আজ ঐতিহাসিক বদর-যুদ্ধের দিন

- আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২২, মঙ্গলবার
- / 25
মাওলানা আবদুল মান্নান : ১৭ রমযান, জুম্মার দিন এই তারিখেই সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদর-যুদ্ধ। ওই বছরেই প্রথম রমযান মাসের রোযা, সাদাকাতুল ফিতর ফরয করা হয়। যাকাতের নিসাব অর্থাৎ পরিমাণও এই সময় নির্ধারণ করা হয়। মুহাজেরদের মধ্যে কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন খুবই গরিব। তাঁদের রুটি-রুজির সমস্যা ছিল প্রকট। সাদকায়ে ফিতর এবং যাকাত সম্পর্কিত বিধান তাঁদের অন্ন-বস্ত্রের কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়।
বদর-যুদ্ধ ছিল ইসলামের প্রথম দিককার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। পবিত্র কুরআনে বদর-যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী লড়াই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ সা.-এর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ওই যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম রোযা রেখে জীবন-মরণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বদর- যুদ্ধে কিছু মুসলমান আবু জেহেলের (মক্কার কুরাইশদের) বিপুল সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে দ্বিধাগ্রস্থ হয়েছিল। তাদের কিছু অংশ এই যুদ্ধ না করাই শ্রেয় মনে করেছিল। অথচ আল্লাহ্ তাঁদের যুদ্ধ ক্ষেত্রে আনেন এবং বিজয়ীর সম্মানে ভূষিত করেন।
রাসূলুল্লাহ্ সা. এবং মক্কার মুহাজেরদের হিজরত করার ১৬ মাস পর রাসূলুল্লাহ্ সা. ও তাঁর কিছু অনুরক্ত ভক্তকে ‘বদর’-এ অগ্নি পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় এই অসম যুদ্ধে। উভয় পক্ষের অস্ত্রবল ও জনসংখ্যার চিত্রটি বিশ্লেষণ করলে আমরা খুবই সহজেই আল্লাহর দয়া, অনুগ্রহ আর অদৃশ্য সাহায্যে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারব।
মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৩১৩। তাঁদের সঙ্গে ছিল দু’টি ঘোড়া, ৭০টি উট আর অল্প কয়েকটি ঢাল-তরবারি। অপরদিকে, মক্কার অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনীতে যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১ হাজার। যারা সকলেই ছিল যুদ্ধে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের সঙ্গে ছিল ১০০টি ঘোড়া, ৭০০টি উট, অসংখ্য অস্ত্রশস্ত্র। এই যুদ্ধ ছিল মুসলিমদের জন্য অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। কিন্তু তাঁরা ছিলেন আত্মিক শক্তিতে বলিয়ান। যুদ্ধ শেষে জয়ের মুকুট আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সা. ও মুসলিম বাহিনীকে দান করেন।
মহান আল্লাহ্ বদরের যুদ্ধ সম্পর্কে সূরা ‘আনফাল’ নাযিল করেন। প্রকৃতপক্ষে এটা হচ্ছে ‘বদর-যুদ্ধ’ সম্পর্কে পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন। এতে সর্বপ্রথম আল্লাহ্পাক মুসলমানদের দৃষ্টি সেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আর দুর্বলতার উপর নিবদ্ধ করেন যেগুলো ওখানে তাদের মাঝে অবশিষ্ট ছিল। অতঃপর আল্লাহর ‘গায়বী’ সাহায্য-সহায়তার কথা উল্লেখ করা হয়। যাতে মুসলমানরা নিজেদের বীরত্ব ও বাহাদুরীর ধোঁকায় না পড়ে। আল্লাহ্ চান, মুসলমানরা যেন তাঁর ওপর নির্ভর এবং রাসূল সা.-এর আনুগত্য করে।
ঐতিহাসিক ও তাত্ত্বিকদের অনেকেই রমযান মাসকে আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি সংগ্রামের মাস হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এই পবিত্র মাসে আল্লাহ্ আমাদের তাক্ওয়া, সত্য রক্ষা ও প্রতিষ্ঠায় জীবন সংগ্রামের চেতনা ও প্রেরণায় উদ্দীপ্ত করুন। আমীন!