলা বসে। আয়োজনের মূল দায়িত্বে থাকেন মুসলিম মানুষজনই।

কিরিটেশ্বরী মন্দির হল হিন্দু ধর্মের ৫১ পীঠের অন্যতম  অন্যতম এক পীঠ। পুবের কলমকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান। কিরীটেশ্বরীকে  হেরিটেজ তকমা দেওয়ারও দাবিও জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তৃণমুল সাংসদ জানান এই ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রাচীন মন্দিরটির সংস্কারের  জন্য তিনি সাংসদ তহবিল থেকে ইতিমধ্যেই ১৫ লক্ষ টাকা দান করেছেন। ভবিষ্যতেও গৃহ নির্মাণ সহ অন্যান্য কাজে তিনি আপন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দেবেন।

Tag :

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

মুসলিমদের দানের জমিতে মন্দির

আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার

পুবের কলম, প্রতিবেদক: পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন থেকে  শুরু করে দুয়ারে সরকার প্রকল্প সম্মান পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে। বাংলার দুর্গাপুজো পেয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি। সদ্য শান্তিনিকতন,কে হেরিটেজ তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো। তারই মধ্যে দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম বিবেচিত হল মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের তরফ থেকে ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে কিরীটেশ্বরীকে। দুবাইতে বসেই বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স হ্যন্ডেলের মাধ্যমে এই খবর জানান। তিনি লেখেন, ‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কিরীটেশ্বরীকে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করেছে। দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ৭৯৫টি আবেদনের মধ্যে ২০২৩ সালের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম প্রতিযোগিতা’ হয়েছিল। সেখানেই এই নির্বাচন হয়েছে। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে হবে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। আমি ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানাই। জয় বাংলা!’

ভাগীরথীর পশ্চিম পারে জঙ্গলাকীর্ণ নানা মন্দির অধ্যুষিত গ্রাম কিরীটকণা। বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মনে করিয়ে দেয় পূর্ব গৌরবের স্মৃতিকথা। ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ৭৯৫টি গ্রাম আবেদন করে। তার মধ্যে থেকে সেরা গ্রাম হিসেবে মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরীকে নির্বাচিত করা হয় । কেন্দ্রীয় পর্যটন দফতরের তরফ থেকে ২৭ শে সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে পুরস্কার প্রদান করা হবে।

গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাসিন্দাদের সাহচর্যে রক্ষিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মের শক্তিপীঠ। এর পরিচালন কমিটিতেও রয়েছেন একাধিক মুসলিম সদস্য। আর সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গ্রামের মুকুটে এসেছে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দির ভেঙে যায়। কথিত আছে, এই গ্রামে সতীর মুকুট বা কিরীট পড়েছিল। তাই দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হতো। কিন্তু উনবিংশ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন করে মন্দির নির্মাণ করেন।  এই মন্দিরের জন্য জমি দান করেছিলেন স্থানীয় মুসলিমরা । প্রত্যেক পৌষ মাসে মহামায়ার পুজো হয়। মন্দির চত্বরের এই জমিতে মেলা বসে। মুর্শিদাবাদের দহপাড়া রেল স্টেশন থেকে পাঁচ কিমি দূরে কিরীটেশ্বরী গ্রাম। সেখানে রয়েছে প্রাচীন মন্দির। কথিত আছে, এই গ্রামে সতীর মুকুট বা কিরীট পড়েছিল। তাই দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হতো। ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দির ভেঙে যায়। কিন্তু উনবিংশ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন করে মন্দির নির্মাণ করেন। তারপর মন্দিরের জন্য জমি দান করেছিলেন স্থানীয় মুসলিম ধর্মাবলম্বীর মানুষজন বলে জানা যায়। প্রত্যেক পৌষ মাসে মহামায়ার পুজো হয়। তার জন্য মন্দির চত্বরের এই জমিতে মেলা বসে। আয়োজনের মূল দায়িত্বে থাকেন মুসলিম মানুষজনই।

কিরিটেশ্বরী মন্দির হল হিন্দু ধর্মের ৫১ পীঠের অন্যতম  অন্যতম এক পীঠ। পুবের কলমকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান। কিরীটেশ্বরীকে  হেরিটেজ তকমা দেওয়ারও দাবিও জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তৃণমুল সাংসদ জানান এই ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রাচীন মন্দিরটির সংস্কারের  জন্য তিনি সাংসদ তহবিল থেকে ইতিমধ্যেই ১৫ লক্ষ টাকা দান করেছেন। ভবিষ্যতেও গৃহ নির্মাণ সহ অন্যান্য কাজে তিনি আপন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দেবেন।