২৮ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার, ১০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ হরিয়ানায় আটক দিনহাটার ৭ বাসিন্দা

চামেলি দাস
  • আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার
  • / 171

পারভেজ হোসেন, দিনহাটা: কাজের সন্ধানে দিল্লিতে গিয়ে বাংলা বলাতেই ‘বিপত্তি’। ভারতীয় হিসেবে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও রাজধানীতে দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হলেন সাতজন। আটক হওয়া সাতজন কোচবিহারের দিনহাটার সাবেক ছিট মহলের বাসিন্দা। আটকানোর পাশাপাশি তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং জোর করে বাংলাদেশি বানানোর চেষ্টা চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। ওই সাতজনের পরিবারের সদস্যরা তাদের বৈধ কাগজপত্র উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ ও দিনহাটা থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, বিজেপি পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। বাংলার মানুষকে বাংলাদেশি হিসেবে দেগে দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে আরও জোরালো প্রতিবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর সরকারের পক্ষ থেকে দিনহাটা বলরামপুর রোডে ছিটমহলবাসীদের জন্য স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলা হয়। নাগরিক হিসেবে তাদের যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। কয়েক মাস আগে সেখান থেকেই হরিয়ানা, দিল্লি ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় কাজে গিয়েছিলেন অনেকে। এদের বেশিরভাগই ইট ভাটায় কাজ করেন। গত ২৫ জুন হরিয়ানা থেকে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে তিনজন শিশু ও একজন মহিলা সহ মোট ৭ জনকে আটক করে। তাদের নাম সামসুল হক, রেজাউল হক, রবিউল হক, রাশিদা বেগম, মহম্মদ রুমানা হক, রাইহান হক, রুমানা খাতুন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশায় ৬দিন আটকে থাকার পর বাংলায় ফিরলেন মালদার ১৯ পরিযায়ী শ্রমিক

বুধবার দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হবার পর জহিরুল মিয়া নামে দিনহাটার বড়নাচিনা এলাকার অপর এক ব্যক্তিকে শুক্রবার ছেড়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘আধার কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ বিভিন্ন কাগজপত্র দেখানোর পরেও দিল্লি পুলিশ বিশ্বাস করেনি। পুলিশ দাবি করে এইসব কাগজপত্র নকল। আমাদের মারধর করে জোর করে বলানোর চেষ্টা করছে যে আমরা বাংলাদেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা দিনহাটায় বসবাস করে আসছি, আমার বাবার জন্মও দিনহাটাতে। অনেক শারীরিক অত্যাচারের পরেও যখন আমি নিজেকে বাংলাদেশি স্বীকার করিনি তখন বাধ্য হয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।’ সেখানে থাকলেই বিপদ বুঝে তার বাকি সঙ্গীরাও বাড়ি ফেরার টিকিট কেটেছেন বলে জানান তিনি। তবে জহুরুল হক ছাড়া পেলেও অন্য সাতজনকে এখনও আটকে রেখেছে দিল্লি পুলিশ। ঘটনায় চরম চিন্তায় দিনহাটায় পরিবারের লোকেরা।

আরও পড়ুন: ওড়িশা থেকে বাড়ি ফিরলেন হরিহরপাড়ার দুই পরিযায়ী

আলোম আলী নামে দিনহাটার এক বাসিন্দা জানান, ‘আমরা কাজের সন্ধানে দিল্লি, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন জায়গায় যাই। আমাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, ট্রাভেল পাস এবং পাসপোর্টও আছে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বাংলা বলার জন্য আমাদের আটকে হেনস্থা করা হয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু এবার এটা মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে। আমার মামা ফোনে জানিয়েছিলেন তাকে আটকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং দিনহাটা থানার আইসিকে কাগজপত্র দিয়ে আবেদন জানিয়েছি। আমরা চাই আটক থাকা ৭ জনকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হোক।’

আরও পড়ুন: ওড়িশায় আক্রান্ত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী, কড়া বার্তা তৃণমূল নেত্রীর

বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটায় দিনহাটায় বসবাসকারী সাবেক ছিটমহলের প্রত্যেকেই গভীর দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, আবার বাইরে কাজে যাওয়ার জন্য তাদের ট্রেনের টিকিট করা হয়েছে, কিন্তু এমন পরিস্থিতি চললে তারা তাদের রুজি-রুটির জন্য বাইরেও কাজে যেতে পারবেন না।

Copyright © Puber Kalom All rights reserved.| Developed by eTech Builder

বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ হরিয়ানায় আটক দিনহাটার ৭ বাসিন্দা

আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, শনিবার

পারভেজ হোসেন, দিনহাটা: কাজের সন্ধানে দিল্লিতে গিয়ে বাংলা বলাতেই ‘বিপত্তি’। ভারতীয় হিসেবে বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও রাজধানীতে দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হলেন সাতজন। আটক হওয়া সাতজন কোচবিহারের দিনহাটার সাবেক ছিট মহলের বাসিন্দা। আটকানোর পাশাপাশি তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে এবং জোর করে বাংলাদেশি বানানোর চেষ্টা চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানি হতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। ওই সাতজনের পরিবারের সদস্যরা তাদের বৈধ কাগজপত্র উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ ও দিনহাটা থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, বিজেপি পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। বাংলার মানুষকে বাংলাদেশি হিসেবে দেগে দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এই বিষয় নিয়ে আরও জোরালো প্রতিবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তির পর সরকারের পক্ষ থেকে দিনহাটা বলরামপুর রোডে ছিটমহলবাসীদের জন্য স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলা হয়। নাগরিক হিসেবে তাদের যাবতীয় বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। কয়েক মাস আগে সেখান থেকেই হরিয়ানা, দিল্লি ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় কাজে গিয়েছিলেন অনেকে। এদের বেশিরভাগই ইট ভাটায় কাজ করেন। গত ২৫ জুন হরিয়ানা থেকে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে তিনজন শিশু ও একজন মহিলা সহ মোট ৭ জনকে আটক করে। তাদের নাম সামসুল হক, রেজাউল হক, রবিউল হক, রাশিদা বেগম, মহম্মদ রুমানা হক, রাইহান হক, রুমানা খাতুন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশায় ৬দিন আটকে থাকার পর বাংলায় ফিরলেন মালদার ১৯ পরিযায়ী শ্রমিক

বুধবার দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হবার পর জহিরুল মিয়া নামে দিনহাটার বড়নাচিনা এলাকার অপর এক ব্যক্তিকে শুক্রবার ছেড়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ‘আধার কার্ড, ভোটার কার্ড-সহ বিভিন্ন কাগজপত্র দেখানোর পরেও দিল্লি পুলিশ বিশ্বাস করেনি। পুলিশ দাবি করে এইসব কাগজপত্র নকল। আমাদের মারধর করে জোর করে বলানোর চেষ্টা করছে যে আমরা বাংলাদেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা দিনহাটায় বসবাস করে আসছি, আমার বাবার জন্মও দিনহাটাতে। অনেক শারীরিক অত্যাচারের পরেও যখন আমি নিজেকে বাংলাদেশি স্বীকার করিনি তখন বাধ্য হয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয়।’ সেখানে থাকলেই বিপদ বুঝে তার বাকি সঙ্গীরাও বাড়ি ফেরার টিকিট কেটেছেন বলে জানান তিনি। তবে জহুরুল হক ছাড়া পেলেও অন্য সাতজনকে এখনও আটকে রেখেছে দিল্লি পুলিশ। ঘটনায় চরম চিন্তায় দিনহাটায় পরিবারের লোকেরা।

আরও পড়ুন: ওড়িশা থেকে বাড়ি ফিরলেন হরিহরপাড়ার দুই পরিযায়ী

আলোম আলী নামে দিনহাটার এক বাসিন্দা জানান, ‘আমরা কাজের সন্ধানে দিল্লি, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন জায়গায় যাই। আমাদের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, ট্রাভেল পাস এবং পাসপোর্টও আছে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বাংলা বলার জন্য আমাদের আটকে হেনস্থা করা হয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু এবার এটা মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে। আমার মামা ফোনে জানিয়েছিলেন তাকে আটকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী এবং দিনহাটা থানার আইসিকে কাগজপত্র দিয়ে আবেদন জানিয়েছি। আমরা চাই আটক থাকা ৭ জনকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়া হোক।’

আরও পড়ুন: ওড়িশায় আক্রান্ত বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী, কড়া বার্তা তৃণমূল নেত্রীর

বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটায় দিনহাটায় বসবাসকারী সাবেক ছিটমহলের প্রত্যেকেই গভীর দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, আবার বাইরে কাজে যাওয়ার জন্য তাদের ট্রেনের টিকিট করা হয়েছে, কিন্তু এমন পরিস্থিতি চললে তারা তাদের রুজি-রুটির জন্য বাইরেও কাজে যেতে পারবেন না।