০৫ নভেম্বর ২০২৫, বুধবার, ১৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এটাই আমাদের শেষ ভিডিয়ো, প্রার্থনা করুন

ইমামা খাতুন
  • আপডেট : ৬ মার্চ ২০২২, রবিবার
  • / 256

প্রতীকী ছবি

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : নিউ ইয়র্ক- ইউক্রেনের সুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক ভারতীয় পড়়ুয়াদের একটি ভিডিয়ো। তাতেই দিনভর তোলপাড় হয়ে গেল বিদেশ মন্ত্রক থেকে শুরু করে ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসে। তড়িঘড়ি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিদেশমন্ত্রক ও দূতাবাসের তরফে পড়ুয়াদের পরামর্শ দেওয়া হল ধৈর্য ধরার জন্য, ক্যাম্পাসে থাকার জন্য। আশ্বস্ত করা হল এই বলে যে, পড়ুয়াদের উদ্ধারে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

 

আরও পড়ুন: এক কাফ কফি ৭০০ টাকা! মাল্টিপ্লেক্সগুলির দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্ট

ভারতীয় পড়ুয়া-সহ ইউক্রেনে আটকে থাকা বিদেশি পড়ুয়ারা যাতে নিরাপদে নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারে সেজন্য রাশিয়া যথেষ্ট তৎপর। পড়ুয়াদের ফেরানোর জন্য একাধিক বাস তৈরি রাখা হয়েছে। তাতে উঠে পড়লেই পড়ুয়ারা চলে আসতে পারবেন রাশিয়ায়। তারপর বিমানে করে তাঁদের নিজ নিজ দেশে পৌঁছে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে এমনটাই দাবি করেছে রাশিয়া। রাষ্ট্রসংঘে ঠিক কী বলেছে রাশিয়া? সেখানে রাশিয়া জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি শহরে যাওয়ার ক্রসিং পয়েন্টে বাস তৈরি রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বাসগুলি ওইসব শহরে যাবে ভারত-সহ অন্যান্য দেশের বিদেশি পড়ুয়াদের উদ্ধার করার জন্য।

আরও পড়ুন: জিএসটি কাঠামোয় বদল নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব অমিত মিত্র

 

আরও পড়ুন: নয়া ওষুধ ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ম বদল করছে কেন্দ্র, ক্ষোভ চিকিৎসা মহলে

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসে রাষ্ট্রসংঘের ১৫ দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিল। আলবেনিয়া, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার আহ্বানে এই বৈঠক হয়। মূলত, ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ায় পারমাণবিক কেন্দ্রে রুশ হামলা নিয়ে এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

 

উল্লেখ্য, এটি ছিল ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্র। বৈঠকে রাষ্ট্রসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি নিবেনজিয়া বলেন, ইউক্রেনে আটকে থাকা বিদেশিদের শান্তিপূর্ণভাবে ফেরানো সুনিশ্চিত করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে রুশ সেনা। বরং তাঁর পালটা অভিযোগ, ইউক্রেনই ৩,৭০০ ভারতীয়কে জোর করে খারকিভ ও সুমিতে আটকে রেখেছে। নিবেনজিয়ার কথায়, ‘জঙ্গিরা সাধারণ নাগরিকদের শহর ছাড়তে দেবে না। ইউক্রেন জোর করে যেসব বিদেশিকে আটকে রেখেছে সেই সংখ্যাটা মর্মান্তিক। খারকিভে ৩,১৮৯ জন ভারতীয়, ২,৭০০ জন ভিয়েতনামি, ২০২ জন চিনা নাগরিককে আটকে রাখা হয়েছে। আর সুমিতে ৫৭৬ জন ভারতীয়, ১০১ জন ঘানাইয়ান, ১২১ জন চিনা নাগরিককে আটকে রাখা হয়েছে।’ রুশ প্রতিনিধি আরও বলেন, রাশিয়ার বেলগোরডে ১৩০টি আরামদায়ক বাস তৈরি রাখা হয়েছে খারকিভ ও সুমিতে গিয়ে ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি নাগরিককে ফিরিয়ে আনার জন্য। প্রত্যেককে উদ্ধার করে বেলগোরডে নিয়ে আসা হবে। সেখান থেকে তাঁদের নিজ-নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

 

যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল রাশিয়া। ইউক্রেনের আবেদনে সাড়া দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধারে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তারা। ‘মানব করিডর’ তৈরি করে সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়। শনিবার সকাল ৬টা (ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টা) থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টার জন্য এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়। মারিউপোল ও ভলনোভাকায় এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছিল। ইউক্রেনের অভিযোগ, সেই যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগেই হামলা শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া।

 

যুদ্ধের দশম দিনে ইউক্রেনে সংঘর্ষ অব্যাহত। শনিবার রাশিয়ার সেনা উড়িয়ে দিল ইরপিনের রেলপথ। এই পথ দিয়ে ইউক্রেনে আটকে পড়া মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছিল। মেলিটোপোলে সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনা। পালটা, চেরনিহিভে আবার রুশ বিমান ধ্বংস করে দিল ইউক্রেনের বায়ুসেনা। এর মধ্যেই ওডেসায় বিস্ফোরণ ঘটায় রুশ সেনা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে ফের এগিয়ে আসতে শুরু করেছে ৬৪ কিলোমিটার লম্বা রুশ কনভয়। কিয়েভে সেই কনভয়ের প্রবেশ ঠেকাতে ইউক্রেনের রাস্তায় রুশ সেনাকে লক্ষ্য করে গোলাগুলি চালাচ্ছে ইউক্রেনের সেনা। তার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে। পালটা, ড্রোন হামলায় রুশ ট্যাঙ্ককে ধ্বংস করে উল্লাসে মেতে উঠেছেন ইউক্রেন সেনাবাহিনীর জওয়ানরা।

 

এই পরিস্থিতিতে ভিডিয়ো প্রকাশের লড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সেনাবাহিনী। প্রত্যেকের ভিডিয়োই দাবি করছে, তারা পরস্পরকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। এই যুদ্ধে তাঁরাই বিজয়ী হচ্ছেন। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে রাশিয়া আবার দাবি করেছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পোল্যান্ডে পালিয়েছেন। পালটা ভিডিয়ো প্রকাশ করে ইউক্রেন দাবি করেছে, জেলেনস্কি কিয়েভেই আছেন। এ দিনই আবার জেলেনস্কির বাড়ির বাগানে মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।

 

রাশিয়া দুই শহরে সংঘর্ষ-বিরতি ঘোষণা করতেই শনিবার স্থানীয় বাসিন্দারা রেল স্টেশনগুলোয় জড়ো হতে শুরু করেন। এর মধ্যেই রাশিয়ার গোলায় রেলপথ উড়ে যাওয়ায়, কীভাবে তাঁরা ভলনোভাখা এবং মারিউপোল ছাড়বেন, তা নিয়ে ধন্দে পড়েন বাসিন্দারা। আটকে পড়া নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের বাসে চাপিয়ে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইউক্রেন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সুমি এলাকায় এখনও বহু ভারতীয় পড়ুয়া আটকে আছেন। তাঁদের উদ্ধার করতে সুমি এলাকায় সংঘর্ষ বিরতির আবেদন জানিয়েছে ভারত।

 

শুক্রবারই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, ইউক্রেনে এখনও দুই থেকে তিন হাজার ভারতীয় আটকে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৭০০ জন সুমিতে এবং ৩০০ জন খারকিভে আটকে রয়েছেন। পূর্ব ইউক্রেনের এই জায়গাগুলিতেই মূলত সংঘর্ষ চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনার মধ্যে। তারমধ্যেই আটকে পড়া ভারতীয়দের বের করে আনা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতেই শনিবার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সুমিতে আটকে থাকা ৭০০-৮০০ ভারতীয় পড়ুয়া কাতর আর্জি জানিয়ে বলেছ, এতদিন অপেক্ষা করে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কেউ উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা বাইরে বেরোচ্ছেন ৫০ কিলোমিটার রাস্তা পার করে সীমান্তে পৌঁছনোর জন্য।

 

পথে যদি কিছু হয়ে যায়, তার জন্য দায়ী থাকবে ভারত সরকার ও ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস। আর তেমনটা হলে মোদি সরকারের ‘মিশন গঙ্গা’ অভিযান বিরাট ব্যর্থ হবে। এরপরই পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে অন্তিম বার্তা দিয়ে বলা হয়- ‘আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন। এটাই আমাদের শেষ ভিডিয়ো’। এই ভিডিয়ো নজরে আসতেই তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকে মুখপাত্র অরিম বাগচি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এখনই রাস্তায় বেরিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার কোনও দরকার নেই। তাঁরা যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। সরকার তাঁদের উদ্ধারে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন সরকারের কাছে বিশেষভাবে তাঁরা কড়া বার্তা পাঠিয়েছেন ‘নিরাপদ জোন’ তৈরির জন্য যাতে আটকে পড়া পড়ুয়াদের ফেরানো যায়।

