১৪ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তিতে স্বস্তির ইঙ্গিত, ভারতীয় পণ্যে শুল্ক কমাতে পারেন ট্রাম্প

আফিয়া‌‌ নৌশিন
  • আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার
  • / 190

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে স্বস্তির হাওয়া বইতে পারে ভারতের জন্য। শনিবার ‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চলতি আলোচনার ভিত্তিতে অধিকাংশ ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক ২০ শতাংশেরও কম করতে পারে আমেরিকা। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নয়াদিল্লির কাছে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জুন মাসের শেষে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য ভারত। সেই অনুযায়ী, গত সপ্তাহেই একটি উচ্চ পর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে যায় চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনায়। যদিও কূটনৈতিক মহল ও বণিক সমাজের একাংশের মতে, চিনের তুলনায় ভারতের পক্ষে দ্রুত এমন সমঝোতায় পৌঁছনো কঠিন। কারণ, মার্কিন উৎপাদন খাত অনেকাংশে চিনের উপর নির্ভরশীল—বিশেষ করে বিরল খনিজ ও ইলেকট্রনিক্স কাঁচামালের ক্ষেত্রে। সেই সুবিধা ভারতের হাতে নেই।

তবু, প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছে অন্তর্বর্তী বাণিজ্যচুক্তির খসড়া। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, অধিকাংশ ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্কহার ২০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রস্তাব। উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময়েই ট্রাম্প এই বাণিজ্যচুক্তির সম্ভাবনার কথা প্রথমবার প্রকাশ্যে আনেন। কিন্তু এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতির জেরে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। ভারত-সহ একাধিক দেশের উপর আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়, যার মধ্যে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কও ছিল।

আরও পড়ুন: Donald Trump-Shehbaz Sharif: শাহবাজ-মুনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

পরবর্তীকালে তা ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হলেও, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকে। যদিও মার্কিন বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে ১ অগস্ট থেকে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু দেশকে নতুন শুল্ক ব্যবস্থার বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: মার্কিন কাঁটা সত্বেও বিকল্প পথে রফতানি চলবে: Piyush Goyal

বর্তমানে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৯,১০০ কোটি ডলার। ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য, এই অঙ্ক বাড়িয়ে ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে একে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, “ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ মার্কিন অর্থনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার।”

আরও পড়ুন: আমেরিকার ট্যারিফে ক্ষুব্ধ রাশিয়া, ভারতীয় রপ্তানির জন্য মস্কোর বাজার খোলার আশ্বাস

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের মোট রফতানির প্রায় ১৮ শতাংশ যায় মার্কিন বাজারে। অন্যদিকে, ভারতের আমদানির মধ্যে ৬.২২ শতাংশ মার্কিন পণ্য। এই বাস্তবতায় শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা ভারতীয় শিল্প ও রফতানিকারকদের জন্য বড় স্বস্তি হতে পারে। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে শুধু শুল্ক নয়, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেই মনে করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যচুক্তিতে স্বস্তির ইঙ্গিত, ভারতীয় পণ্যে শুল্ক কমাতে পারেন ট্রাম্প

আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, শনিবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে স্বস্তির হাওয়া বইতে পারে ভারতের জন্য। শনিবার ‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চলতি আলোচনার ভিত্তিতে অধিকাংশ ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক ২০ শতাংশেরও কম করতে পারে আমেরিকা। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নয়াদিল্লির কাছে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জুন মাসের শেষে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য ভারত। সেই অনুযায়ী, গত সপ্তাহেই একটি উচ্চ পর্যায়ের ভারতীয় প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে যায় চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনায়। যদিও কূটনৈতিক মহল ও বণিক সমাজের একাংশের মতে, চিনের তুলনায় ভারতের পক্ষে দ্রুত এমন সমঝোতায় পৌঁছনো কঠিন। কারণ, মার্কিন উৎপাদন খাত অনেকাংশে চিনের উপর নির্ভরশীল—বিশেষ করে বিরল খনিজ ও ইলেকট্রনিক্স কাঁচামালের ক্ষেত্রে। সেই সুবিধা ভারতের হাতে নেই।

তবু, প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, দ্বিপাক্ষিক আলোচনার অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছেছে অন্তর্বর্তী বাণিজ্যচুক্তির খসড়া। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, অধিকাংশ ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্কহার ২০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার প্রস্তাব। উল্লেখযোগ্যভাবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরের সময়েই ট্রাম্প এই বাণিজ্যচুক্তির সম্ভাবনার কথা প্রথমবার প্রকাশ্যে আনেন। কিন্তু এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতির জেরে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। ভারত-সহ একাধিক দেশের উপর আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়, যার মধ্যে ভারতীয় পণ্যের উপর ২৬ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কও ছিল।

আরও পড়ুন: Donald Trump-Shehbaz Sharif: শাহবাজ-মুনিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ট্রাম্প

পরবর্তীকালে তা ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রাখা হলেও, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল থাকে। যদিও মার্কিন বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক জানান, ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও নতুন শুল্কহার কার্যকর হবে ১ অগস্ট থেকে। এ পর্যন্ত বেশ কিছু দেশকে নতুন শুল্ক ব্যবস্থার বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

আরও পড়ুন: মার্কিন কাঁটা সত্বেও বিকল্প পথে রফতানি চলবে: Piyush Goyal

বর্তমানে নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৯,১০০ কোটি ডলার। ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য, এই অঙ্ক বাড়িয়ে ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে একে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, “ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ মার্কিন অর্থনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার।”

আরও পড়ুন: আমেরিকার ট্যারিফে ক্ষুব্ধ রাশিয়া, ভারতীয় রপ্তানির জন্য মস্কোর বাজার খোলার আশ্বাস

পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের মোট রফতানির প্রায় ১৮ শতাংশ যায় মার্কিন বাজারে। অন্যদিকে, ভারতের আমদানির মধ্যে ৬.২২ শতাংশ মার্কিন পণ্য। এই বাস্তবতায় শুল্ক হ্রাসের সম্ভাবনা ভারতীয় শিল্প ও রফতানিকারকদের জন্য বড় স্বস্তি হতে পারে। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে শুধু শুল্ক নয়, ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেই মনে করছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা।