নেপালে কেন এই গণবিক্ষোভ? এএফপি-র বিশ্লেষণ
- আপডেট : ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার
- / 348
পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি সূত্রে খবর, জেন জি প্রজন্মের বিক্ষোভের মুখে নেপাল। বিক্ষোভ এতটাই ভয়াবহ যে, পুরো নেপাল উত্তাল হয়ে রয়েছে এই মুহুর্তে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে এই বিক্ষোভ। সরকার কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি না মানার কারণে ২৬টি সোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করেছিল।
বিক্ষোভের শুরু যেভাবে :
আর এই নিষিদ্ধের কারণস্বরূপ জানা যায়, গত ২৮শে আগস্ট সরকার কর্তৃক একটি নোটিশ জারি করা হয়েছিল। সেই নোটিশে বলা হয়েছিল এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত সোশাল মিডিয়াগুলোকে নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে কোনও আবেদনপত্র জমা পড়েনি। এমনকি এই কোম্পানিগুলোকে দেশে নিজেদের অফিস ও একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তা ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা নিয়োগ করতেও বলা হয়েছিল। আর তারই প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নামে নেপালের ছাত্র ও যুবকেরা। আর এই বিক্ষোভ থামানোর জন্য পুলিশ শুন্যে গুলি চালাতে বাধ্য হয়। আপাতত গতকালের বিক্ষোভে এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
কী বলছেন বিক্ষোভকারীরা? :
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নেপালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর মোট সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ। আর ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ। তাছাড়া অনেকেই আছেন যারা সোশাল মিডিয়া দ্বারা বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা, বাণিজ্য চালিয়ে থাকেন। আর এর ফলে সর্বপ্রথম এই বয়বসায়ী সম্প্রদায়ের মানুষেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে বাঁধে বিক্ষোভ।
প্রথমে এই আন্দোলন নিষেধাজ্ঞায় বিরোধী আন্দোলন থাকলেও পরে তা দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। ঠিক এক বছর আগে যেমন বাংলাদেশেও এইরূপ সরকার বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। এক শিক্ষার্থী, নাম ইউজান রাজভাণ্ডারি(২৪) তিনি এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সোশাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে বলেই আমাদের এই আন্দোলনের সৃষ্টি।
তবে এর পাশাপাশি আমরা নেপালে সমস্তরকম দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ জানাচ্ছি’। এছাড়াও অন্য আরেক শিক্ষার্থী ইক্ষামা তুমরোক (২০) এই বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা সরকারের এইরূপ আচরণ কিছুতেই সমর্থন করছি না। এই আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা ভালোর জন্য পরিবর্তন চাই’।
সরকারের প্রতিক্রিয়া :
গত রবিবার দেশের সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সরকার সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে যথেষ্ট সম্মান করে। এমনকি বাক স্বাধীনতার সুরক্ষায় উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে নেপাল সরকার টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ করেছিল। কারণ অনলাইন প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছিল এই সোশাল মিডিয়া সাইটটি। এছাড়াও গত বছর নেপাল সরকার টিকটক অ্যাপকেও নিষিদ্ধ করেছিল। তবে পুনরায় আগস্ট মাসে টিকটক-এর ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয় হয়। কারণ টিকটক কোম্পানির কর্মকর্তারা নেপাল সরকারের জারি করা সমস্ত আইন মানতে সম্মত হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতি :
জানা গেছে, নেপালে বিক্ষোভ ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাসভবন ও প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেলের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। মঙ্গলবার ছাত্র-যুবকেরা নতুন করে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পথে নামে, স্লোগান ওঠে—“কেপি চোর, দেশ ছোড়”।
বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছে নেতামন্ত্রীদের বাড়িতেও। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল ‘প্রচণ্ড’-র বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির সদর দফতর দখল করে পতাকা নামিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডু, ভক্তপুর ও ললিতপুর জেলায় অনির্দিষ্টকালের কার্ফু জারি হয়েছে। তবে কার্ফু উপেক্ষা করেই রাস্তায় নেমেছে ছাত্র-যুবকেরা। কালেঙ্কি ও বানেশ্বর-সহ নানা এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়। পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে।
উত্তেজনার জেরে বন্ধ রাখা হয়েছে ত্রিভুবন বিমানবন্দর, সর্বত্র সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। মন্ত্রীদের নিরাপদে সরাতে সেনার হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল ওলিকে ইস্তফার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও সূত্রের খবর।
আপাতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া দেশজোড়া গণবিদ্রোহের চাপে অবশেষে পদত্যাগ করলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি।



















































