০৭ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসপাতালে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হন ৩৩ শতাংশ মুসলিম, রিপোর্ট অক্সফাম ইন্ডিয়ার

পুবের কলম
  • আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার
  • / 53

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : দেশে মুসলিম বঞ্চনা ও বৈষম্যের ইতিহাস নয়া নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রে মুসলিমরা বৈষম্য ও বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। তবে হাসপাতালেও যে মুসলিমদের মারাত্মক বঞ্চনা শিকার হতে হয়, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অক্সফাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষা রিপোর্ট।২৮ রাজ্যে এবং ৫ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়েছিল খ্যাতনামা এই সমীক্ষা সংস্থা।এক্ষেত্রে ৩,৮৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।তাতেই দেখা গিয়েছে ৩৩ শতাংশ মুসলিম কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হাসপাতালে বৈষম্যের শিকার হন। মঙ্গলবার এই রিপোর্ট সামনে এসেছে।সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, ২২ শতাংশ তপশিলি উপজাতি, ২১ শতাংশ তপশিলি জাতি এবং ১৫ শতাংশ ওবিসিও হাসপাতালে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ।

২০১৮ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন  রোগীদের অধিকার রক্ষায় একটি সনদ তৈরী করেছিল। সেই সনদ কতখানি বাস্তব হয়েছে তা দেখতেই অক্সফাম ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ডেটা সংগ্রহ  করতে শুরু করে।২০১৯ এ জুন মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব নির্দেশ দেন যাতে জাতীয় মানবাধিকার সনদকে বাস্তবায়ন করা হয়।

আরও পড়ুন: স্কুল, হাসপাতাল, রেলস্টেশন থেকে পথকুকুর সরানোর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, আট সপ্তাহের সময়সীমা

অক্সফাম ইন্ডিয়ার রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট যে চিকিৎসকরাও সেই একই পক্ষপাতিত্বের শিকার।সমাজে মুসলিম ও দলিতদের যে চোখে দেখা হয় চিকিৎসারও তাদের সেই চোখেই দেখেন। নিঃসন্দেহে এটা একটা মারাত্মক খবর। যে সমাজে একজন চিকিৎসক কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বৈষম্য করেন, সেই সমাজে ‘সব কা বিকাশ’ ফাঁকা  শ্রুতিমধুর শব্দবন্ধ ছাড়া আর কিছু নয়। সমাজে চিকিৎসকের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। মানুষ তার নিদারুন সংকটে চিকিৎসকের কাছে হাজির হন। অমুসলিমরা চিকিৎসকদের ভগবানের একটা রূপ বলে মনে করেন। মুসলিমরা অবশ্য চিকিৎসকের ওপর ভরসা করলেও তাঁদের ওপর দেবত্ব আরোপ করেন না।অনেকে বলছেন, চিকিৎসকদের মানিসকতার মধ্যে এমন বিকৃতি থাকলে রাজনেতা কিংবা অন্যদের মধ্যে এই ধর্মীয় বৈষম্য কতটা ভয়ঙ্করভাবে রয়েছে, তা সহজে অনুমেয়।

আরও পড়ুন: অপ্রয়োজনীয় সিজার কমাতে হাসপাতালগুলিকে, গাইডলাইন স্বাস্থ্য দফতরের

‘পোশাকি আধুনিকতার’ এই যুগে চিকিৎসকদের মধ্যে অস্পৃশ্যতা রয়েছে প্রবলভাবে।বহু চিকিৎসক আজও দলিতদের ‘পালস’ দেখতে তাঁদের হাত ধরতে চান না।অক্সফাম ইন্ডিয়ার এই সমীক্ষার নেতৃত্বে থাকা আঞ্জেলা তানেজা বলেন, চিকিৎসকরা বহু সময় আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। তাঁরা মনে করেন আদিবাসী এই মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলা অর্থহীন। তারা তাঁদের কথা বুঝতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহে হাসপাতালে রক্ত সংকট হতে পারে, আশঙ্কা প্রকাশ স্বাস্থ্য আধিকারিকের

তানেজা আরও বলেন, ”করোনা কালে অযথা তাবলীগ জামাতের জমায়েত নিয়ে মুসলিমদের নিশানা করা হয়েছিল। যা ছিল চরম অন্যায়” । ২০২০-এর মার্চ মাসে লকডাউনের প্রথম দিকে তবলীগ জামাতকে করোনভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়েছিল।মুসলমানদের বিরুদ্ধে  অহেতুক কলঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল।তাদের ব্যবসা বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছিল । দেশজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হয়েছিল বিদ্বেষ।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে যে ৩৫ শতাংশ মহিলার শরীরিক পরীক্ষা করেন পুরুষ চিকিৎসকরাই। সেই সময় কোনও মহিলা চিকিসকের রুমে থাকেন না। অথচ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তার সনদে  বলেছিল মহিলা রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে রুমে অন্য মহিলার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।৭৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন ভালভাবে কোনও কিছু জিজ্ঞাবাদ না করেই কিংবা তাদের কথা না শুনেই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন করতে শুরু করে দেন ডাক্তারবাবুরা । একই সঙ্গে লিখে দেন টেস্ট। কি কারণে তা লেখা হচ্ছে একথা জানানোর প্রয়োজনও মনে করেন না তাঁরা। 

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

হাসপাতালে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হন ৩৩ শতাংশ মুসলিম, রিপোর্ট অক্সফাম ইন্ডিয়ার

আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার

পুবের কলম ওয়েবডেস্ক : দেশে মুসলিম বঞ্চনা ও বৈষম্যের ইতিহাস নয়া নয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা ক্ষেত্রে মুসলিমরা বৈষম্য ও বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। তবে হাসপাতালেও যে মুসলিমদের মারাত্মক বঞ্চনা শিকার হতে হয়, তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অক্সফাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষা রিপোর্ট।২৮ রাজ্যে এবং ৫ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সমীক্ষা চালিয়েছিল খ্যাতনামা এই সমীক্ষা সংস্থা।এক্ষেত্রে ৩,৮৯০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।তাতেই দেখা গিয়েছে ৩৩ শতাংশ মুসলিম কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হাসপাতালে বৈষম্যের শিকার হন। মঙ্গলবার এই রিপোর্ট সামনে এসেছে।সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে, ২২ শতাংশ তপশিলি উপজাতি, ২১ শতাংশ তপশিলি জাতি এবং ১৫ শতাংশ ওবিসিও হাসপাতালে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ।

২০১৮ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন  রোগীদের অধিকার রক্ষায় একটি সনদ তৈরী করেছিল। সেই সনদ কতখানি বাস্তব হয়েছে তা দেখতেই অক্সফাম ২০২১ এর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ডেটা সংগ্রহ  করতে শুরু করে।২০১৯ এ জুন মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব নির্দেশ দেন যাতে জাতীয় মানবাধিকার সনদকে বাস্তবায়ন করা হয়।

আরও পড়ুন: স্কুল, হাসপাতাল, রেলস্টেশন থেকে পথকুকুর সরানোর নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের, আট সপ্তাহের সময়সীমা

অক্সফাম ইন্ডিয়ার রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট যে চিকিৎসকরাও সেই একই পক্ষপাতিত্বের শিকার।সমাজে মুসলিম ও দলিতদের যে চোখে দেখা হয় চিকিৎসারও তাদের সেই চোখেই দেখেন। নিঃসন্দেহে এটা একটা মারাত্মক খবর। যে সমাজে একজন চিকিৎসক কেবল ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বৈষম্য করেন, সেই সমাজে ‘সব কা বিকাশ’ ফাঁকা  শ্রুতিমধুর শব্দবন্ধ ছাড়া আর কিছু নয়। সমাজে চিকিৎসকের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। মানুষ তার নিদারুন সংকটে চিকিৎসকের কাছে হাজির হন। অমুসলিমরা চিকিৎসকদের ভগবানের একটা রূপ বলে মনে করেন। মুসলিমরা অবশ্য চিকিৎসকের ওপর ভরসা করলেও তাঁদের ওপর দেবত্ব আরোপ করেন না।অনেকে বলছেন, চিকিৎসকদের মানিসকতার মধ্যে এমন বিকৃতি থাকলে রাজনেতা কিংবা অন্যদের মধ্যে এই ধর্মীয় বৈষম্য কতটা ভয়ঙ্করভাবে রয়েছে, তা সহজে অনুমেয়।

আরও পড়ুন: অপ্রয়োজনীয় সিজার কমাতে হাসপাতালগুলিকে, গাইডলাইন স্বাস্থ্য দফতরের

‘পোশাকি আধুনিকতার’ এই যুগে চিকিৎসকদের মধ্যে অস্পৃশ্যতা রয়েছে প্রবলভাবে।বহু চিকিৎসক আজও দলিতদের ‘পালস’ দেখতে তাঁদের হাত ধরতে চান না।অক্সফাম ইন্ডিয়ার এই সমীক্ষার নেতৃত্বে থাকা আঞ্জেলা তানেজা বলেন, চিকিৎসকরা বহু সময় আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে চান না। তাঁরা মনে করেন আদিবাসী এই মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলা অর্থহীন। তারা তাঁদের কথা বুঝতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহে হাসপাতালে রক্ত সংকট হতে পারে, আশঙ্কা প্রকাশ স্বাস্থ্য আধিকারিকের

তানেজা আরও বলেন, ”করোনা কালে অযথা তাবলীগ জামাতের জমায়েত নিয়ে মুসলিমদের নিশানা করা হয়েছিল। যা ছিল চরম অন্যায়” । ২০২০-এর মার্চ মাসে লকডাউনের প্রথম দিকে তবলীগ জামাতকে করোনভাইরাস সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়েছিল।মুসলমানদের বিরুদ্ধে  অহেতুক কলঙ্ক ছড়ানো হয়েছিল।তাদের ব্যবসা বর্জনের ডাক দেওয়া হয়েছিল । দেশজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হয়েছিল বিদ্বেষ।

অক্সফাম ইন্ডিয়ার সমীক্ষায় আরও দেখা গিয়েছে যে ৩৫ শতাংশ মহিলার শরীরিক পরীক্ষা করেন পুরুষ চিকিৎসকরাই। সেই সময় কোনও মহিলা চিকিসকের রুমে থাকেন না। অথচ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তার সনদে  বলেছিল মহিলা রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময়ে রুমে অন্য মহিলার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।৭৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন ভালভাবে কোনও কিছু জিজ্ঞাবাদ না করেই কিংবা তাদের কথা না শুনেই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন করতে শুরু করে দেন ডাক্তারবাবুরা । একই সঙ্গে লিখে দেন টেস্ট। কি কারণে তা লেখা হচ্ছে একথা জানানোর প্রয়োজনও মনে করেন না তাঁরা।