 

এ দিকে, ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন, আকাশসীমা রাশিয়ার জন্য বন্ধ করে দিক ন্যাটোর দেশগুলি। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাবর্ষণের আঘাত এড়াতে এই সওয়াল করেছিলেন তিনি। কিন্তু ন্যাটো তা খারিজ করে দিয়েছে। তাতেই চটেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধের অর্থ, সেখানে রাশিয়ার বিমান দেখলেই ন্যাটো এবং সহযোগী দেশগুলি সেই বিমানগুলি করে নামিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ইউক্রেন এখনও পর্যন্ত ন্যাটোর সদস্যপদও পায়নি। তাই তাদের রক্ষা করতে গিয়ে পরমাণু শক্তিসম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে যুদ্ধ দেখা দিক, ন্যাটো তা চায় না বলেই হয়তো ইউক্রেনের প্রস্তাবে তারা সায় দেয়নি। তাতেই ন্যাটোর সমালোচনা করে জেলেনস্কি বলেন, লাগাতার রুশ হামলায় প্রাণহানি নিশ্চিত জেনেও ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধে সায় দিচ্ছে না ন্যাটো। অর্থাৎ, রাশিয়াকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে আকাশ থেকে ইউক্রেনের গ্রামে-গঞ্জে বোমা ফেলতে পারে রুশ বাহিনী। উল্লেখ্য, ভারতীয়দের ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে এনে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিয়েছিল বিজেপি। এখন সুমির পড়়ুয়াদের এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় চরম উদ্বেগে পড়েছে মোদি সরকার।

প্রতিবেদক

ইমামা খাতুন

২০২২ সাল থেকে সংবাদ জগতের সঙ্গে যুক্ত। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতাতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছে। ডিজিটাল প্লাটফর্মে রিপোর্টার হিসেবে হাতেখড়ি। ২০২২ সালের শেষান্তে পুবের কলম-এর সঙ্গে যুক্ত হয়। ইমামার ভাষ্যে, The First Law of Journalism: to confirm existing prejudice, rather than contradict it.

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

এটাই আমাদের শেষ ভিডিয়ো, প্রার্থনা করুন

আপডেট : ৬ মার্চ ২০২২, রবিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : নিউ ইয়র্ক- ইউক্রেনের সুমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক ভারতীয় পড়়ুয়াদের একটি ভিডিয়ো। তাতেই দিনভর তোলপাড় হয়ে গেল বিদেশ মন্ত্রক থেকে শুরু করে ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসে। তড়িঘড়ি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিদেশমন্ত্রক ও দূতাবাসের তরফে পড়ুয়াদের পরামর্শ দেওয়া হল ধৈর্য ধরার জন্য, ক্যাম্পাসে থাকার জন্য। আশ্বস্ত করা হল এই বলে যে, পড়ুয়াদের উদ্ধারে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

 

আরও পড়ুন: এক কাফ কফি ৭০০ টাকা! মাল্টিপ্লেক্সগুলির দাম বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্ট

ভারতীয় পড়ুয়া-সহ ইউক্রেনে আটকে থাকা বিদেশি পড়ুয়ারা যাতে নিরাপদে নিজ নিজ দেশে ফিরতে পারে সেজন্য রাশিয়া যথেষ্ট তৎপর। পড়ুয়াদের ফেরানোর জন্য একাধিক বাস তৈরি রাখা হয়েছে। তাতে উঠে পড়লেই পড়ুয়ারা চলে আসতে পারবেন রাশিয়ায়। তারপর বিমানে করে তাঁদের নিজ নিজ দেশে পৌঁছে দেওয়া হবে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে এমনটাই দাবি করেছে রাশিয়া। রাষ্ট্রসংঘে ঠিক কী বলেছে রাশিয়া? সেখানে রাশিয়া জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি শহরে যাওয়ার ক্রসিং পয়েন্টে বাস তৈরি রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বাসগুলি ওইসব শহরে যাবে ভারত-সহ অন্যান্য দেশের বিদেশি পড়ুয়াদের উদ্ধার করার জন্য।

আরও পড়ুন: জিএসটি কাঠামোয় বদল নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব অমিত মিত্র

 

