মুসলিম ও কাশ্মীরিদের টার্গেট করবেন না, আর্জি পহেলগাঁও কাণ্ডে শহিদ বিনয়ের স্ত্রীর

- আপডেট : ২ মে ২০২৫, শুক্রবার
- / 48
পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক : ২৭ মে বিনয়ের জন্মদিন। আমি গর্বিত আমার স্বামী দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। ওহ যেখানেই থাকুক, শান্তিতে থাকুক। আমরা শান্তি চাই। দেশে শান্তি ফিরে আসুক সেটা চাই। পুরো ঘটনাকে কেন্দ্র করে অযথা নিরীহ মুসলিম ও কাশ্মীরিদের টার্গেট করবেন না। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই মন্তব্য করেন পহেলগাঁও কাণ্ডে শহিদ নেভি বিনয় নরওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী।
উল্লেখ্য, কেটে গেছে ১০ দিন। এখনও অধরা পহেলগাঁও রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী কাণ্ডের মূল হোতা! উপত্যকা জুড়ে সন্ত্রাসীদের খোঁজে চলছে চিরুনি তল্লাশি। উক্ত ঘটনায় রাগে ফুঁসছে গোটা দেশ। সন্ত্রাসীদের নৃশংসতার প্রতিবাদে দেশের কোণায় কোণায় প্রতিবাদ মিছিল বের হচ্ছে। হিন্দু, মুসলিম তথা সকল ধর্মের মানুষ সেই মিছিলে অংশগ্রহণ করছেন। অথচ গোবলয় গুলিতে দেখা মিলছে ভিন্ন চিত্র। শুধু মুসলিম হওয়ার জেরে একের পর এক মানুষকে খুন, নির্যাতন সহ দোকান- পাট জ্বালিয়ে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আধার কার্ড দেখে দেখে কাশ্মীরিদের ওপর অত্যাধিক অত্যাচার করা হচ্ছে। এই আবহে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন সন্ত্রাসী হামলায় শহিদ বিনয় নরওয়ালের স্ত্রী হিমাংশী।
তিনি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বিনয় যেখানেই থাকুক শান্তিতে থাকে যেন। আমি গর্বিত ও দেশের জন্য শহিদ হয়েছে। তবে ওকে নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক। পহেলগাঁও ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে মুসলিম ও মজলুম কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে যেভাবে আচরণ করা হচ্ছে তা বন্ধ করা হোক। আমি বা আমরা বিভেদ না শান্তি চাই। অবশ্যই, আমরা ন্যায়বিচার চাই।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন বিনয়-হিমাংশী। বিয়ে উপলক্ষে মাসখানেকের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন নৌসেনার লেফটেন্যান্ট । মধুচন্দ্রিমায় তাঁদের ইউরোপে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু ভিসার জটিলতায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তাই কাশ্মীরে গিয়েছিলেন নবদম্পতি। সেই মধুচন্দ্রিমা থেকে যে সেই ছেলের লাশ ফিরে আসবে, কল্পনাও করতে পারেননি নৌসেনার লেফটেন্যান্ট বিনয় নরওয়ালের বাবা। নিহত নৌসেনা লেফটেন্যান্ট বিনয় হরিয়ানার করনালের বাসিন্দা। বয়স ২৬। তাঁর স্ত্রী হিমাংশী গুরুগ্রামের মেয়ে। বয়স ২৪। মৃত্যুর পর তাঁর দেহের পাশে ঠায় বসেছিলেন হিমাংশী। সেই ছবি সমাজমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বছর তিনেক আগে নৌসেনায় যোগ দেন বিনয়। কেরলের কোচিতে কর্মরত ছিলেন তিনি। বাবা রাজেশ শুল্ক দফতরে কর্মরত। এখন পানিপথে কর্মরত। দাদু প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক। মা আশা দেবী বাড়ি সামলান। বিনয়ের বোন, সৃষ্টি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেই সূত্রে এখন দিল্লিতে থাকেন। হিমাংশীর বাড়ি গুরুগ্রামে। তিনি পিএইচডি করছেন। বাবা সুনীল কুমার কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক।
আগামী ২৭ মে বিনয়ের জন্মদিন। ছেলে মধুচন্দ্রিমা থেকে ফিরে এলে বড় করে জন্মদিন পালনের পরিকল্পনা করেছিল পরিবার। কারণ, তার পরেই ছুটি শেষ হবে। আবার কাজে চলে যেতে হবে। জীবন্ত অবস্থায় আর বাড়ি ফেরা হল না বিনয়ের। সদ্যবিবাহিত দুই যুবক-যুবতীর পরিবারে শুধু বিলাপ আর হা-হুতাশ।