এখনও অধরা ক্যানিংয়ে আজিজুল নিগ্রহে ২৮ অভিযুক্ত, ন্যায় বিচারের দাবি পরিবারের

- আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার
- / 11
বিশেষ প্রতিবেদক: পুবের কলম-এ ‘দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হাফিজুল’ সংবাদ প্রকাশের পরই নড়েচড়ে বসল পুলিশ-প্রশাসন। ক্যানিং থানার আইসি এবং আইও পিসিআই সৌরভ গুহ ফোন করে হাফিজুলকে থানায় ডেকে পাঠান মঙ্গলবার। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য হাফিজুল থানায় যেতে পারেননি। স্ক্যানে তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ফলে বাবা আক্তার নস্কর ও মামা শফিকুল মোল্লা থানায় গিয়ে অফিসার সৌরভ গুহর সঙ্গে দেখা করেন। আক্রান্তের পরিবার সূত্রে জানা যায়। সৌরভ গুহ তাদের জানান– বিষয়টি নিয়ে কাউকে আর জানানোর প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি খবরের কাগজেও বিবৃতি দিতে নিষেধ করেন তিনি। তাদের আরও বলা হয়– প্রয়োজনে থানায় ডাকলে হাফিজুলকে নিয়ে হাজির হতে হবে।
হাফিজুলের পরিবারের অভিযোগ– কর্তব্যরত অফিসার সৌরভ গুহ হাফিজুলের কাছ থেকে সেদিন ছিনতাই হয়ে যাওয়া মোবাইল ও ১৬ হাজার টাকা-সহ অন্যান্য জিনিসের সিজার লিস্ট করেননি। আইনগত সেই প্রথা না মেনে কিন্তু হাফিজুলকে তার মোবাইল ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই ১৬ হাজার টাকা ফেরানো হয়নি। স্বাভাবিকভাবে এখন প্রশ্ন উঠছে সেই টাকা তাহলে কোথায় গেল?

উল্লেখ্য– সেদিন রাত ১১টার সময় ক্যানিং থানার কুমারসা গ্রাম থেকে বাড়ি ফিরছিল ছেলেটি সঙ্গে থাকা মোবাইলের আলো জ্বেলে। সাবধানে রেখেছে ঠিকাদার আনিসুর গায়েনের শ্যালকের মাধ্যমে দেওয়া ১৬ হাজার টাকা। কুমারসা থেকে মাঝে মাঝের পাড়া পেরিয়ে সবে ঢুকেছে বাহিরবেনা। হঠাৎ হাফিজুলের পথ রোধ করে বুবাই রাউত– সনু হালদার ও তাদের দলবল। তারা হাফিজুলের কাছে তার নাম জানতে চায়। হাফিজুল একটু ইতস্তত করে বলেই ফেলে— তার নাম হাফিজুল লস্কর। নাম বলতেই সেদিন মুহূর্তে বদলে যায় পরিস্থিতি। ‘শালা মোল্লার বাচ্চা এত রাতে এখানে কি করছিস?– ‘এ শালা চোর।’ সঙ্গে জোটে আরও প্রায় ৩০ জন। সবাই মিলে প্রায় ৩ ঘন্টা বাঁশ-লাঠি-রড দিয়ে নির্যাতন চালায় হাফিজুলের উপর। ভয়ংকর সেই কসরতের দৃশ্য মোবাইলে ক্যামেরা বন্দিও করে।
মাঝে একবার টহলদারি পুলিশ ভ্যান ঘটনাস্থলে এসেছিল। রাত দু’টোর সময় হাফিজুলকে তারা শিখিয়ে দেয় যে— বলতে হবে সে চোর। আর কালীপুজোর রাতে চুরি করতে বেরিয়েছিল। এটা বললে নাকি সে প্রাণে বেঁচে যাবে। প্রাণের মায়া বড় মায়া। হাফিজুল তাদের শেখানো কথাগুলো বলে এবং তারা তা ভিডিয়ো করে নেয়। তারপর হাফিজুলকে দিয়ে তার বাড়ি ফোন করানো হয়। বাড়ির ও পাড়ার লোকেরা এসে অর্ধমৃত হাফিজুলকে উদ্ধার করে ক্যানিং হাসপাতালে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়নি বুবাইরা। পরদিন সকালে বাবা আক্তার লস্কর হাফিজুলকে নিয়ে ক্যানিং থানায় পৌঁছয়। তারা অভিযোগ জানাতে চাইলে থানার পুলিশ ‘চোরের বাবা’ হওয়ার ‘অপরাধে’ আক্তার লস্করকে তারা লকআপ করার কথা বলে– এমনই অভিযোগ।
হাফিজুলের আইনজীবী তদন্তকারী অফিসারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন– আমি ভিডিয়ো দেখে যা জেনে ছিলাম তাই বলেছি। অর্থাৎ অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের পাঠানো ভিডিয়ো তার কাছে এবং সেটাই সে সঠিক মনে করে? এ প্রশ্ন করলে তদন্তকারী অফিসার সৌরভ গুহ থাকেন নির্বিকার। শেষমেশ একটি কেশ রুজু হলেও তা নিতান্ত নিয়ম রক্ষার। তদন্তকারী অফিসার তাদের ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১ ধারায় তাদেরকে ডেকে Notice Complied লিখে দিলে দু’জন জামিন পেয়ে যায়। ৩০/৩৫ জন মিলে পৈশাচিক উল্লাস করে মারল আর দু’জন আসামি? বাকিদের কি হবে উত্তর নেই। কেন হত্যার প্রচেষ্টায় ৩০৭ দণ্ডবিধি ধারা যুক্ত করে ফের আসামিদের গ্রেফতার করা হবে না? টহলদারি পুলিশ যারা ঘটনার সময় ওখানে পৌঁছায় তারা কেন হাফিজুলকে উদ্ধার না করে চলে এসেছিল? কারা– কেন এমন করেছিল– তাদের বিরুদ্ধে কী কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? উত্তর নেই।
হাফিজুলের আইনজীবী আনিসুর রহমান জানান– আমি আক্রান্তের পরিবারকে ইনসাফ দিতে চাই। আক্রান্তের পরিবারের অভিযোগ– ওইদিন কালীপুজোর রাতে হাফিজুলকে ৩০ জন দুষ্কৃতী নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায়। তারা সকলেই আরএসএস-এর কর্মী-সমর্থক বলে স্থানীয়রা জানান। তাদের আরও অভিযোগ– সেই অপরাধীদের পুলিশ এখনও গ্রেফতার করেনি। এমনকী যখন হাফিজুল আধমরা হয়ে পড়েছিল তখন রাতে ক্যানিং থানার পুলিশ টহলে বেরিয়েও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে– মানুষের নিরাপত্তার কী কোনও গুরুত্ব নেই পুলিশের কাছে? আরও উল্লেখ্য– এর আগে ক্যানিং এলাকায় রাতের অন্ধকারে এক ইমাম খুন হয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় কয়েকজন মুসলমান আক্রান্ত হয়েছেন এই এলাকায়। কিন্তু আজও সেই সব হামলা ও খুনের কোনও কিনারা হয়নি।