তালিকা মেনেই নিতে হবে ভাড়া, সব বাসেই রাখতে হবে তালিকা, হাইকোর্টের কড়া নির্দেশিকা

- আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার
- / 13
পুবের কলম প্রতিবেদক: বেসরকারি বাস ভাড়া নিয়ে কড়া নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের সেই নির্দেশিকায় সাফ বলা হয়েছে, বেসরকারি বাস ও মিনিবাসগুলি রাজ্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নিতে পারবে না। সরকার অনুমোদিত ভাড়ার তালিকা প্রতিটি বাসে টাঙাতে হবে। সাধারণ যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট বাস বা মিনিবাসের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে রাজ্য পরিবহণ দফতরকে। কিন্তু এই নির্দেশের পরেও নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
কেননা বাস মালিকদের নানা সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতের রায় মানতে হলে তাঁদের ২০১৮ সালের বাস ভাড়া মেনে নিয়ে এখন বাস চালাতে হবে। কিন্তু এই ৫ বছরে জ্বালানীর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু জ্বালানিই নয়, বাসের নানা যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। লাভা তো হবেই না, গাড়ি চালানোর সেই খরচ ২০১৮ সালের ভাড়া দিয়ে তোলা সম্ভবই নয়। সেক্ষেত্রে বাস রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের পর বাস ও মিনিবাসের ভাড়ার আর কোনও তালিকা প্রকাশ করেনি রাজ্য সরকার। সেই ভাড়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম ভাড়া ধার্য হয়েছিল বাসের জন্য ৭টাকা ও মিনিবাসের জন্য ৯টাকা। কিন্তু এখন বাসে পা রাখলেই গুণতে হচ্ছে ১০ টাকা ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১২টাকা। কোথাওবা সেই ভাড় ১৫ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সব স্টেজে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বাস মালিকেরা। ১৩ টাকার ভাড়া হয়ে গিয়েছে ২৬টাকা। পরিবহণ দফতর বলছে, কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভোগান্তি এড়াতে পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে কেউ কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। কিন্তু মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন আইনজীবী প্রত্যুষ পাটোয়ারি। শুনানিতে তিনি দাবি করেন, রাজ্য মোটর ভেহিক্যালস আইনের ৬৭ নম্বর ধারা অগ্রাহ্য করে যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এমনকি বাসে কোনও ভাড়ার চার্ট পর্যন্ত রাখা হচ্ছে না।
সেই মামলার শুনানিতেই আদালত রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল, ২০১৮ সালের তালিকা মেনে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে নাকি বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তার জবাবে রাজ্য জানিয়েছিল, কোথাও বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। কোনও অভিযোগ সরকারের কাছে জমা পড়েনি বলেও উল্লেখ করেছিল সরকার।
সেই মামলাতেই বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়ে জানিয়েছে, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি কোনওভাবেই নেওয়া যাবে না। ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার যে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছিল আপাতত সেই ভাড়াই বহাল থাকবে। প্রতিটি বেসরকারি বাসে ওই তালিকা ঝোলাতে হবে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি বেসরকারি বাস ও মিনিবাসে ভাড়ার চার্ট ঝোলাতে হবে। এছাড়া, অভিযোগ জানানোর জন্য এলাকাভিত্তিক টোল-ফ্রি ফোন প্রতিটি বাসের ভিতরে ও বাইরে লিখে রাখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই রায়ের পরেও কী ভাড়া হয়রানি কমবে?