আরও পড়ুন: নয়া ওষুধ ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ম বদল করছে কেন্দ্র, ক্ষোভ চিকিৎসা মহলে

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসে রাষ্ট্রসংঘের ১৫ দেশের নিরাপত্তা কাউন্সিল। আলবেনিয়া, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার আহ্বানে এই বৈঠক হয়। মূলত, ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ায় পারমাণবিক কেন্দ্রে রুশ হামলা নিয়ে এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

 

উল্লেখ্য, এটি ছিল ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম পারমাণবিক কেন্দ্র। বৈঠকে রাষ্ট্রসংঘে রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি নিবেনজিয়া বলেন, ইউক্রেনে আটকে থাকা বিদেশিদের শান্তিপূর্ণভাবে ফেরানো সুনিশ্চিত করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে রুশ সেনা। বরং তাঁর পালটা অভিযোগ, ইউক্রেনই ৩,৭০০ ভারতীয়কে জোর করে খারকিভ ও সুমিতে আটকে রেখেছে। নিবেনজিয়ার কথায়, ‘জঙ্গিরা সাধারণ নাগরিকদের শহর ছাড়তে দেবে না। ইউক্রেন জোর করে যেসব বিদেশিকে আটকে রেখেছে সেই সংখ্যাটা মর্মান্তিক। খারকিভে ৩,১৮৯ জন ভারতীয়, ২,৭০০ জন ভিয়েতনামি, ২০২ জন চিনা নাগরিককে আটকে রাখা হয়েছে। আর সুমিতে ৫৭৬ জন ভারতীয়, ১০১ জন ঘানাইয়ান, ১২১ জন চিনা নাগরিককে আটকে রাখা হয়েছে।’ রুশ প্রতিনিধি আরও বলেন, রাশিয়ার বেলগোরডে ১৩০টি আরামদায়ক বাস তৈরি রাখা হয়েছে খারকিভ ও সুমিতে গিয়ে ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি নাগরিককে ফিরিয়ে আনার জন্য। প্রত্যেককে উদ্ধার করে বেলগোরডে নিয়ে আসা হবে। সেখান থেকে তাঁদের নিজ-নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।’

 

যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল রাশিয়া। ইউক্রেনের আবেদনে সাড়া দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধারে এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তারা। ‘মানব করিডর’ তৈরি করে সাধারণ নাগরিকদের উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়। শনিবার সকাল ৬টা (ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টা) থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টার জন্য এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়। মারিউপোল ও ভলনোভাকায় এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছিল। ইউক্রেনের অভিযোগ, সেই যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার আগেই হামলা শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া।

 

যুদ্ধের দশম দিনে ইউক্রেনে সংঘর্ষ অব্যাহত। শনিবার রাশিয়ার সেনা উড়িয়ে দিল ইরপিনের রেলপথ। এই পথ দিয়ে ইউক্রেনে আটকে পড়া মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরানো হচ্ছিল। মেলিটোপোলে সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনা। পালটা, চেরনিহিভে আবার রুশ বিমান ধ্বংস করে দিল ইউক্রেনের বায়ুসেনা। এর মধ্যেই ওডেসায় বিস্ফোরণ ঘটায় রুশ সেনা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে ফের এগিয়ে আসতে শুরু করেছে ৬৪ কিলোমিটার লম্বা রুশ কনভয়। কিয়েভে সেই কনভয়ের প্রবেশ ঠেকাতে ইউক্রেনের রাস্তায় রুশ সেনাকে লক্ষ্য করে গোলাগুলি চালাচ্ছে ইউক্রেনের সেনা। তার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ছে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে। পালটা, ড্রোন হামলায় রুশ ট্যাঙ্ককে ধ্বংস করে উল্লাসে মেতে উঠেছেন ইউক্রেন সেনাবাহিনীর জওয়ানরা।

 

এই পরিস্থিতিতে ভিডিয়ো প্রকাশের লড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সেনাবাহিনী। প্রত্যেকের ভিডিয়োই দাবি করছে, তারা পরস্পরকে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। এই যুদ্ধে তাঁরাই বিজয়ী হচ্ছেন। প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে রাশিয়া আবার দাবি করেছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পোল্যান্ডে পালিয়েছেন। পালটা ভিডিয়ো প্রকাশ করে ইউক্রেন দাবি করেছে, জেলেনস্কি কিয়েভেই আছেন। এ দিনই আবার জেলেনস্কির বাড়ির বাগানে মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।

