০৩ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘বাংলা’ নয়, ‘বাংলাদেশি ভাষা’? দিল্লি পুলিশের চিঠিকে ঘিরে তৃণমূলের তীব্র আক্রমণ

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ৩ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার
  • / 35

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ আধিকারিক অমিত দত্ত সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে একটি সরকারি চিঠি পাঠিয়েছেন। অভিযোগ, ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশিদের ভাষা’ বলে উল্লেখ করেছে দিল্লি পুলিশ। রবিবার সেই অভিযোগ সামনে এনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

 

অভিষেকের অভিযোগ, “বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর নির্যাতন ও বেআইনি আটক ক্রমাগত চলছে। দিল্লি পুলিশের সরকারি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলা হয়েছে – এটি নিছক টাইপো নয়, বরং বিজেপির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার লক্ষ্য বাংলাকে অপমান করা এবং পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বলে প্রতিপন্ন করা।” তিনি একে সরাসরি ভারতীয় সংবিধানের ৩৪৩ নম্বর ধারা ও অষ্টম তফসিলের লঙ্ঘন বলেও দাবি করেন। তাঁর কথায়, “‘বাংলাদেশি ভাষা’ নামে কোনও ভাষা নেই – বাংলা আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং অস্তিত্বের অংশ। বাঙালিরা নিজেদের দেশেই বহিরাগত নয়।”

আরও পড়ুন: দিল্লি পুলিশের চিঠিতে বাংলা ভাষার অপমান, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ ট্যুইটে

 

আরও পড়ুন: বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলায় দিল্লি পুলিশের নোটিস নিয়ে সরব তৃণমূল

সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের তরফে পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “বিজেপি বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের সব সীমা লঙ্ঘন করছে। বাংলাভাষী শ্রমিকদের গ্রেফতার ও হেনস্থার পরে এবার দিল্লি পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলে দাগিয়ে দিল।” তাঁদের অভিযোগ, এটি কোনও ভুল নয় – বরং একটি পরিকল্পিত অপমান এবং কোটি কোটি ভারতীয় বাংলাভাষীর নাগরিকত্ব, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ভাষার বৈধতাকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা।

আরও পড়ুন: এনআরসি নোটিশ এবার বক্সিরহাটের দীপঙ্কর সরকারকে

 

পাল্টা জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “একদম ঠিক ভাষাই ব্যবহার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশের বই আর পশ্চিমবঙ্গের বই খুললেই দেখা যায় ভাষার পার্থক্য। বাংলা বললেই কেউ ভারতীয় হয়ে যাবে, এমন নয়। অনেকেই নকল নথি তৈরি করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে।” তাঁর দাবি, ট্রেন্ড দেখলেই বোঝা যায় ‘বাংলা ভাষা’র আড়ালে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভারতে ঢুকে পড়ছে।

 

উল্লেখ্য, বাংলা ভাষায় বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কথা বলেন এবং এটি ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ২২টি সরকারি ভাষার একটি। দিল্লি পুলিশের চিঠিতে বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করাকে ঘিরে সেই সাংবিধানিক মর্যাদাকেই হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি যদিও তা মানতে নারাজ। ‘বাংলা বনাম বাংলাদেশি বাংলা’ বিতর্কে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি, নতুন করে উসকে উঠেছে ‘বাংলা-বিদ্বেষ’ বনাম ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ তরজা।

 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

‘বাংলা’ নয়, ‘বাংলাদেশি ভাষা’? দিল্লি পুলিশের চিঠিকে ঘিরে তৃণমূলের তীব্র আক্রমণ

আপডেট : ৩ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার

 পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: নয়াদিল্লির লোদী কলোনি থানার পুলিশ আধিকারিক অমিত দত্ত সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্গভবনের অফিসার-ইন-চার্জকে একটি সরকারি চিঠি পাঠিয়েছেন। অভিযোগ, ওই চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশিদের ভাষা’ বলে উল্লেখ করেছে দিল্লি পুলিশ। রবিবার সেই অভিযোগ সামনে এনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

 

অভিষেকের অভিযোগ, “বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষীদের উপর নির্যাতন ও বেআইনি আটক ক্রমাগত চলছে। দিল্লি পুলিশের সরকারি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলা হয়েছে – এটি নিছক টাইপো নয়, বরং বিজেপির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার লক্ষ্য বাংলাকে অপমান করা এবং পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বলে প্রতিপন্ন করা।” তিনি একে সরাসরি ভারতীয় সংবিধানের ৩৪৩ নম্বর ধারা ও অষ্টম তফসিলের লঙ্ঘন বলেও দাবি করেন। তাঁর কথায়, “‘বাংলাদেশি ভাষা’ নামে কোনও ভাষা নেই – বাংলা আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং অস্তিত্বের অংশ। বাঙালিরা নিজেদের দেশেই বহিরাগত নয়।”

আরও পড়ুন: দিল্লি পুলিশের চিঠিতে বাংলা ভাষার অপমান, মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ ট্যুইটে

 

আরও পড়ুন: বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলায় দিল্লি পুলিশের নোটিস নিয়ে সরব তৃণমূল

সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের তরফে পোস্ট করে লেখা হয়েছে, “বিজেপি বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের সব সীমা লঙ্ঘন করছে। বাংলাভাষী শ্রমিকদের গ্রেফতার ও হেনস্থার পরে এবার দিল্লি পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ‘বাংলাদেশি’ ভাষা বলে দাগিয়ে দিল।” তাঁদের অভিযোগ, এটি কোনও ভুল নয় – বরং একটি পরিকল্পিত অপমান এবং কোটি কোটি ভারতীয় বাংলাভাষীর নাগরিকত্ব, সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ভাষার বৈধতাকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা।

আরও পড়ুন: এনআরসি নোটিশ এবার বক্সিরহাটের দীপঙ্কর সরকারকে

 

পাল্টা জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “একদম ঠিক ভাষাই ব্যবহার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশের বই আর পশ্চিমবঙ্গের বই খুললেই দেখা যায় ভাষার পার্থক্য। বাংলা বললেই কেউ ভারতীয় হয়ে যাবে, এমন নয়। অনেকেই নকল নথি তৈরি করে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ছে।” তাঁর দাবি, ট্রেন্ড দেখলেই বোঝা যায় ‘বাংলা ভাষা’র আড়ালে বাংলাদেশের নাগরিকরা ভারতে ঢুকে পড়ছে।

 

উল্লেখ্য, বাংলা ভাষায় বিশ্বে প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কথা বলেন এবং এটি ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ২২টি সরকারি ভাষার একটি। দিল্লি পুলিশের চিঠিতে বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করাকে ঘিরে সেই সাংবিধানিক মর্যাদাকেই হুমকির মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি যদিও তা মানতে নারাজ। ‘বাংলা বনাম বাংলাদেশি বাংলা’ বিতর্কে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি, নতুন করে উসকে উঠেছে ‘বাংলা-বিদ্বেষ’ বনাম ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ তরজা।