ইয়েমেন থেকে নিজেদের সব সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে দেওয়া কড়া আল্টিমেটামের ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার আগেই ইয়েমেনে চলমান সামরিক ও সন্ত্রাসবিরোধী মিশন সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করল আবুধাবি।
বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার নিশ্চিত করেছে, খুব শিগগিরই ইয়েমেনে অবস্থানরত তাদের অবশিষ্ট সকল সৈন্যকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে। আমিরাতের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে আমিরাত সরকার জানায়, ইয়েমেনে তাদের পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ হয়েছে এবং সেই কারণেই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটিতে দায়িত্ব পালনরত আমিরাতি সেনাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইয়েমেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলের (এসটিসি) সঙ্গে আমিরাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাদের প্রতি প্রত্যক্ষ সহযোগিতা সৌদি আরবের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে রিয়াদ ও আবুধাবির মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন ও আস্থার সংকট ক্রমশ গভীর হয় এবং গত মঙ্গলবার তা চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।
এই পরিস্থিতিতে সৌদি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আবুধাবিকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইয়েমেন থেকে আমিরাতি সেনাদের প্রত্যাহার করতে হবে। সৌদি আরবের এই নজিরবিহীন আল্টিমেটাম এবং সরাসরি সামরিক চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে ২০১৪ সালে, যখন ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা দখল করে নেয়। এর পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদী সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। হুথিদের দমন ও হাদীর শাসন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেনি সরকারি বাহিনীর সমন্বয়ে একটি সামরিক জোট গঠিত হয়।
২০১৫ সাল থেকে এই জোট ইয়েমেনে বিমান হামলাসহ ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করলেও দীর্ঘদিনেও হুথিদের পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জোটের শরিকদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, রাজনৈতিক প্রভাব এবং কৌশলগত লক্ষ্য নিয়ে বিভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
২০১৯ সাল থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ধীরে ধীরে ইয়েমেনে তাদের সেনাসংখ্যা কমাতে শুরু করে, যদিও প্রকাশ্যে জোটের প্রতি সমর্থন বজায় রাখে। একই সময়ে আমিরাত-সমর্থিত এসটিসি যোদ্ধারা দক্ষিণ ইয়েমেনে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা সৌদি-সমর্থিত সরকারি বাহিনীর জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইয়েমেন থেকে আমিরাতের পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেশটির যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এখন সৌদি আরব এককভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে নাকি নতুন কোনো কৌশল বা কূটনৈতিক সমাধানের পথে হাঁটবে—তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে।



