 

রাশিয়া দুই শহরে সংঘর্ষ-বিরতি ঘোষণা করতেই শনিবার স্থানীয় বাসিন্দারা রেল স্টেশনগুলোয় জড়ো হতে শুরু করেন। এর মধ্যেই রাশিয়ার গোলায় রেলপথ উড়ে যাওয়ায়, কীভাবে তাঁরা ভলনোভাখা এবং মারিউপোল ছাড়বেন, তা নিয়ে ধন্দে পড়েন বাসিন্দারা। আটকে পড়া নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের বাসে চাপিয়ে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইউক্রেন। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সুমি এলাকায় এখনও বহু ভারতীয় পড়ুয়া আটকে আছেন। তাঁদের উদ্ধার করতে সুমি এলাকায় সংঘর্ষ বিরতির আবেদন জানিয়েছে ভারত।

 

শুক্রবারই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, ইউক্রেনে এখনও দুই থেকে তিন হাজার ভারতীয় আটকে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৭০০ জন সুমিতে এবং ৩০০ জন খারকিভে আটকে রয়েছেন। পূর্ব ইউক্রেনের এই জায়গাগুলিতেই মূলত সংঘর্ষ চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনার মধ্যে। তারমধ্যেই আটকে পড়া ভারতীয়দের বের করে আনা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতেই শনিবার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সুমিতে আটকে থাকা ৭০০-৮০০ ভারতীয় পড়ুয়া কাতর আর্জি জানিয়ে বলেছ, এতদিন অপেক্ষা করে থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কেউ উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা বাইরে বেরোচ্ছেন ৫০ কিলোমিটার রাস্তা পার করে সীমান্তে পৌঁছনোর জন্য।

 

পথে যদি কিছু হয়ে যায়, তার জন্য দায়ী থাকবে ভারত সরকার ও ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস। আর তেমনটা হলে মোদি সরকারের ‘মিশন গঙ্গা’ অভিযান বিরাট ব্যর্থ হবে। এরপরই পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে অন্তিম বার্তা দিয়ে বলা হয়- ‘আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন। এটাই আমাদের শেষ ভিডিয়ো’। এই ভিডিয়ো নজরে আসতেই তড়িঘড়ি প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক। বিদেশ মন্ত্রকে মুখপাত্র অরিম বাগচি তাঁদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এখনই রাস্তায় বেরিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার কোনও দরকার নেই। তাঁরা যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। সরকার তাঁদের উদ্ধারে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন সরকারের কাছে বিশেষভাবে তাঁরা কড়া বার্তা পাঠিয়েছেন ‘নিরাপদ জোন’ তৈরির জন্য যাতে আটকে পড়া পড়ুয়াদের ফেরানো যায়।

 

এ দিকে, ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছিলেন, আকাশসীমা রাশিয়ার জন্য বন্ধ করে দিক ন্যাটোর দেশগুলি। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমাবর্ষণের আঘাত এড়াতে এই সওয়াল করেছিলেন তিনি। কিন্তু ন্যাটো তা খারিজ করে দিয়েছে। তাতেই চটেছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধের অর্থ, সেখানে রাশিয়ার বিমান দেখলেই ন্যাটো এবং সহযোগী দেশগুলি সেই বিমানগুলি করে নামিয়ে দিতে পারে। কিন্তু ইউক্রেন এখনও পর্যন্ত ন্যাটোর সদস্যপদও পায়নি। তাই তাদের রক্ষা করতে গিয়ে পরমাণু শক্তিসম্পন্ন দেশগুলির মধ্যে যুদ্ধ দেখা দিক, ন্যাটো তা চায় না বলেই হয়তো ইউক্রেনের প্রস্তাবে তারা সায় দেয়নি। তাতেই ন্যাটোর সমালোচনা করে জেলেনস্কি বলেন, লাগাতার রুশ হামলায় প্রাণহানি নিশ্চিত জেনেও ইউক্রেনের আকাশসীমা বন্ধে সায় দিচ্ছে না ন্যাটো। অর্থাৎ, রাশিয়াকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে আকাশ থেকে ইউক্রেনের গ্রামে-গঞ্জে বোমা ফেলতে পারে রুশ বাহিনী। উল্লেখ্য, ভারতীয়দের ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে এনে ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান দিয়েছিল বিজেপি। এখন সুমির পড়়ুয়াদের এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসায় চরম উদ্বেগে পড়েছে মোদি সরকার।