২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদ্মা ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চলেছে লালগোলা ও বিলবোরা অঞ্চলকে

সুস্মিতা
  • আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার
  • / 30

নদী গতিপথ না বদলালে ইতিহাসের পাতায় স্থান হবে লালগোলা শহরের

আবদুল ওদুদ, লালগোলা: মুর্শিদাবাদের আখেরিগঞ্জ এবং সামশেরগঞ্জের পর পদ্মার গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে লালগোলা ব্লকের দু’টি অঞ্চল। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, যদি এইভাবে ভাঙন চলতে থাকে তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেও হয়তো লালগোলা শহরকেও পদ্মাগর্ভে তলিয়ে যেতে হবে, এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন যদি এখনই বড় উদ্যোগ না নেয় তাহলে আগামী দিনে আখেরিগঞ্জ এবং সামশেরগঞ্জের মতোই হাল হবে এই ঐতিহাসিক শহর লালগোলারও।

মুর্শিদাবাদের লালগোলা গ্রামপঞ্চায়েত এবং বিলবোরা গ্রামপঞ্চায়েত আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পদ্মার গর্ভে তলিয়ে যাবে এমনই আশংকা দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে বিলবোরা কোপরা অঞ্চলের তারানগর এলাকায়।এই তারানগর থেকেই অসিকুল ইসলাম নামে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার পদ্মার গর্ভে তলিয়ে হয়ে যায়। আজও তার লাশের হদিস মেলেনি, তাঁর পরিবার পায়নি আর্থিক ক্ষতিপূরণও। গত কয়েক বছরে সেখালিপুর এলাকায় কয়েকটি গ্রাম পদ্মার গর্ভে তলিয়ে গেছে। নেই কোনও বাড়িঘর, মানুষ। অন্যত্র গিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়েছেন। পদ্মায় তলিয়ে গেছে শত শত বিঘে জমি। সেই সেখালিপুর থেকেই শুরু হয়েছে আবার ভাঙন।

তারানগর, রামনগর জোত খামার, দুর্লভপুর, কালিকাপুর এলাকার মানুষ আজ বিপন্ন জীবন যাপন করছেন। যেকোনও সময় তারানগর আটরোশিয়া, দুর্লভপুর গ্রামগুলি নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই তারানগর গ্রামের কয়েকটি বাড়ি এবং একটি পিচের রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন কয়েকটি বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এই এলাকায় রয়েছে বহুদিনের তৈরি সুদৃশ্য কয়েকটি মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় আর শত শত বিঘা সবুজ শস্য শ্যামল ফসলের জমি ও আম বাগান। এই সমস্ত জমি থেকেই বিভিন্ন মরশুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি-সহ অন্যান্য শাকসবজি চাষ হয়, আর তাতেই জীবিকা নির্বাহ করেন এলাকার মানুষ। এই এলাকার মধ্যে দিয়ে গেছে বিএসএফের রাস্তা, সেটিও আজ নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে বসেছে।

এখানেই শেষ নয়, এরপর লালগোলা গ্রামপঞ্চায়েতের দেশওয়ালি পাড়া, বিশ্বনাথপুর, চামাপাড়া, বালিগ্রাম, বরবুনা,নলডহরি, বলরামপুর, উত্তর ও দক্ষিণ সুদর্শনগঞ্জ, গাবতলা প্রভৃতি এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। কেন-না রেনু ক্যাম্পের কাছে যে হারে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে শীঘ্রই এই এলাকার তলিয়ে যাবে। রেনু বিএসএফ ক্যাম্পের পাশে কাঁটাতারের বেড়া নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। এখান থেকে লালগোলা স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। ফলে নদী যখন বাঁক নিয়ে ভাঙতে শুরু করবে তখন আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যে লালগোলা স্টেশনকেও গ্রাস করবে এই পদ্মার ভাঙন।

লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সাইফুদ্দিন বিশ্বাস জানান,গাবতলা থেকে বিএসএফের রেনু ক্যাম্পের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। কাঁটাতারের বেড়া নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে যদি এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো এলাকাটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে এই লালগোলার সরাসরি রেল যোগাযোগ ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের পর সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখনও বাংলাদেশের কিংবা ভারতের নদীর চরে রেললাইনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। কিন্তু যে হারে পদ্মা এগিয়ে আসছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আবার লালগোলা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ।

সাইফুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার ভাঙন রোধের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাই এই কাজ সঠিকভাবে হোক। আমি এলাকার মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। প্রত্যেকে ভাববেন এটি নিজের কাজ। সেভাবে কাজে সহযোগিতা করবেন। এখানে কেউ যদি নদী ভাঙনের টাকা নিয়ে রাজনীতি কিংবা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন তাহলে লালগোলার মানুষ তাকে ছেড়ে কথা বলবে না।

মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য মোতাহার হোসেন রিপন বলেন, ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরি হওয়ার পর থেকে ভাঙন বিপুল হারে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে যে তারানগর গ্রাম ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ভিতরে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া ময়া এবং সেখালিপুর এলাকায় প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা ভাঙনে তলিয়ে গেছে। ফারাক্কা ব্যারেজের জন্য পুরোপুরি এই ভাঙন। তিনি বলেন, তারানগর এলাকায় যে কাজ হবে তার জন্য রাজ্যের সেচ দফতর ২৮৬ দিন সময় দিয়েছে,তার মধ্যেই কাজ হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ‘নদী বান্ধব’ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। এলাকার মানুষের কাছে আবেদন আপনারা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ দেখে নিন। মানুষের সহযোগিতা পেলেই নদীভাঙনের কাজ করা সম্ভব। কাজেই সহযোগিতা করুন।

মোতাহার হোসেন গত কয়েক বছরের একটি তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত তিন-চার বছরে লালগোলার গঙ্গা এবং পদ্মার ভাঙন ২৯ কোটি টাকা কাজ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাসমাটি, ময়া, সীতেশ নগর এলাকার বেশকিছু কাজ এছাড়াও জঙ্গিপুর থেকে লালগোলা এলাকার বিভিন্ন পদ্মার পাড়ের কাজ। তিনি বলেন, তারানগর এলাকার জন্যে সাত কোটি ৫২ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে ‘নদী বান্ধব’ প্রকল্প ফান্ড মিলেছে। খরা মৌসুমে মূল কাজ শুরু হবে। বর্তমানে নদী ভরা রয়েছে, এখনই মূল কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আপাতত যে বালির বস্তা দেওয়ার কাজ চলছে তা সাময়িকের জন্য। এই এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার গভীর কাজেই সুখা মরশুম ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়। বিএসএফ রেনু ক্যাম্প-এর কাছে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। ইতিমধ্যে ঘাটাল থেকে এক ইঞ্জিনিয়ারের প্রতিনিধি দল এসে এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। কোথায় কীভাবে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে সেগুলি তারা সমীক্ষা করছেন আপাতত ১৮ লক্ষ টাকা দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বড় টেন্ডার হলে এই এলাকার ভাঙন রোধের কাজ শুরু পুরোপুরি শুরু হবে বলে তিনি জানান।

সংসদ খলিলুর রহমান বলেন,কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারবার চিঠি এবং সরাসরি দেখা করেও কোন সুরাহা মেলেনি। কেন্দ্রীয় সরকার মুর্শিদাবাদকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দিতে চাই। সাংসদ অভিযোগ তুলে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চায় না মুর্শিদাবাদের ভাঙন রোধে কাজ শুরু হোক। সেই কারণে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও অর্থ বরাদ্দ করে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজস্ব তহবিল থেকে থেকে দফায় দফায় কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভাঙন মোকাবিলার কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানিয়ে মেলেনি কোনও ফান্ড। আমরা সংসদে আবারও এই বিষয়টি উত্থাপন করব বলে তিনি জানান। এলাকার মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, আপনারা কাজ নিজে দেখে নেবেন। কোনও রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করবেন না। নিজেদের কাজ দেখে, কাজ বুঝে নেবেন। যে সমস্ত ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করবে তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করুন এবং কাজ পুরোপুরি বুঝে নিন।

Tag :

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

পদ্মা ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চলেছে লালগোলা ও বিলবোরা অঞ্চলকে

আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২৫, সোমবার

নদী গতিপথ না বদলালে ইতিহাসের পাতায় স্থান হবে লালগোলা শহরের

আবদুল ওদুদ, লালগোলা: মুর্শিদাবাদের আখেরিগঞ্জ এবং সামশেরগঞ্জের পর পদ্মার গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে লালগোলা ব্লকের দু’টি অঞ্চল। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে, যদি এইভাবে ভাঙন চলতে থাকে তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেও হয়তো লালগোলা শহরকেও পদ্মাগর্ভে তলিয়ে যেতে হবে, এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসন যদি এখনই বড় উদ্যোগ না নেয় তাহলে আগামী দিনে আখেরিগঞ্জ এবং সামশেরগঞ্জের মতোই হাল হবে এই ঐতিহাসিক শহর লালগোলারও।

মুর্শিদাবাদের লালগোলা গ্রামপঞ্চায়েত এবং বিলবোরা গ্রামপঞ্চায়েত আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পদ্মার গর্ভে তলিয়ে যাবে এমনই আশংকা দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে বিলবোরা কোপরা অঞ্চলের তারানগর এলাকায়।এই তারানগর থেকেই অসিকুল ইসলাম নামে এক সিভিক ভলেন্টিয়ার পদ্মার গর্ভে তলিয়ে হয়ে যায়। আজও তার লাশের হদিস মেলেনি, তাঁর পরিবার পায়নি আর্থিক ক্ষতিপূরণও। গত কয়েক বছরে সেখালিপুর এলাকায় কয়েকটি গ্রাম পদ্মার গর্ভে তলিয়ে গেছে। নেই কোনও বাড়িঘর, মানুষ। অন্যত্র গিয়ে ঘরবাড়ি বানিয়েছেন। পদ্মায় তলিয়ে গেছে শত শত বিঘে জমি। সেই সেখালিপুর থেকেই শুরু হয়েছে আবার ভাঙন।

তারানগর, রামনগর জোত খামার, দুর্লভপুর, কালিকাপুর এলাকার মানুষ আজ বিপন্ন জীবন যাপন করছেন। যেকোনও সময় তারানগর আটরোশিয়া, দুর্লভপুর গ্রামগুলি নদীর গর্ভে তলিয়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যেই তারানগর গ্রামের কয়েকটি বাড়ি এবং একটি পিচের রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন কয়েকটি বাড়ি তলিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এই এলাকায় রয়েছে বহুদিনের তৈরি সুদৃশ্য কয়েকটি মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয় আর শত শত বিঘা সবুজ শস্য শ্যামল ফসলের জমি ও আম বাগান। এই সমস্ত জমি থেকেই বিভিন্ন মরশুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি-সহ অন্যান্য শাকসবজি চাষ হয়, আর তাতেই জীবিকা নির্বাহ করেন এলাকার মানুষ। এই এলাকার মধ্যে দিয়ে গেছে বিএসএফের রাস্তা, সেটিও আজ নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে বসেছে।

এখানেই শেষ নয়, এরপর লালগোলা গ্রামপঞ্চায়েতের দেশওয়ালি পাড়া, বিশ্বনাথপুর, চামাপাড়া, বালিগ্রাম, বরবুনা,নলডহরি, বলরামপুর, উত্তর ও দক্ষিণ সুদর্শনগঞ্জ, গাবতলা প্রভৃতি এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। কেন-না রেনু ক্যাম্পের কাছে যে হারে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে শীঘ্রই এই এলাকার তলিয়ে যাবে। রেনু বিএসএফ ক্যাম্পের পাশে কাঁটাতারের বেড়া নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। এখান থেকে লালগোলা স্টেশনের দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। ফলে নদী যখন বাঁক নিয়ে ভাঙতে শুরু করবে তখন আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যে লালগোলা স্টেশনকেও গ্রাস করবে এই পদ্মার ভাঙন।

লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সাইফুদ্দিন বিশ্বাস জানান,গাবতলা থেকে বিএসএফের রেনু ক্যাম্পের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। কাঁটাতারের বেড়া নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে যদি এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পুরো এলাকাটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের সঙ্গে এই লালগোলার সরাসরি রেল যোগাযোগ ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের পর সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখনও বাংলাদেশের কিংবা ভারতের নদীর চরে রেললাইনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। কিন্তু যে হারে পদ্মা এগিয়ে আসছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আবার লালগোলা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এমনটাই আশঙ্কা করছেন এলাকার মানুষ।

সাইফুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার ভাঙন রোধের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাই এই কাজ সঠিকভাবে হোক। আমি এলাকার মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। প্রত্যেকে ভাববেন এটি নিজের কাজ। সেভাবে কাজে সহযোগিতা করবেন। এখানে কেউ যদি নদী ভাঙনের টাকা নিয়ে রাজনীতি কিংবা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করেন তাহলে লালগোলার মানুষ তাকে ছেড়ে কথা বলবে না।

মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য মোতাহার হোসেন রিপন বলেন, ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরি হওয়ার পর থেকে ভাঙন বিপুল হারে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে যে তারানগর গ্রাম ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার ভিতরে ভাঙন শুরু হয়েছে। এছাড়া ময়া এবং সেখালিপুর এলাকায় প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকা ভাঙনে তলিয়ে গেছে। ফারাক্কা ব্যারেজের জন্য পুরোপুরি এই ভাঙন। তিনি বলেন, তারানগর এলাকায় যে কাজ হবে তার জন্য রাজ্যের সেচ দফতর ২৮৬ দিন সময় দিয়েছে,তার মধ্যেই কাজ হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ‘নদী বান্ধব’ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে। এলাকার মানুষের কাছে আবেদন আপনারা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ দেখে নিন। মানুষের সহযোগিতা পেলেই নদীভাঙনের কাজ করা সম্ভব। কাজেই সহযোগিতা করুন।

মোতাহার হোসেন গত কয়েক বছরের একটি তথ্য তুলে ধরে বলেন, গত তিন-চার বছরে লালগোলার গঙ্গা এবং পদ্মার ভাঙন ২৯ কোটি টাকা কাজ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাসমাটি, ময়া, সীতেশ নগর এলাকার বেশকিছু কাজ এছাড়াও জঙ্গিপুর থেকে লালগোলা এলাকার বিভিন্ন পদ্মার পাড়ের কাজ। তিনি বলেন, তারানগর এলাকার জন্যে সাত কোটি ৫২ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যে ‘নদী বান্ধব’ প্রকল্প ফান্ড মিলেছে। খরা মৌসুমে মূল কাজ শুরু হবে। বর্তমানে নদী ভরা রয়েছে, এখনই মূল কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আপাতত যে বালির বস্তা দেওয়ার কাজ চলছে তা সাময়িকের জন্য। এই এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার গভীর কাজেই সুখা মরশুম ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়। বিএসএফ রেনু ক্যাম্প-এর কাছে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার প্রয়োজন। ইতিমধ্যে ঘাটাল থেকে এক ইঞ্জিনিয়ারের প্রতিনিধি দল এসে এলাকা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। কোথায় কীভাবে ভাঙন রোধের কাজ শুরু হবে সেগুলি তারা সমীক্ষা করছেন আপাতত ১৮ লক্ষ টাকা দিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। বড় টেন্ডার হলে এই এলাকার ভাঙন রোধের কাজ শুরু পুরোপুরি শুরু হবে বলে তিনি জানান।

সংসদ খলিলুর রহমান বলেন,কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারবার চিঠি এবং সরাসরি দেখা করেও কোন সুরাহা মেলেনি। কেন্দ্রীয় সরকার মুর্শিদাবাদকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দিতে চাই। সাংসদ অভিযোগ তুলে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চায় না মুর্শিদাবাদের ভাঙন রোধে কাজ শুরু হোক। সেই কারণে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও অর্থ বরাদ্দ করে না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজস্ব তহবিল থেকে থেকে দফায় দফায় কোটি কোটি টাকা দিয়ে ভাঙন মোকাবিলার কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানিয়ে মেলেনি কোনও ফান্ড। আমরা সংসদে আবারও এই বিষয়টি উত্থাপন করব বলে তিনি জানান। এলাকার মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, আপনারা কাজ নিজে দেখে নেবেন। কোনও রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টা করবেন না। নিজেদের কাজ দেখে, কাজ বুঝে নেবেন। যে সমস্ত ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করবে তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করুন এবং কাজ পুরোপুরি বুঝে নিন।